প্রতিনিয়ত বেফাঁস মন্তব্য করে সমালোচনার কেন্দ্রে থাকা বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমানকে শোকজ করেছে দল। তবে এখনই এ বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ তিনি। এও জানালেন, শোকজের কপি তিনি এখনো হাতে পাননি।
রোববার (২৪ আগস্ট) সন্ধ্যায় গণমাধ্যমকে এসব কথা জানান ফজলুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘আমি তো বাসায় আছি। আপনার মতো কয়েকজন ফোন করে শোকজের কথা জানালো। এখনো আমি কোনো শোকজের কপি পাইনি।’
কী কারণে শোকজ করা হতে পারে কোনো ধারণা করতে পারছেন? এমন প্রশ্নে ফজলুর রহমান বলেন, ‘কেন শোকজ করা হয়েছে আমি তাও জানি না।’
জুলাই আন্দোলনসহ বিভিন্ন বিষয়ে আপনার বিতর্কিত বক্তব্যের কারণে দলের মধ্যেও সমালোচনা হচ্ছে- আপনার বক্তব্য কী? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আপাতত এ নিয়ে কিছু বলতে চাচ্ছি না। আগে শোকজের কপি হাতে পাই, পরে কথা বলব।’
এদিকে ফজলুর রহমানের বিতর্কিত বক্তব্যের প্রতিবাদে ইতোমধ্যে বিচার চেয়ে মাঠে নেমেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতার স্থায়ী বহিষ্কারও দাবি করেছেন।
এর আগে বিকেলে ফজলুর রহমানকে শোকজ করার কথা জানা যায়। বিএনপির দফতর সূত্র জানায়, জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান নিয়ে ক্রমাগত কুরুচিপূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দেওয়ায় তাকে শোকজ করা হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমানকে দেয়া শোকজপত্রে বলা হয়েছে, ‘আপনি জুলাই-আগস্ট ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান নিয়ে ক্রমাগত কুরুচিপূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়ে আসছেন এবং আত্মদানকারী শহীদদের নিয়ে যে বক্তব্য দিচ্ছেন তা সম্পূর্ণরুপে দলীয় আদর্শ ও গণঅভ্যুত্থানের চেতনার পরিপন্থী। মহিমান্বিত এই গণঅভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন নিয়ে আপনার বক্তব্য জনমনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।’
‘আপনার বক্তব্য দলের সুনাম ক্ষুণ্ন করার সুপরিকল্পিত চক্রান্তের প্রয়াস বলে অনেকেই মনে করে। এমনকি আপনি জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিতেও আঘাত দিয়ে কথা বলছেন। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে বিএনপি’র সাড়ে চারশো’র অধিক নেতাকর্মীসহ ছাত্র-জনতার প্রায় দেড় হাজারের অধিক মানুষ শহীদ হয়েছেন এবং ত্রিশ হাজারেরও অধিক মানুষ গুরুতর আহত হয়েছেন। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার এ ধরণের বীরোচিত ভূমিকাকে আপনি প্রতিনিয়ত অপমান ও অমর্যাদা করছেন।’
‘সুতরাং এ ধরণের উদ্ভট ও শৃঙ্খলা পরিপন্থী বক্তব্যের কারণে কেন আপনার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তার যথাযথ কারণ দর্শিয়ে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একটি লিখিত জবাব দলের নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দেওয়ার জন্য আপনাকে নির্দেশ প্রদান করা হলো।’
সম্প্রতি একটি টেলিভিশন টকশোতে অংশ নিয়ে ফজলুর রহমান বলেন, ‘৫ আগস্টের আন্দোলন পরিচালনায় সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে ইসলামী ছাত্রশিবির। এই সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করার জন্য ষড়যন্ত্র করে আসছে।’
তার ভাষায়, ‘যারা ৫ আগস্টের ঘটনার জন্য দায়ী, তারা কোনো রাজনৈতিক নেতা নয়, তারা কেবল অভিনেতা। দেশের মানুষ এখন বুঝে ফেলেছে, এরা রাজাকারের বংশধর, কালো শক্তি। তারা অর্থ-বিত্ত দিয়ে তরুণ সমাজকে প্রলুব্ধ করছে।’
নদীবন্দর/জেএস