ভারী বৃষ্টিতে পানি উপচে পড়ায় বাঁধ খুলে পানি ছেড়ে দিয়েছে ভারত। এতে ভারত থেকে আসা পানির তীব্র চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে চেনাব নদীর বাঁধের পাশের তীররক্ষা বাঁধ উড়িয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ভারতে প্রবল বর্ষণের কারণে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলের আন্তঃসীমান্ত তিন নদী চেনাব, রাভি ও সুতলেজ নদীতে অস্বাভাবিকভাবে বন্যার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারণে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশজুড়ে বন্যার উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এরমধ্যেই বুধবার পানির চাপ অত্যধিক বৃদ্ধি পাওয়ায় চেনাব নদীর কাদিরাবাদ বাঁধের তীররক্ষা অংশে নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ ঘটিয়ে উড়িয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
পাঞ্জাবের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থার মুখপাত্র মাজহার হোসেন বলেছেন, ‘বাঁধের অবকাঠামো বাঁচাতে আমরা ডানপাশের তীররক্ষা বাঁধ ধ্বংস করে দিয়েছি; যাতে পানির চাপ কিছুটা কমে যায়।’
পাকিস্তানের মোট ২৫ কোটি ৫০ লাখ জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকের বসবাস রয়েছে পাঞ্জাব প্রদেশে। বন্যায় ভয়াবহ পরিস্থিতির আশঙ্কায় চেনাব, রাভি ও সুতলেজ নদীর তীরবর্তী এলাকা থেকে লাখ লাখ মানুষ ও গবাদিপশু সরিয়ে নেওয়ার কাজে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
পাকিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ- এনডিএমএ জানিয়েছে, বন্যা কবলিত অঞ্চল থেকে প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে ভারতের সীমান্তের কাছে অবস্থিত পাকিস্তানের পাঞ্জাবে শিখদের অন্যতম পবিত্র স্থাপনা কর্তারপুর মন্দিরের অবস্থান। শিখ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গুরু নানক ১৫৩৯ সালে এই মন্দিরে মারা যান। শিখদের কাছে অন্যতম পবিত্র হিসেবে বিবেচিত এই স্থাপনা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। মন্দিরে আটকে পড়া প্রায় ১০০ মানুষকে উদ্ধারের জন্য সেখানে পাঁচটি নৌকা মোতায়েন করা হয়েছে।
পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ বলেছে, ভারতের দিক থেকে উজানের বাঁধগুলোর পানি ছেড়ে দেওয়ায় পানি প্রবাহ ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে।
ইসলামাবাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ভারত বাঁধের জলকপাট খোলার আগে কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে অগ্রিম নোটিশ দিয়েছিল। তবে ভারতীয় কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি।
পাকিস্তানের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জরুরি সতর্কতা জারি করে চেনাব, রাভি ও সুতলেজ নদীর তীরবর্তী মানুষদের ‘অবিলম্বে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার’ আহ্বান জানিয়েছে।
পাঞ্জাবের প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থার প্রধান ইরফান আলি বলেন, ‘আমি জনগণকে রাভি নদীর তীর ত্যাগ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছি। কারণ ১৯৮৮ সালের বন্যার পর এবার পানির প্রবাহ সবচেয়ে বেশি।’
তিনি বলেন, বন্যার পানির ঢল আজ রাত ও আগামীকাল সকালে লাহোর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, জুনের শেষের দিকে বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকে পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশে বন্যায় মৃতের সংখ্যা ৮০২ জনে দাঁড়িয়েছে, যার মধ্যে গত ১৪ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত দেশটির খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশেই অন্তত ৪৫০ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
সূত্র: ফ্রান্স২৪
নদীবন্দর/এএস