২০২১ সালের ডিসেম্বরে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যাবে বাগেরহাটের রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। ইতোমধ্যে (ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) এ প্রকল্পের ৬২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি কাটিয়ে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বর্তমানে ৭ হাজারের অধিক শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। বাকি ৩৮ শতাংশ কাজও ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে।
আগামী বছরে কেন্দ্রটি জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়ে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যাবে বলে প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণকাজ পরিদর্শনে আসেন বিপিডিপি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী বেলায়েত হোসেন। এ সময় তিনি বলেন, মুজিব শতবর্ষে দেশকে শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় আনতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আর এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে রামপাল পাওয়ার প্লান্টের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুই ইউনিট বিশিষ্ট মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্লান্টের প্রথম ইউনিট ২০২১ সালের শেষ দিকে এবং দ্বিতীয় ইউনিটটি ২০২২ এর প্রথম দিকে উৎপাদনে যাবে।
বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের উপপ্রকল্প পরিচালক মো. রেজাউল করিম বলেন, নির্মাণাধীন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৬৬০ মেগাওয়াট করে দুটি ইউনিটের কাজ পুরোদমে চলছিল। ২০২০ সালের মার্চে করোনা ভাইরাসের কারণে কাজের গতি কমে যায়। ভারতীয় অনেক শ্রমিককে তখন দেশে পাঠাতে হয়েছিল। এখন সে অবস্থা কাটিয়ে ভারতীয় দক্ষ সকল শ্রমিকরা ফিরে আসায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে যেতে বয়লার, টারবাইন্ড, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, কুলিং টাওয়ার, জেটি, কোল্ডশেড ইয়ার্ড এগুলোর নির্মাণ কাজ পুরোদমে চলছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পরিবেশগত সকল আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখেই রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে আমদানি করা উন্নতমানের কয়লা ব্যবহার করা হবে। আল্ট্রা সুপার প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে স্বল্প কয়লা ব্যবহার করে অধিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে দেড় হাজারের বেশি দক্ষ ভারতীয় শ্রমিক ফিরে এসে কাজে যোগ দেন। এছাড়া ডিসেম্বর থেকে নতুন করে তরুণ একদল প্রকৌশলী এ প্রকল্পে যুক্ত হওয়ায় কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। বর্তমানে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বাংলাদেশি শ্রমিকসহ ৭ হাজারেরও অধিক শ্রমিক কর্মরত আছেন। ইতোমধ্যে ৬২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
২০১০ সালের ১১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরকালে ভারত ও বাংলাদেশ সরকার প্রধানের উপস্থিতিতে এই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের একটি এমইউ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। পরে ২০১২ সালের ২৯ জানুয়ারি ঢাকায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও ভারতের ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কোম্পানির (এনটিপিসি) মধ্যে জয়েন্ট ভেঞ্চারে বাগেরহাট জেলার রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
২০১৩ সালের ৮ অক্টোবর ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড যৌথভাবে বাগেরহাটের রামপালে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি ইউনিট প্রকল্পের যাত্রা শুরু করে। জমি অধিগ্রহণ শেষে ২০১৭ সালের ৪ এপ্রিল এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ কাজ শুরু করে। বর্তমানে ১ হাজার ৮৩৪ একর জমির ওপর প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। যা ২০২১ সালের মধ্যে উৎপাদনে আসবে।
রামপাল তাপবিদ্যুৎ নিয়ে কথা হলে বাগেরহাট-৩ আসনের সাবেক এমপি ও বর্তমান খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, রামপাল তাপবিদ্যুৎ নিয়ে যত বিরোধিতা হয়েছে আর কোনো বিষয় নিয়ে এত বিরোধিতা হয়নি। কিন্তু আজ বাস্তব সত্য রাপমাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। পরবর্তীতে যা জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়ে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় মনবলের কারণে বাগেরহাটের রামপালে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তব রূপ নিতে যাচ্ছে।
নদী বন্দর / পিকে