দেশের ছয়টি অভয়াশ্রমে আজ সোমবার (১ মার্চ) থেকে সকল ধরনের মাছ শিকারে দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে। এ সময় এসব অভয়াশ্রম চিহ্নিত এলাকায় মাছ ধরা এবং মাছের চলাচল বিঘ্নিত হতে পারে এমন কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে অবরোধের সময় জেলেদের জন্য এবছরও বিশেষ কোনো প্রণোদনা দেয়া হয়নি। ফলে কিভাবে জীবিকা নির্বাহ করবেন তা নিয়ে চিন্তিত জেলে সম্প্রদায়।
মৎস্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী দেশে বর্তমানে যে ছয়টি অভয়াশ্রম আছে সেগুলো হচ্ছে- পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়ার আন্ধারমানিক নদের ৪০ কিলোমিটার, চর ইলিশার মদনপুর থেকে ভোলার চরপিয়াল পর্যন্ত মেঘনা নদীর ৯০ কিলোমিটার, ভোলার ভেদুরিয়া থেকে পটুয়াখালীর চররুস্তম পর্যন্ত তেঁতুলিয়া নদীর ১০০ কিলোমিটার, চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচরের ৭০ কিলোমিটার, লক্ষ্মীপুরের চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত মেঘনা নদীর ৩০ কিলোমিটার ও শরীয়তপুরের নড়িয়া থেকে ভেদরগঞ্জ পর্যন্ত নিম্ন পদ্মার ২০ কিলোমিটার।
০১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত টানা দু’মাস পটুয়াখালী জেলার জেলেরা যাতে অভয়াশ্রম চিহ্নিত এলাকায় মাছ শিকারে না নামে সেজন্য আগে থেকেই সরকারের পক্ষ থেকে প্রচার প্রচারণা চালানো হয়। তবে তেঁতুলিয়া নদীতে মাছ শিকার করা জেলেদের জন্য এবারও বিশেষ কোনো সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়নি। ফলে তেঁতুলিয়া পাড়ের জেলেরা অনেকটাই অসহায় হয়ে পড়েছেন। আর সব থেকে বেশি বিপাকে পড়তে হয়েছে মানতা সম্প্রদায়কে। যারা মূলত সার বছর নদীতে নৌকায় বসবাস করেন এবং মাছ শিকার করে জীবীকা নির্বাহ করেন।
তেঁতুলিয়া পাড়ের বগী এলাকার জেলে ইদ্রিস মাঝি বলেন, ‘সরকার আইন করলে আমরা সেই আইন মানতে বাধ্য। কিন্তু আমাদেরওতো বউ-বাচ্চা লইয়া বাঁইচ্চা থাকতে হবে। চাউল ডাইল কেনতে হয়, হেরপর এনজিওর কিস্তি আছে। ঝাটকা না ধরার লইগ্যা সরকার সব জাইল্লারে চাউল দেয়। কিন্তু আমরাতো দুই মাস কোনো মাছই ধরতে পারমু না। ত্যায় সরকার আমাগো লইগ্যা বাড়তি কী করছে।’
জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্য মতে পটুয়াখালী জেলায় প্রায় ৭০ হাজার নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। এর মধ্যে তেঁতুলিয়া নদী কেন্দ্রীক বাউফল, দশমিনা, গলচিপা এবং রাঙ্গাবালী উপজেলার কিছু কিছু জেলেরা সরাসরি মাছ শিকার করে জীবীকা নির্বাহ করেন। তবে সরকারের অভয়াশ্রম কার্যক্রমে জেলেদের জন্য বিশেষ কোনো প্রণোদনা না থাকলেও এ সময় যেহেতু জাটকা সংরক্ষণ কর্মসূচি চলমান রয়েছে তাই জেলেদের বিশেষ ভিজিএফ প্রদানের কথা ভাবছে মৎস্য বিভাগ।
পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্যাহ জানান, সরকারের নানামুখী উদ্যোগের কারণে প্রতি বছর ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছরও অভয়াশ্রম কার্যক্রম সফল করতে তেতুলিয়া নদীতে অভিযান পরিচালনা করতে ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
এছাড়া যেহেতু জাটকা সংরক্ষণ কর্মসূচিতে জেলেদের ভিজিএফ প্রদান করা হয়, সেজন্য তেঁতুলিয়া পাড়ের শতভাগ জেলে যাতে জাটকা সংরক্ষণ কর্মসূচির ভিজিএফের চাল পেতে পারেন সেজন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
নদী বন্দর / পিকে