গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বোমা পুঁতে রেখে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলায় দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১০ আসামির সাজা বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট।
বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
এর আগে গত ১ ফেব্রুয়ারি এ মামলার ফাঁসির রায় অনুমোদনের জন্য নিম্ন আদালত থেকে পাঠানো ডেথ রেফারেন্স ও আসামিপক্ষের করা আপিল আবেদনের ওপর রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। পরে এ বিষয়ে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ রায় ঘোষণার জন্য আজকের দিন ধার্য করে আদেশ দিয়েছিলেন।
আদালতে ওইদিন রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইন কর্মকর্তা এএম আমিন উদ্দিন শুনানি করেন। তার সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ ও ড. মো. বশির উল্লাহ, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মিজানুর রহমান খান শাহীন, মো. শাহীন আহমেদ মৃধা, আশিকুজ্জামান বাবু, শাফায়াত জামিল ও সৈয়দা জাহিদা সুলতানা রত্না। আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান, মোহাম্মদ আহসান, মো. নাসির উদ্দিন ও অমূল্য কুমার সরকার (স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী)।
ওই দিন যুক্তিতর্ক শুনানির শেষ দিনে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন আসামিদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার আর্জি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।
এর আগে ২০১৮ সালের ২ এপ্রিল বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের বেঞ্চে মামলাটির শুনানি শুরু হয়। কিন্তু প্রধান বিচারপতি বেঞ্চ পুনর্গঠন করায় মামলার শুনানি বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ১৭ জানুয়ারি বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন খানের হাইকোর্ট বেঞ্চে নতুন করে শুনানি শুরু হয়। এই আদালতে মামলাটি বিচারাধীন থাকা অবস্থায় রাষ্ট্রপক্ষ কয়েকদফা সময় নেয়। পরবর্তীতে এই বেঞ্চও পুনর্গঠন করা হলে শুনানি থমকে যায়। এ অবস্থায় আবারও বেঞ্চ পুনর্গঠন করা হয়। সর্বশেষ গঠিত বেঞ্চে ২০২০ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন করে শুনানি শুরু হয়।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় ২০১৭ সালের ২০ আগস্ট ঢাকার দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক মমতাজ বেগম ১০ জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দেন। এছাড়া চার আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়। আসামিদের আপিলের পর এ মামলার রায়সহ সব নথি ওই বছরের ২৪ আগস্ট হাইকোর্টে পাঠানো হয়। এরপর প্রধান বিচারপতির কাছে নথি উপস্থাপন করা হলে তিনি জরুরি ভিত্তিতে পেপারবুক তৈরির নির্দেশ দেন। মামলাটি শুনানির জন্য প্রস্তুত শেষে কার্যতালিকায় দেয়া হয়।
মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- ওয়াসিম আকতার, রাশেদ ড্রাইভার ওরফে আবুল কালাম, ইউসুফ ওরফে আবু মুসা হারুন, শেখ ফরিদ ওরফে মাওলানা শওকত ওসমান, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বক্কর, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই ও মাওলানা আবদুর রউফ ওরফে আবু ওমর।
এছাড়া মেহেদি হাসান ওরফে আবদুল ওয়াদুদকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে। আনিসুল ওরফে আনিস, মো. মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান এবং সরোয়ার হোসেন মিয়াকে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের দণ্ড দেয়া হয়।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০০০ সালের ২০ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশস্থলের পাশে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখা হয়। শেখ লুৎফর রহমান মহাবিদ্যালয়ের উত্তর পাশের একটি চায়ের দোকানের পেছনে এ বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে তদন্তে উঠে আসে। এ ঘটনায় তৎকালীন কোটালীপাড়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নূর হোসেন মামলা দায়ের করেন।
২০০১ সালের ৮ এপ্রিল ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হয়। পরবর্তীকালে ২০০৯ সালের ২৯ জুন আরও নয়জনকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয়া হয়। এরপর ২০১০ সালে মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য ঢাকা-২ নম্বর দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। সেখানে এই মামলার বিচার সম্পন্ন হয়।
নদী বন্দর / পিকে