ঢাকার সাতটি বড় সরকারি কলেজ একীভূত করে প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির চূড়ান্ত অধ্যাদেশ জারির দাবিতে চলা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে সকাল থেকেই ভোগান্তির সৃষ্টি হয়। গুরুত্বপূর্ণ কাজে বেরিয়ে অনেকের দিন নষ্ট হয়ে গেছে। তবে যানজট ছিল বিচ্ছিন্নভাবে।
জানা গেছে, সকাল থেকে ঢাকার সাত কলেজ শিক্ষা ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দেয়। সকালে প্রতিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা যখন আন্দোলনে রাস্তায় নামে, তখন থেকেই শুরু হয় যানজট। দুপুরের দিকে তারা শিক্ষা ভবনের সামনে অবস্থান নিলে যানজট কিছুটা কমে আসে। কিন্তু যানজট কমলেও ভোগান্তি ছিল চরমে।
রামপুরা থেকে প্রেসক্লাবে আসার জন্য সকালে বের হয়েছিলেন সুমন রায়। সচিবালয়ে তাদের একটি প্রতিষ্ঠানের কাজ ছিল। কিন্তু বাড্ডা থেকে রামপুরা এসে তিনি যানজটে পড়েন। দীর্ঘ এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় রাস্তার পথেই কেটে যায়। দুপুরে তার সঙ্গে কথা হচ্ছিল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে।
তিনি বলছিলেন, রাস্তা বন্ধ করে অবরোধের এই কর্মসূচি নামের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।
ঢাকার সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা সকালে রওনা হয়ে সকাল ১১টার দিকে শিক্ষা ভবনের সামনে এসে জড়ো হয়। এ সময় পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে তাদের আটকে দেয়। পুলিশি বাধায় তারা আর শিক্ষা ভবনের দিকে এগোতে পারেনি। সকাল ১১টা থেকে তারা শিক্ষা ভবনের পশ্চিম পাশে অবস্থান করছে। তবে শিক্ষা ভবন থেকে সচিবালয়ে যাতায়াতের সড়কটি ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে রেখেছে পুলিশ। ফলে গুলিস্তানগামী যানবাহনগুলো পুলিশ সদর দপ্তর হয়ে যাতায়াত করছে।
যাত্রাবাড়ী থেকে সকালে বের হয়েছিলেন আসফাক আহমেদ। তিনি গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে এসেই দুপুর ১২টার দিকে যানজটে পড়েন। তার যাওয়ার কথা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে নিউমার্কেট। কিন্তু তিনি আটকা পড়েন। পরে বাধ্য হয়ে সচিবালয়ের সড়ক ব্যবহার করে ঢাবির দিকে যান। সেখানে গিয়েও পড়েন আরেক বিপাকে। পলাশী থেকে নিউমার্কেট এলাকা তখন যানজটে পরিপূর্ণ। রিকশা ভাড়া দিয়ে শেষমেশ নেমে হাঁটতে হয়।
তিনি বলছিলেন, নিউমার্কেট থেকে রিকশায় সেগুনবাগিচা আসতে এক ঘণ্টা লেগে গেল। অথচ এটি ২০-২৫ মিনিটের পথ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সকাল থেকে রাজধানীর শাহবাগ, রামপুরা, কারওয়ানবাজার, তেজগাঁও, মতিঝিল, সায়েন্সল্যাব, নিউমার্কেট, টিএসসি, পল্টন, শাহবাগ থেকে ফার্মগেট, সাতরাস্তা থেকে মহাখালী, রামপুরা ব্রিজ থেকে মালিবাগ রেলগেট, সদরঘাট, পুরান ঢাকা, লালবাগ, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, জিগাতলা এবং খামারবাড়ি এলাকায় ছোট-বড় যানজট ছিল। বেশিরভাগ ট্রাফিক সিগনালে গাড়ি ছাড়তে অন্তত ২৫ থেকে ৩০ মিনিট সময় লেগেছে।
তবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর তেমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। তাদের দাবি একটাই—সাত কলেজের জন্য অধ্যাদেশ ঘোষণা করতে হবে।
অন্যদিকে ‘৩৬ জুলাই’ নামে একটি সামাজিক সংগঠন তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এসেছিল। তাদের দাবি ছিল জুলাই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যারা হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে তাদের বিচার এবং সনদ ঘোষণা। তবে তারা বেশিক্ষণ সেখানে অবস্থান করেনি।
এছাড়াও রাজধানীর মহাখালী এলাকায় গ্যাস না থাকার প্রতিবাদে স্থানীয় বাসিন্দারা ওয়্যারলেস গেটের সামনের সড়ক অবরোধ করেছিল বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় আমতলী থেকে গুলশান-১ পর্যন্ত উভয়মুখী সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে এ সড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গুলশান ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) জিয়াউর রহমান জিয়া জানান, স্থানীয়রা গ্যাস সংযোগ স্বাভাবিক করার দাবিতে সড়কে অবস্থান নেন। এতে ওই রুটে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছিল। তবে এখন যান চলাচল স্বাভাবিক হচ্ছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের ডিসি মাসুদ আলম বলেন, আমাদের পুলিশ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে, কোনো পরিস্থিতি তৈরি হলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেব।
নদীবন্দর/জেএস