1. badsha.dru@gmail.com : admi2017 :
  2. nadibandar2020@gmail.com : Nadi Bandar : Nadi Bandar
ডাকসুতে ছাত্রশিবিরের ভূমিধস জয়ের যত কারণ - Nadibandar.com
বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:১৫ পূর্বাহ্ন
নদীবন্দর, ঢাকা
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ১ বার পঠিত

দীর্ঘ সাড়ে ছয় বছর পর অনুষ্ঠিত হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। স্বাধীনতার পর ডাকসু দেশের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনার সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ সব আন্দোলনে ডাকসুর অসামান্য ভূমিকা ছিল।

১৯৯০-এর পর কার্যত ঝিমিয়ে পড়া এই সংসদের সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০১৯ সালে। এর সাড়ে ছয় বছর পর অনুষ্ঠিত হলো ৩৮তম ডাকসু নির্বাচন।

গতকাল মঙ্গলবারের এই নির্বাচনে সর্বোচ্চসংখ্যক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে এবং প্রায় চল্লিশ হাজার শিক্ষার্থী একসঙ্গে ভোট দিয়েছেন। নিরাপত্তার তত্ত্বাবধানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম থেকে শুরু করে পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি ও জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতায়—নির্বাচনটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ভোট গণনার পর বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। এতে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল ডাকসুর ২৮ পদের ২৩টিতে জয়লাভ করেছে। ভিপি পদে সাদিক কায়েম, জিএস পদে এস এম ফরহাদ এবং এজিএস পদে মহিউদ্দিন খান নির্বাচিত হয়েছেন।

অন্যদিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল নির্বাচনে আশানুরূপ ফলাফল করতে পারেনি। বিজয়ী প্যানেলের ভোটারদের থেকেও প্রায় দুই গুণ ভোটে পিছিয়ে ছিলেন তারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে রাজনীতি করতে না পারা ছাত্রশিবিরের এমন জয় অবাক করেছে অনেককে। দীর্ঘদিনের সাংগঠনিক শক্তি, রাজনৈতিক কৌশল, আর্থিক সক্ষমতা এবং শিক্ষার্থীদের কল্যাণে তাদের ধারাবাহিক কাজই এই ফলাফলকে সম্ভব করেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল ও অন্যান্য দলগুলোর বিভাজন, অতীতের নির্যাতনের স্মৃতি এবং ভোটারদের নিরাপত্তাবোধও শিবিরের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে করেন বিশ্লেষকরা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. স্নিগ্ধা রেজওয়ানা বলেন, ‘আমি মনে করি না ডাকসুতে শিবিরের এই জয় কোনো আকস্মিক ঘটনা বা হঠাৎ করে হয়েছে। এটা আসলে অনুমান করা যাচ্ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ১০-১৫ বছরে তাদের প্রভাব এবং অবস্থান অনেক বেড়েছে। এর একটা কারণ হলো ২০১০-১১ সালের দিকে তখনকার সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনক্লুশনের নামে ১০-২০ ভাগ ছাত্র মাদ্রাসা থেকে নেওয়ার নির্দেশনা দেয়। ফলে এই সময়ে বিপুল মাদ্রাসার ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পেরেছে। আর ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি আধুনিক নয়। মুখস্থ নির্ভর পরীক্ষা পদ্ধতি হতে পারে না। এই পরীক্ষা পদ্ধতিও তাদের সুযোগ করে দিয়েছে। এটা মেডিকেল কলেজের ক্ষেত্রে ঘটেছে।

‘আরেকটি বিষয় হলো নানাভাবে বিগত কয়েক বছর ধরে, পর্দা, হিজাব বা বুরখাকে সামনে এনে একটা সাংঘর্ষিক মনোভাব তৈরি করা হয়েছে। বায়োমেট্রিকের কথা বলা হয়। এটা করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একটা পলিটিক্যাল ইস্যু তৈরি করা হয়। আগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই ইস্যু ছিল না। এটা ছিলো দেশের বৃহত্তর পরিসরে। বিগত সরকার আবার এই ইস্যুতে ভয় দেখানোর চেষ্টা করে। এটাকে সে পুঁজি করার চেষ্টা করে। এইসব বিষয়গুলো দক্ষিণপন্থিদের উত্থানের চিন্তা থেকে মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে নেয়। ফলে সেখান থেকেই এখন ডাকসুতে যা হয়েছে তা হওয়ার পরিবেশ তৈরি হয়।’

তার মতে, ‘ডাকসুতে শিবিরের এই জয়ের তো অবশ্যই প্রভাব এবং ফলাফল আছে। এর প্রথম বিষয়টি হচ্ছে যে শিবির তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এবারই প্রকাশ্যে বড় কোনো সফলতা পেল। গোপন সফলতা তাদের অনেক আছে। কিন্তু এর ফলে প্রথমত, যে প্রচারণার মাধ্যমে শিবির ডাকসুতে জিতেছে, একই ধরনের প্রচারণা যে জাতীয় নির্বাচনে হবে না তা কিন্তু বলা যায় না। আর আরেকটি বিষয় হলো দেশে একটি সাংস্কৃতিক লড়াই শুরু হয়ে গেছে। যারা এখানো বিচ্ছিন্নভাবে লড়াই করছেন তাদের এক হওয়ার একটা প্রেক্ষাপট এই ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে তৈরি হয়েছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘‘এবারের ডাকসু নির্বাচনে আর যারা ছিলো তারা একটি অ্যান্টি-শিবির ন্যারেটিভ তৈরি করে প্রচার চালিয়েছে। একদিকে শিবির, আরেক দিকে অ্যান্টি-শিবির। কিন্তু এই অ্যান্টি-শিবির ন্যারেটিভ যারা তৈরি করেছে তারা বহু প্যানেলে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। শিবির ডাকসুকে দেখেছে ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের ফসল হিসাবে। ওই ক্যানভাসটা তারা ব্যবহার করেছে।

‘আর আবিদ-মেঘমল্লাররা বলেছে শিবির হলো স্বাধীনতাবিরোধী এদেরকে ভোট দেবেন না। এরা স্বাধীনতাবিরোধী এদের ভোট দেবেন না-প্রার্থীদের ব্যাপারে এই সরাসরি ভোট না দেয়ার আহ্বান ভোটাররা নেননি। এখানে ন্যারেটিভের একটা খেলা হয়েছে। অন্যরা ২৪-এর ক্যানভাসটি কাজে লাগাতে পারেনি। আর প্রার্থী নির্বাচন থেকে শুরু করে কৌশল নির্ধারণে শিবির এগিয়ে ছিলো। দীর্ঘদিনের কৌশল পরিকল্পনার ফল তারা পেয়েছে। আর শিবির, ছাত্রদল দীর্ঘদিন নির্যাতন, অবদমনের শিকার হয়েছে। তার কারণে সহানুভূতি পেয়েছে। কিন্তু শিবির ওই সময়ে বসে থাকেনি। তারা নানা কৌশলে ছাত্রদের মধ্যে কাজ করেছে, ভিন্নভাবে সংগঠনকে বিস্তৃত করেছে, শক্তিশালী করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের এর আগে প্রকাশ্য কাজ না থাকায় সরাসরি তাদের বিরুদ্ধে কোনো নেগেটিভ প্রচার করা কঠিন ছিল। কিন্তু ২০০২ সালে শামসুন্নাহার হলে যে ছাত্রদল হামলা চালিয়েছিল, ছাত্রীদের মধ্যে এটা কিন্তু এবার ব্যাপক প্রচার করা হয়েছে।”

ডাকসুর সাবেক জিএস মুশতাক হোসেন মনে করেন, ‘শিবিরকে যারা ভোট দিয়েছেন তারা যে সবাই শিবিরের আদর্শ চিন্তা করে ভোট দিয়েছেন তা নয়, তারা ক্যাম্পাসে দখলদারীর ছাত্র রাজনীতির আশঙ্কা থেকে ভোট দিয়েছেন। কারণ তারা অতীতে অনেক ছাত্র সংগঠনের দখলদারিত্বের রাজনীতি দেখেছেন, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের রাজনীতি দেখেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই বিবেচনায় শিবিরের রেকর্ড নাই। আর ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে তাদের বড় একটা ভূমিকা ছিল। আর শিবিরের বিরুদ্ধে যে ছাত্র সংগঠনগুলো ছিল তাদের পরস্পরের মধ্যে বিশ্বাসের অভাব ছিল। এটাও শিবিরকে সুযোগ করে দিয়েছে।

‘তবে শিবির যত বেশি ভোট পেয়েই জয়ী হোক না কেন তারা ক্যাম্পাসে যদি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী অবস্থান প্রতিষ্ঠা করতে চায়, রাজাকারদের প্রতিষ্ঠা চায়, তাহলে এই ছাত্ররাই তাদের প্রত্যাখ্যান করবে।’

সাংবাদিক ও বিশ্লেষক মাসুদ কামালের মতেও ছাত্ররা নিবর্তনমূলক ছাত্ররাজনীতি ফের ফিরে আসার আশঙ্কা থেকে শিবিরকে ভোট দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘তারা মনে করেছে ছাত্রদল জিতলে তারা ছাত্রলীগের মতোই ক্যাম্পাসে আধিপত্য ও দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করবে। গেস্টরুম কালচার তৈরি করবে। সাধারণ ছাত্ররা নির্যাতনের শিকার হবে। সেই বিবেচনায় ছাত্রশিবিরের প্রার্থীদের ইমেজ ভালো ছিলো। আর ছাত্রদলের মধ্যে একটা দম্ভ, হামবাড়া ভাব চলে এসেছে। যা ছাত্ররা খেয়াল করেছে। ছাত্রদল জিতলে তারাও ওই রকম হবে। তারও একটা জবাব দিয়েছে তারা।

‘আরেকটা বিষয় হলো ৫ আগস্টের পর ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যত মামলা হয়েছে, তাদের ওপর যত হামলা নির্যাতন হয়েছে তা কারা করেছ? বিএনপি করেছে। ছাত্রদল, যুবদল করেছে। তাদের সন্তানরা তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে। আর নিষিদ্ধ হলেও ছাত্রলীগের ভোটারও তো আছে। শুধুমাত্র জগন্নাথ হল ছাড়া অন্য হলের ছাত্রলীগের ভোট শিবিরের বাক্সে গেছে বলে আমি মনে করি। মেয়েদের হলের ভোট দেখেও তাই মনে হয়েছে। তারা মনে করেছে শিবির তাদের জন্য নিরাপদ। ছাত্রদল ডাকসুতে আসলে তাদের ওপর নির্যাতন হবে। তবে সংখ্যালঘু ভোটাররা শিবিরকে তাদের জন্য নিরাপদ মনে করেনি, জগন্নাথ হলের ভোট তার প্রমাণ।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষক আশরাফ কায়সার মনে করেন, ‘আসলে ছাত্রদের অধিকারকে গুরুত্ব না দিয়ে পুরনো রাজনীতিতে থাকার কারণেই ছাত্রদল পারেনি। আর শিবির ছাত্রদের অধিকারকে সামনে এনেছে। ছাত্রশিবির দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রদের কল্যাণে কাজ করেছে, কোচিং সেন্টার চালিয়েছে, মেস চালিয়েছে। ছাত্রদের নানাভাবে সহায়তা করেছে। ফলে তাদের স্বাধীনতাবিরোধী অবস্থানের কথা ছাত্রদের মাথায় থাকেনি। তারা তাদের কল্যাণকর বিবেচনা করেছে। তারা তার ফল পেয়েছে। আর এখান থেকে তরুণরা কেমন নেতা চায় তাও বোঝা গেছে। সেটার একটা আকাঙ্খা জাতীয় রাজনীতিতে থাকবে। সামনে জাকসু, রাকসু, চাকসুসহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনেও এর প্রতিফলন দেখা যেতে পারে।”

সূত্র: ডয়েচে ভেলে

নদীবন্দর/জেএস

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 Nadibandar.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com