জুলাই-আগস্ট ২০২৪ সালের আন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে আজ মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) ১৪তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এই সাক্ষ্যগ্রহণ পরিচালনা করছেন।
গতকাল সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) মামলার ১৩তম দিনে তিনজন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন। তবে ওই দিনের ৩৯তম সাক্ষী পুলিশ উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আশরাফুল ইসলামের জেরা শেষ হয়নি। আজ তাকে জেরা করবেন আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। এরপর নতুন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ শুরু হবে।
এই মামলায় এখন পর্যন্ত মোট ৩৯ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাদের জবানবন্দিতে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে আন্দোলনের নামে সারা দেশে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড, গুম, নারী নির্যাতন ও নিপীড়নের ভয়াবহ বিবরণ উঠে এসেছে। প্রত্যক্ষদর্শী, শহীদ পরিবারের সদস্য ও সাংবাদিক-চিকিৎসকদের এসব সাক্ষ্যে শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামালসহ দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি উঠে এসেছে।
এর আগে, ২ সেপ্টেম্বর মামলার অন্যতম আসামি থেকে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন সাক্ষ্য দেন। তিনি জানান, শেখ হাসিনা ও কামালের নির্দেশেই দেশব্যাপী সহিংসতা চালানো হয়েছিল। তিনি আদালতের কাছে নিজের সংশ্লিষ্টতার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন এবং বিস্তারিত তথ্য প্রদান করেন। তার জেরা শেষ হয় ৪ সেপ্টেম্বর।
মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠনের পর। গত ১০ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয়। এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে গণহত্যা, গুম, ধর্ষণ, নির্যাতন, পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ও যুদ্ধাপরাধ।
এ মামলায় মোট ৮১ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ৩৯ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। প্রতিদিনই উঠে আসছে নতুন নতুন ভয়াবহ তথ্য ও ঘটনা। এতে স্পষ্ট হচ্ছে যে, ২০২৪ সালের আন্দোলনের পেছনে শুধু রাজনৈতিক নয়, বর্বর সহিংসতার ছায়া ছিল।
গত ১২ মে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। এরপর চিফ প্রসিকিউটরের দফতর আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ জমা দেয়। বিচার শুরুর আগে একাধিক শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গঠন করে।
আজকের সাক্ষ্যগ্রহণ নিয়েও রয়েছে ব্যাপক আগ্রহ। কারণ, জেরা ও নতুন সাক্ষীর মাধ্যমে উঠে আসতে পারে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। আদালতের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বিচার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছেন দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকরাও।
নদীবন্দর/জেএস