দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি বেশি হয়। আর রফতানি হয় আমদানির চারভাগের একাংশ। বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে গত ৫ বছরে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ৮৮ লাখ ৮৯ হাজার ৮১১ মেট্রিক টন পণ্য এবং বাংলাদেশি পণ্য ভারতে রফতানি হয়েছে ১৮ লাখ ৭২ হাজার ২১০ টন।
বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ জানান, গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ভারত থেকে আমদানি হয় ১৩ লাখ ৯৩ হাজার ৩২৯ টন পণ্য, রফতানি হয় ৩ লাখ ২৫ হাজার ৩৮১ টন পণ্য।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে আমদানি ১৯ হয় লাখ ৮৮ হাজার ৩৫৯ টন, রফতানি হয় ৩ লাখ ৫২ হাজার ৯৬৩ টন পণ্য। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমদানি হয় ২১ লাখ ৮১ হাজার ১২৩ টন, রফতানি ৩ হয় লাখ ১,১১৭ টন পণ্য।
২০১৯-২০ অর্থবছরে আমদানি হয় ২০ লাখ ৩৮ হাজার ৬৪ টন পন্য ভারতে রফতানি হয় ৩ লাখ ১৬ হাজার ৯৫০ টন। ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর- ৬ মাসে আমদানি হয়েছে ১৭ লাখ ৫ হাজার ১১৩ টন এবং রফতানি হয়েছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৫ টন পণ্য।
বেনাপোল বন্দর দিয়ে যে সব পণ্য আমদানি হয়, শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত কাঁচামাল, কেমিক্যাল, মেশিনারি যন্ত্রাংশ, সুতা, ট্রাক চেসিস, মোটর সাইকেল, টায়ার টিউব, বিভিন্ন প্লান্টের মালামাল ও বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য। রফতানি পণ্যের মধ্যে পাট ও পাটজাতপণ্য, মাছ, মেলামাইন, তৈরি পোশাক, খাদ্য দ্রব্য, ঝুট ও টিস্যু উল্লেখ্যযোগ্য।
বর্তমানে বেনাপোল বন্দরের স্থল ও রেলপথে ভারতের সাথে প্রতি বছর প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি ও ৮ হাজার কোটি টাকা পণ্য সেদেশে রফতানি হয়ে থাকে। আমদানি করা পণ্য থেকে ৫ পাঁচ হাজার ৫’শ কোটি টাকার রাজস্ব আয় হয়ে থাকে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে এ লক্ষ্যমাত্রা ৬ হাজার ২৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা। গত ৬ মাসে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব ঘাটতি আছে ১ হাজার ১০৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা। বেনাপোল বন্দর থেকে ভারতের প্রধান বাণিজ্যিক শহর কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৮৪ কিলোমিটার। যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় এ পথে প্রথম থেকে ব্যবসায়ীদের বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি। তবে এ বন্দর দিয়ে ব্যবসায়ীদের আরো বেশি পণ্য আমদানির ইচ্ছে থাকলেও বন্দরের অবকাঠামোগত নানা সমস্যায় বাণিজ্য সম্প্রসারণ হচ্ছে না।
লোকসানের মুখে পড়ে অনেক ব্যবসায়ী এ বন্দর ছেড়ে চলে যাচ্ছেন অন্যত্র। ফলে বড়ধরনের প্রভাব পড়ছে আমদানির ওপর। তবে রফতানি বাড়ছে ধীরে ধীরে এ বন্দরটি দিয়ে। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন করা হলে আমদানির পাশাপাশি রফতানি বাণিজ্যও আরো বাড়বে। ভারত বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ এর ডাইরেক্টর মতিয়ার রহমান জানান, ভারত থেকে দেশের স্থলপথে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি-রফতানি হয় তার ৭০ শতাংশ হয় বেনাপোল বন্দর দিয়ে বলে তিনি জানান।
বেনাপোল বন্দর আমদানি রফতানিকারক সমিতির যুগ্ন সাধারন সম্পাদক আব্দুল লতিফ জানান, বন্দরে আমদানি পণ্যের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা স্থাপনের ব্যবাসায়ীদের দাবি আজো পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি। বন্দর অভ্যন্তরে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় খোলা আকাশের নিচে কোটি কোটি টাকার পণ্য সংরক্ষন করা হচ্ছে। রোদ-বৃষ্টিতে পণ্যের যেমন গুণগতমান নষ্ট হচ্ছে তেমনি চুরি হচ্ছে প্রকাশ্যে। বর্তমানে ক্রেন ও ফর্কলিফটের সংকট রয়েছে দীর্ঘদিনের। তবে বন্দর থেকে বর্তমানে বিপুল পরিমান মালামাল চুরি হচেছ।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, বন্দরের অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি রফতানি বাণিজ্যের প্রসার হচ্ছে না। আজও বাস্তবায়ন হয়নি ভারত- বাংলাদেশ-নেপাল-ভুটান (বিবিআইএন) চার দেশীয় বাণিজ্যিক কার্যক্রম।
বেনাপোল বন্দরের অব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে ভারতীয় ব্যবসায়ীদেরও। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন হলে বছরে ১০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় সম্ভব কবলে তিনি জানান।
বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক আব্দুল জলিল জানান, বেনাপোল বন্দর সম্প্রসারণে নতুন কিছু জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়েছে ভবিষ্যতে আরো অধিগ্রহনের পরিকল্পনা রয়েছে। আমদানি করা পণ্যের নিরাপত্তায় বন্দরের চারপাশ দিয়ে উঁচু প্রাচীর নির্মাণ করে সিসি ক্যামেরা বসানোর প্রক্রিয়া চলছে।
বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. আজিজুর রহমান জানান, আমরা ব্যবসায়ীদের বৈধ সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর চেস্টা করছি। ইতিমধ্যে বন্দর কর্তৃপক্ষকে অবকাঠামো সুবিধা বৃদ্ধির জন্য একাধিকবার পত্র দিয়েছি। বন্দরের সক্ষমতা বাড়লে বেনাপোল দিয়ে পণ্য আমদানি বেড়ে রাজস্ব আয়ও বেড়ে যাবে।
নদী বন্দর / জিকে