বিশ্বের ঘনবসতিপূর্ণ নগরীগুলোর একটি রাজধানী ঢাকা। এখানে রাস্তা আটকে যেকোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করলে ভোগান্তিতে পড়তে হয় লাখ লাখ মানুষকে। এজন্য যেকোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিসহ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জনভোগান্তি এড়াতে ব্যস্ত সড়ক পরিহার করে বিকল্প স্থানে সভা-সমাবেশ আয়োজনের অনুরোধ করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। এ সময় তিনি ৯১টি বিকল্প স্থানের কথাও তুলে ধরেন।
শনিবার (২৩ আগস্ট) রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে ৩২টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় নগর পুলিশপ্রধান এই অনুরোধ করেন।
সভায় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ডিএমপির প্রস্তুতির কথা তুলে ধরেন। এসময় তিনি বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ডিএমপির সর্বোচ্চসংখ্যক ফোর্স মোতায়েন থাকবে।
ডিএমপি কমিশনার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি জনদুর্ভোগ এড়াতে যান চলাচলের স্থানে সভা-সমাবেশ না করে সুবিধাজনক বিকল্প স্থানে কর্মসূচি আয়োজনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন রাস্তা বন্ধ থাকার কারণে গর্ভবতী মহিলা, মুমূর্ষু রোগী হাসপাতালে যথাসময়ে পৌঁছাতে পারে না। একজন পরীক্ষার্থী সময় মতো পরীক্ষাকেন্দ্রে উপস্থিত হতে পারে না। তাই এই অবস্থা থেকে উত্তরণ অত্যন্ত জরুরি।
শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, সভা সমাবেশ করার জন্য কিছু স্থান প্রস্তাব করা হয়েছে। ঢাকা মহানগরের জনদুর্ভোগ এড়াতে বিভিন্ন সমাবেশ করার জন্য প্রস্তাবিত ৯১টি স্থান বিবেচনা করা যেতে পারে।
তিনি জানান, প্রস্তাবিত স্থানগুলোর মধ্যে পুলিশের মতিঝিল বিভাগে-১৫টি, তেজগাঁও বিভাগে-১২টি, লালবাগ বিভাগে-১৭টি, ওয়ারী বিভাগে-১৪টি, গুলশান বিভাগে-৮টি, মিরপুর বিভাগে-১১টি, উত্তরা বিভাগে-১০টি ও রমনা বিভাগে ৪টি রয়েছে।
সভার আলোচনায় অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক নেতারা নগরীর প্রধান সমস্যা যানজট, মাদক বিস্তার, কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত নিয়ে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন এবং এসব সমস্যা সমাধানে পুলিশকে সহযোগিতার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
এসময় উপস্থিত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা তাদের বক্তব্যে বলেন, ঢাকা মহানগরের প্রত্যেকটি নাগরিক যেন নিরাপদে, শান্তিতে বসবাস করতে পারেন এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। এ ছাড়াও নির্বাচনকে সামনে রেখে যেকোনো ধরনের নাশকতার বিষয়ে পুলিশকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তারা।
মতবিনিময় সভায় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সরওয়ার বলেন, যানজট নিরসনে ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশ নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। কেবল পুলিশ নয়, ঢাকা মহানগরীতে ট্র্যাফিকসংক্রন্তে বিষয়ে ২৫টি বিভিন্ন সংস্থা জড়িত। সবার সম্মিলিত চেষ্টার মাধ্যমে যানজট পরিস্থিতি উন্নত করা সম্ভব।
সভায় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) ফারুক আহমেদ বলেন, দীর্ঘদিন পর দেশে একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যেখানে বিভিন্ন দেশের পর্যবেক্ষকরা উপস্থিত থাকবেন। তিনি পুলিশ বাহিনীর মানমর্যাদা পুনরুদ্ধারে একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) এস, এন, মো. নজরুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম) মো. মাসুদ করিমসহ ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনারবৃন্দ ও বিভিন্ন অপরাধ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনারবৃন্দসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সভায় রাজনৈতিক নেতাদের পক্ষ থেকেও ঢাকা মহানগর পুলিশকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়।
নদীবন্দর/জেএস