রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরে পোশাক কারখানা ও একটি কেমিক্যাল গোডাউনে লাগা আগুনে দগ্ধদের মধ্যে নয়জনের মৃত্যুর খবর এরইমধ্যে পাওয়া গেছে। আগুন এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি এবং এখনো নিখোঁজ রয়েছেন অনেকে।
এছাড়া অগ্নিদগ্ধ অন্তত আটজনকে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। ফলে অগ্নিকাণ্ডের এই ঘটনায় নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে এ ঘটনায় যারা নিখোঁজ রয়েছেন, তাদের সন্ধানে ঘটনাস্থলে এসে জড়ো হয়েছেন স্বজনরা। তারা ঘটনাস্থল ও বিভিন্ন হাসপাতালে ছোটাছুটি করছেন। অনেকেই নিখোঁজ স্বজনের ছবি হাতে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। তাদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে অগ্নি দুর্ঘটনাকবলিত স্থান ও আশপাশের সড়ক।
অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনায় স্বামী নাজমুল আলমকে খুঁজে পাননি তার স্ত্রী নাসিমা আক্তার। মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলের পাশের একটি সড়কে দাঁড়িয়ে কান্না করছিলেন তিনি।
নাসিমা আক্তার জানান, তার স্বামীর গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ায়। তিনি কারখানাটির দ্বিতীয় তলায় অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তার স্বামী কল করেছিলেন। তখন তাকে জানান যে, তাদের কারখানায় আগুন লেগেছে। এরপর থেকে আর কথা হয়নি। তিনি এরপর বহুবার সেই ফোনে কল করলেও কোনো সাড়া পাননি।
নাসিমা আরও জানান, তিনি এ ঘটনার পর ঘটনাস্থলে আসেন। কিন্তু স্বামী নাজমুলকে খুঁজে না পেয়ে নিকটস্থ সব হাসপাতালে ছুটে বেড়ান। কিন্তু কোথাও তাকে পাননি।
১৪ বছর বয়সি ভাগনি মাহিরার ছবি হাতে এদিক-সেদিক ছুটছেন মো. শফিকুল ইসলাম। মাঝেমধ্যে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। তিনি বলেন, ‘আমার ভাগনি পোশাক কারখানার তিন তলায় কাজ করতো। তাকে খুঁজে পাচ্ছি না। আগুন লাগার পর থেকে আমরা তাকে খুঁজছি। আশপাশের হাসপাতালেও খোঁজ নিয়েছি, কোথাও পাইনি। ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা বলেছেন ধৈর্য ধরতে।’
নিখোঁজ নারগিস আক্তারের বড় বোন লাইজু বেগম বলেন, ‘আমার বোন সকাল পৌনে ৮টায় কাজে আসে। বেলা সাড়ে ১১টায় খবর পাই আগুন লেগেছে। সেখানের একজনের সঙ্গে ফোনে কথা বলে জানতে পারি কেউ ভেতর থেকে বের হতে পারেনি। এরপর থেকে আর কোনো খোঁজ পাইনি। এখনো কোনো খোঁজ নেই আমার বোনের।’
অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছেন। কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। তারপরও ওই ভবনের আশপাশে ভিড় করছেন উৎসুক জনতা।
তারই মাঝে বিকেল ৫টার দিকে নতুন করে চারটি অ্যাম্বুলেন্সকে ভবনের ভেতরে যেতে দেখা যায়। তবে ফায়ার সার্ভিস বা পুলিশের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। উপস্থিত জনতা ও স্বজনদের ধারণা, ভেতরে হয়তো আরও মরদেহ উদ্ধার হয়েছে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, এখন পর্যন্ত আমরা ৯ জনের মরদেহ পেয়েছি। আমরা ধারণা করছি কেমিক্যাল গোডাউনে যখন আগুন লাগে, তখন বিস্ফোরণের ফলে বিষাক্ত গ্যাস বের হয়ে তাদের মৃত্যু হয়েছে। আমাদের প্রথম যে ইউনিটগুলো এসেছিল, সেখানে যে ফায়ার ফাইটাররা ছিলেন তারা আমাদের জানিয়েছেন, তারা এসে প্রথমে দেখেছেন অনেকেই ভবন থেকে বের হয়ে যেতে পেরেছে। তারা (যারা মারা গেছেন) হয়তো বিস্ফোরণের পর বিষাক্ত গ্যাসের কারণে বের হতে পারেননি এবং ঘটনস্থলে মারা যান। তবে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ আমরা বিস্তারিত তদন্ত করে জানতে পারবো।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের অপারেশন এখনো চলমান। ভেতরে এখনো আগুন জ্বলছে। ভবনটি অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। সে কারণে ফায়ার ফাইটারদেরও আমরা ভেতরে যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছি না। ওই ভবনে আমরা মানুষবিহীন প্রযুক্তি ব্যবহার করে আপাতত কার্যক্রম পরিচালনা করছি।’
এসময় তিনি সবাইকে ওই ভবন থেকে ন্যূনতম ৩০০ গজ দূরে থাকার পরামর্শ দেন। বলেন, ‘আমরা সবাইকে বলছি যারা এখানে দায়িত্ব পালন করছেন, তারা যেন কোনোভাবেই ভেতরে প্রবেশ করার চেষ্টা না করেন।’
নদীবন্দর/জেএস