বুয়েটসহ বিভিন্ন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পাঁচ দফা দাবিতে সকাল থেকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রেখেছেন। এতে শাহবাগ এলাকা কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে। অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া কোনো যানবাহনকে যেতে দেওয়া হয়নি।
বুধবার (২৭ আগস্ট) সকাল ১০টা থেকে শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান করেছেন। রাত ৯টায় এই প্রতিবেদন লেখার সময়ও সড়কে অবস্থান করছেন তারা।
শিক্ষার্থীরা জানান, প্রকৌশল অধিকার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদেই নতুন করে পাঁচ দফা দাবি তোলা হয়েছে। দাবি পূরণ না হলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
এতে পুরো শাহবাগ এলাকা স্থবির হয়ে যায়। শাহবাগ থেকে কোনো যানবাহন যেতে দেওয়া হচ্ছে না। একান্ত সমস্যায় পড়া লোকজন কয়েক দফা অনুরোধের পর মোটরসাইকেলে করে যেতে পারছেন। তবে প্রাইভেটকার বা রিকশা নিয়ে কেউ যেতে পারছেন না। তবে অ্যাম্বুলেন্স হলে তা নির্বিঘ্নে যেতে দিচ্ছেন আন্দোলনকারীরা।
প্রকৌশল অধিকার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের ওপর ন্যক্কারজনক হামলার প্রতিবাদে নতুন করে এই পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছেন বুয়েটের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তারা বলেছেন, এসব দাবি না মানা হলে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
বুধবার (২৭ আগস্ট) হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের গেটের সামনে অবস্থান নিয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশে কথা বলেন বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ।
তিনি বলেন, সরকারের স্বরাষ্ট্র ও শিক্ষা উপদেষ্টা শাহবাগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কাছে এসে তাদের দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
জুবায়ের আন্দোলনকারী বুয়েট শিক্ষার্থীদের পক্ষে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন—
১. স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের ওপর বর্বরোচিত ও ন্যক্কারজনক হামলার জন্য আন্দোলনকারীদের সামনে উপস্থিত হয়ে ক্ষমা চাইতে হবে এবং জবাবদিহি করতে হবে।
২. প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে পূর্বে গঠিত কমিটিকে আমরা আমাদের প্রতিনিধিত্বের অনুপযুক্ত মনে করি এবং তা প্রত্যাখ্যান করি। অনতিবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিনিধি ও প্রকৌশল আন্দোলনের স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে নতুন কমিটি গঠন করতে হবে। পাশাপাশি পেশকৃত তিন দফা দাবি দ্রুততম সময়ে মেনে নিয়ে নির্বাহী আদেশে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট তিন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, আদিলুর রহমান ও সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানকে আজই এসে নিশ্চয়তা দিতে হবে।
৩. হামলায় আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যয়ভার সরকারকে বহন করতে হবে। আন্দোলন চলাকালীন সব শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। পুলিশ দিয়ে এই যৌক্তিক আন্দোলনে আর কোনো হামলা করা যাবে না।
৪. রোকন ভাইয়ের ওপর হামলাকারীদের অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে এবং চাকরি থেকে বহিষ্কার করতে হবে।
৫. শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে হামলার জন্য ডিসি মাসুদকে বহিষ্কার করতে হবে।
সোমবার (২৫ আগস্ট) রাতে বুয়েট শিক্ষার্থীদের দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নেসকো অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম হোসেন (ডিপ্লোমা ব্যাকগ্রাউন্ড) তার কক্ষে রোকনুজ্জামান রোকনকে ডেকে নেন। সেখানে উপস্থিত প্রায় ২০–২৫ জন ডিপ্লোমা ব্যাকগ্রাউন্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে রোকনকে ঘিরে ধরে গালাগাল করেন এবং গলা কেটে হত্যার হুমকি দেন।
এর প্রতিবাদে তিন দফা দাবি নিয়ে রাস্তায় নামেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। টানা দুই দিন ধরে আন্দোলন চলছে।
বুধবার (২৭ আগস্ট) দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে শাহবাগ থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের উদ্দেশে রওনা দেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় পুলিশ তাদের পদযাত্রায় লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এতে শিক্ষার্থী ও পুলিশ সদস্যদের কয়েকজন আহত হন। পরে শিক্ষার্থীরা ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে অবস্থান নেন। সেখানে পরিস্থিতি থমথমে হয়ে ওঠে।
এর আগে মঙ্গলবার বিকেল পৌনে ৪টায় বুয়েটের প্রাক্তন শিক্ষার্থী প্রকৌশলী রোকনুজ্জামান রোকনকে ঢাকার নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই (নেসকো) কার্যালয়ে হেনস্তা ও হত্যার হুমকির প্রতিবাদে এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে শাহবাগে সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। পাঁচ ঘণ্টা অবরোধ শেষে ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করে শাহবাগ ছাড়েন তারা।
প্রকৌশলী রোকনুজ্জামান রোকন বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।
নদীবন্দর/এএস