দেশের বৃহত্তম উন্নয়ন প্রকল্প পদ্মা সেতুর সবগুলো স্প্যান বসানো শেষ হয়েছে। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী ২০২২ সালের জুনে খুলে দেয়া হবে পদ্মা সেতু। তখন রাজধানীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন আসবে দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলার। দেশের অর্থনীতিতে রচিত হবে এক নতুন অধ্যায়। এমনটাই মনে করছেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা।
ইতোমধ্যে পদ্মা সেতুর প্রভাব পড়তে শুরু করায় মোংলা বন্দরে গত কয়েক মাসে জাহাজ আগমনের সংখ্যা বেড়েছে। চলতি বছরের প্রথম ৫ মাসে এ বন্দরে জাহাজ আগমনের সংখ্যা ছিল ৪০৫টি। অপরদিকে শুধুমাত্র নভেম্বর মাসেই বন্দরে জাহাজ এসেছে ১০৬টি যা বন্দর প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে নজিরবিহীন।
পদ্মা সেতু ঘিরে মোংলা বন্দরের উন্নয়ন কাজগুলোও চলছে দ্রুত গতিতে। আশা করা হচ্ছে আমদানি-রফতানিতে চট্টগ্রাম বন্দরের মতোই চাপ বাড়বে এ বন্দরে।
মোংলা বন্দরের বোর্ড ও জনসংযোগ বিভাগ জানায়, পৃথিবীর প্রায় সব প্রধান বন্দরের সঙ্গেই মোংলা বন্দরের বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে। প্রধানত এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার জাহাজগুলো এই বন্দরে নোঙর করে থাকে। এ বন্দরটি দেশের আমদানি-রফতানির প্রসারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে আসছে। পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে সম্প্রতি মোংলা বন্দর ঘিরে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।
এছাড়া ভারত, ভুটান ও নেপালের সঙ্গে সরকারের চুক্তির ফলে এ সম্ভাবনা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারত, নেপাল, ভুটানকে মোংলা বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দেয়ার ফলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এটি একটি বৃহৎ বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
পদ্মা সেতু চালু হলে ব্যবসায়ীরা মোংলা বন্দর ব্যবহারে উৎসাহিত হবেন। এ বিষয়কে সামনে রেখে বন্দরের আধুনিকায়নের জন্য কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। এছাড়াও বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রমকে গতিশীল করতে কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, বাংলাদেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর হলেও কখনো কখনো এখানে ৫০-৬০টি জাহাজ নোঙর করতে দেখা যায়। তবে গত কয়েক মাসে বন্দরে জাহাজ আগমন তুলনামূলক ভাবে বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে রাজস্ব আয়।
তিনি বলেন, বন্দরের আউটারবারে ড্রেজিং সমাপ্ত হওয়ায় বড় বড় জাহাজ সহজেই ভিড়তে পারছে। ইনারবারেও খুব শিগগিরই ড্রেজিং শুরু হবে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে নানা দিক দিয়েই বন্দরের ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে এবং বন্দর পুনরায় সচল হয়েছে।
পদ্মা সেতু নির্মাণের সঙ্গে এ বন্দরে বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কন্টেইনার ইয়ার্ড, সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, বন্দর ব্যবহারকারীদের জরুরি বার্তা সেবা (ভ্যাসেল ট্রাফিক মেনেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম), অত্যাধুনিক উদ্ধারকারী জাহাজ, ড্রেজিং ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন প্রকল্প।
এছাড়া এ বন্দরে রয়েছে ১১টি জেটি, পণ্য বোঝাই ও খালাসের জন্য ৭টি শেড এবং ৮টি ওয়্যারহাউজ। নদীর গভীরে রয়েছে অসংখ্য ভাসমান নোঙর। সাগর থেকে বন্দরে প্রবেশমুখ হিরণ পয়েন্ট নামক স্থানে রয়েছে বিদেশি নাবিকদের জন্য একটি রেস্ট হাউস।
ইতোমধ্যে বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠানও মোংলা বন্দর কেন্দ্রিক নানা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। মোংলা বন্দর এখন লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে বিশ্ব অর্থনীতির একটি টার্নিং পয়েন্ট হবে মোংলা বন্দর এমনটাই আশা প্রকাশ করেন রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান।
নদী বন্দর / নিকে