জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপন নিয়ে আর আন্দোলন না করার আশ্বাস দিয়েছেন আলেমরা। শুরু হওয়া আলোচনা চলবে, আলোচনার মাধ্যমেই এই সমস্যার সমাধান হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন নিয়ে সৃষ্ট অস্থিরতা নিরসনে সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে দেশের শীর্ষ আলেমদের সঙ্গে বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই তথ্য জানান।
ঢাকায় ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনে হেফাজতে ইসলামের নেতাসহ কওমি আলেমরা বিরোধিতা করে আসছেন। এরমধ্যে গত ৪ ডিসেম্বর রাতের কোনো একসময় কুষ্টিয়া পৌরসভার পাঁচরাস্তার মোড়ে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের ডান হাত, পুরো মুখ ও বাম হাতের অংশ বিশেষ ভেঙে ফেলা হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ধানমন্ডিতে আমার বাসভবনে কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের (বেফাক) সভাপতি ও আল হাইয়াতুল উলিয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাওলানা মাহমুদুল হাসানের নেতৃত্বে দেশের ১২ জন শীর্ষস্থানীয় আলেম একসঙ্গে বসি এবং মতবিনিময় করি। সেই সভায় মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ, মাওলানা মাহফুজুল হক, ওবায়দুল রহমান নদভী, মাওলানা মো. নুরুল ইসলামসহ ১২ জন আলেম উপস্থিত ছিলেন। আমাদের ধর্ম প্রতিমন্ত্রী (ফরিদুল হক খান), ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব ও আমাদের অতিরিক্ত সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘৫ ডিসেম্বর সারাদেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমরা মাহমুদুল হাসানের ডাকে একত্রিত হয়েছিলেন। সেখানে তারা অনেক বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলাপ করেছিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি পত্র তারা প্রেরণ করেছিলেন, সেই পত্রের কপিও তারা আমাদের দিয়েছেন। সেটার বিষয়ে আলাপ-আলোচনার বিষয়েই আমাদের ওখানে গিয়েছিলেন। একটা ফলপ্রসূ আলাপ হয়েছে।’
‘সিদ্ধান্ত এই রকমই আমরা যেসব আলাপ করেছি, এগুলো নিয়ে আরও আলাপ হবে। আমরা মনে করি, আলাপের মাধ্যমে আমরা সমস্ত সমস্যা সমাধান করব। আমরা ঐকমত্যে পৌঁছতে পারব।’
মন্ত্রী বলেন, ‘যেসব কথাবার্তা তাদের আলাপের মাধ্যমে বেরিয়ে আসছে, সেগুলোর সবই আমরা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারব। তারাও হৃদয় দিয়ে ধারণ করেন- সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি আমাদের জাতির পিতাকে। তারাও স্বীকার করেন, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একজন খাঁটি মুসলমান, তার ঈমানি দায়িত্ব যেগুলো সেগুলো তিনি পালন করে যাচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এইটুকু সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, আমরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঐক্য যেটুকু হয়েছে আরও যেসব প্রশ্ন আছে, আমরা ঐকমত্যের মাধ্যমে শেষ করতে পারব, ইনশাআল্লাহ। তাদের পাঁচটি প্রস্তাবের সবগুলো নিয়েই আলোচনা হয়েছে।’
কোন কোন বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আমরা সবগুলো বিষয়েই ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারব। আলাপ-আলোচনা যে শুরু হয়েছে, এটা চলবে।’
ভাস্কর্যের বিষয়ে তারা কী বলেছেন- এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তারা এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত আলাপ করবেন। আলাপ শুরু হয়েছে, আলাপের মাধ্যমেই আমরা এগুলো সব শেষ করব।’
তারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের পরিবর্তে মুজিব মিনার করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তারা কি এখনও সেই অবস্থানে আছেন- এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যথার্থই বলেছেন, ওখানে একটি মুজিব মিনার তৈরি করার জন্য, কুতুব মিনারের আদলে। তারপর তারা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তারা দেখা করতে চেয়েছেন। সবকিছুই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারব।’
‘আমরা যতটুকু আলাপ করেছি আমরা মনে করি একটি সুন্দর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। তারা এই আবেদন রেখেছেন, কেউ যাতে রাস্তায় নেমে এসে ভাঙচুর না করেন। কেউ যেন এসে কোনো ধরনের শান্তি-শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি না করে, এই ব্যাপারে তারা আমাদের সঙ্গে সম্পূর্ণ ঐকমত্যে আসছেন।’
আসাদুজ্জামান খান আরও বলেন, ‘ফেসবুকে নানা ধরনের উত্তেজনা ছড়ানোর যে প্রয়াস চলছে, সেইগুলোর বিরুদ্ধে তারাও কথা বলেছেন। তারা বলেছেন এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে। আমাদের অনেক কিছু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কোথাও যাতে সরকারবিরোধী আন্দোলন কেউ না করেন সেই আহ্বানও তারা রেখেছেন।’
তিনি বলেন, ‘পাঁচটি দাবি তারা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই শেষ কতে চান। আমরা অনেকদূর এগিয়েছি। আশা করি আলোচনার মাধ্যমেই ফয়সালা করতে পারব।’
এর মানে তাদের দাবিই শেষ পর্যন্ত আপনাদের মানতে হচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘মানতে হচ্ছে, সেটা আমি বলিনি। আপনি কিন্তু অন্য রকম বললেন। আমি বলেছি আলোচনার মাধ্যমে আমরা শেষ করব।’
যে ইস্যু নিয়ে আলোচনা তা সংবিধানপরিপন্থী, এ বিষয়ে একটি আইন আছে। যেখানে দিয়ে কথা বলা দরকার সেখানে খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় তারা আলোচনা করছে। সরকার কি নতজানু নীতি নিয়েছে এক্ষেত্রে- একজন সংবাদিকদের এমন জিজ্ঞাসার জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রশ্নই আসে না। সরকার কখনও নতজানু নীতিতে বিশ্বাস করে না।’
‘তারা বলেছেন, কোনো রকমের আন্দোলন তারা করবেন না। পাঁচটি দাবি আলোচনার মাধ্যমে তারা শেষ করতে চান। এগুলো সংবিধানবিরোধী হলে তো তা মানার শক্তি আমাদের নেই। আমরা সংবিধানের বাইরে যাব না। আমরা কারো ধর্মীয় সেন্টিমেন্টেও আঘাত করতে চাই না। আলোচনার মাধ্যমে শেষ করতে চাই’ বলেন আসাদুজ্জামান খান।
নদী বন্দর / পিকে