অ্যান্টার্কটিকার হিমশৈলে আবারো দেখা দিয়েছে বড়সড় ফাটল। ৪৯০ স্কয়ার মাইলের বিশাল এ হিমশৈলটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন বিজ্ঞানীরা। হিমশৈলটি ভেঙে বর্তমান অবস্থান থেকে সরেও যেতে পারে বলে মত বিশেজ্ঞদের। একই সঙ্গে এতে করে গোটা এলাকার সামুদ্রিক বাস্তুসংস্থান ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা তাদের। এদিকে হিমশৈলে ফাটলের ঘটনায় মাত্রাতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনকেই দায়ী করছেন পরিবেশবিদরা।
পৃথিবীর একমাত্র বরফে ঘেরা বৃহত্তম অঞ্চল অ্যান্টার্কটিকার হিমশৈলে মানে ব্রুন্ট আইস শেলফে এ ফাটল দেখা গেছে। প্রথম ফাটল দেখার প্রায় ১০ বছর পর দ্বিতীয় এ ফাটলটি বিজ্ঞানীদের নজরে আসে। এ হিমশৈলটি কয়েক বছর ধরে নিবিড় পর্যবেক্ষণ করছেন বিজ্ঞানীরা। এ হিমশৈলের আকার ইংল্যান্ডের দেশ বেডফোর্ডশায়ারের সমান। ৪৯০ স্কয়ার মাইলের এ হিমশৈল নিউইয়র্ক শহরের চেয়ে বড়। ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভে কর্তৃপক্ষ বলছে, এর আকার ১ হাজার ২৭০ স্কয়ার কিলোমিটার।
দ্যা হ্যালে রিসার্চ সেন্টার যেটি ব্রুন্ট আইস শেলের মধ্যেই অবস্থিত ছিল। তারা জানান, এ ধরনের ঘটনা সত্যি অপ্রত্যাশিত কারণ দেড়শ’ মিটার পুরু এই শেলফটি একদম মহাদেশের সঙ্গে লাগোয়াভাবে অবস্থিত। পাশাপাশি এটি নিউইয়র্ক শহর থেকে মাত্র ৩০২ স্কয়ার মাইল দূরে। বিজ্ঞানীরা স্যাটেলাইটের ছবি আর জিপিএস দিয়ে তদারকির পরই বুঝতে পারছিলেন, এ অঞ্চলের বরফের স্তরে বড় ফাটল দেখা দেবে।
বিজ্ঞানীরা জানান, হিমশৈলটি ভেঙে এখান থেকে সরেও যেতে পারে আবার ব্রুন্ট আইস শেলফের আশপাশেও থাকতে পারে।
দিনদিনই বরফের স্তর ভেদ করে লম্বা হচ্ছে এ ফাটল। সব তথ্যই কেমব্রিজে পাঠানো হচ্ছে পর্যালোচনার জন্য। অ্যান্টার্কটিকায় শীতকাল চলার পরও কেন এ ধরনের বিপর্যয় হলো তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। ভাঙনের সময় অ্যান্টার্কটিকার তাপমাত্রা ছিল মাইনার ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। হিমশৈলের ভাঙনে ক্ষতির মুখে পড়তে পারে অ্যান্টার্কটিকার ওই অঞ্চলের সামুদ্রিক বাস্তুসংস্থান। এর আগে ২০১৭ সালে এত বড় হিমশৈল ভেঙে পড়ে। বরফ খণ্ড মিশে যায় সাগরে। অ্যান্টার্কটিকার পরিবেশ আর মহাকাশ নিয়ে গবেষণার জন্য ১৯৫৬ সাল থেকে অ্যান্টার্কটিকার ব্রুন্ট আইস শেলফে ৬টি গবেষণা কেন্দ্র কার্যক্রম চালাচ্ছে।
পৃথিবীর দুই পোলার অঞ্চলের একটি অ্যান্টার্কটিকা। এ মহাদেশের ৯৮ শতাংশই বরফে ঢাকা থাকে। এক কোটি ৪০ লাখ স্কয়ার কিলোমিটারের এ মহাদেশে হিমশৈল আছে ২ লাখ ৬৫ হাজার গিগাটন। পৃথিবীর ৬১ শতাংশ বিশুদ্ধ পানির উৎস এই অ্যান্টার্কটিকা। অ্যান্টার্কটিকা, আর্কটিক, গ্রিনল্যান্ড আর বরফে ঘেরা দ্বীপগুলোর বরফ যদি গলে যায়, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৭০ মিটার বাড়বে। উপকূলীয় সব এলাকা পানিতে তলিয়ে যাবে। অ্যান্টার্কটিকা বছরে ১১ হাজার ৮০০ কোটি টন বরফ হারাচ্ছে।
পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত ৫০ লাখ কিউবিক মাইলের বরফ আছে, যা গলতে না হলেও ৫ হাজার বছর লাগবে। কিন্তু যেভাবে কার্বন নিঃসরণ আর আর জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে, তাতে খুব শিগগিরই বরফমুক্ত পৃথিবী দেখতে পাবে আগামী প্রজন্ম।
নদী বন্দর / জিকে