মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলের ১৯ কিলোমিটার ইনারবার (আভ্যন্তরীণ) ড্রেজিং কার্যক্রম আগামী শনিবার (১৩ মার্চ) উদ্বোধন করা হবে। নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন।
২০০২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত নানামূখী সমস্যার কারণে মৃতপ্রায় বন্দরে পরিণত হয় মোংলা বন্দর। বন্দরটি অচল হয়ে পড়ার প্রধান সমস্যা হয় বন্দর চ্যানেলে ড্রেজিং না করা। এক পর্যায়ে এই নাব্য সংকটের কারণে কোনও জাহাজ আসত না। মাসের পর মাস জাহাজ শূণ্য থাকত বন্দরের পশুর চ্যানেল।
বন্দরের আউটারবার (বহিঃনোঙ্গর) এবং ইনাবারে (আভন্তরীন) নাব্যতা সংকটের কারণে কন্টেইনারবাহী ৯.৫০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ মোংলা বন্দরে সরাসরি প্রবেশ করতেও পারে না। মূলত এ কারণে কন্টেইনারাইজড মালামাল আমদানি-রপ্তানীতে ব্যবসায়ীগণ মোংলা বন্দর ব্যবহারে উৎসাহী হয় না। তাই বন্দরের জেটিতে স্বাভাবিক জোয়ারে ৯.৫০ মিটারের অধিক ড্রাফটের জাহাজ আনার জন্য জয়মনিরগোল হতে বন্দর জেটি পর্যন্ত প্রায় ১৯ কিলোমিটার ব্যাপী ইনারবারে ২১৬.০৯ লক্ষ ঘনমিটার ড্রেজিং করা হবে।
বন্দর কর্তৃপক্ষ’র প্রধান প্রকৌশলী (সিভিল ও হাইড্রোলিক) ও ইনারবার ড্রেজিং এর প্রকল্প পরিচালক শেখ শওকত আলী এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে এ প্রকল্পের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৯৩ কোটি ৭২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। ২০২২ সালের জুনে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলেও জানান তিনি।
ড্রেজিং কাজের ঠিকাদার হিসেবে চীনা কোম্পানি জেএইচসিইসি এবং সিসিইসিসি’র সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ড্রেজিং এর মাটি ফেলার জন্য প্রায় ১৫শ একর জমির প্রয়োজন হবে। পশুর নদীর তীরবর্তী অল্প গভীরতা সম্পন্ন প্রায় ৫’শ একর জমিতে জিওটেক্সটাইল টিউব দ্বারা ডাইক নির্মাণ করে মাটি ফেলা হবে বলেও তথ্য দেন প্রকৌশলী শেখ শওকত আলী।
এদিকে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের জন্য ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এর মাধ্যমে প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাই (ফিজিবিলিটি স্টাডি) করা হয়। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক পরিচালিত সমীক্ষায় মোংলা বন্দরে ২০২৫ সালে ৮.৭২ লক্ষ টিইউজ কন্টেইনার এবং ২০৫০ সালে ৪৫.৩২ লক্ষ টিইউজ কন্টেইনার ও ৩০ হাজারের বেশী গাড়ী হ্যান্ডলিং এর সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানানো হয়। এরপরই মূলত প্রকল্পটি চূড়ান্তভাবে হাতে নেওয়া হয়।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ মুসা বলেন, ‘১৩০ কিলোমিটারের এই ইনারবার (আভ্যন্তরীন চ্যানেল) ড্রেজিং হলে বন্দরে সাড়ে ৯ মিটার থেকে ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ অনায়াসেই প্রবেশ করতে পারবে। তাতে আর কোন বাধা থাকবেনা। এখন বন্দর চ্যানেলে সাত মিটার পর্যন্ত গভীরতার জাহাজ আসতে পারে’।
এছাড়া ইনারবার ড্রেজিংয়ের ফলে বন্দরের গতিশীলতা আরও বাড়বে। নানামূখী উন্নয়নের ফলে এখন এই বন্দরে ২০ শতাংশ জাহাজ আগম বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও জানান তিনি।
বন্দরে অধিক ড্রাফটের জাহাজ হ্যান্ডলিং এর জন্য পশুর চ্যানেলের ইনারবারে নাব্যতা বৃদ্ধি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা একান্ত জরুরী বলে মনে করছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা।
বন্দর ব্যবহারকারী এইচ এম দুলাল বলেন, ড্রেজিং প্রকল্প বাস্তবায়নের পর ২০২১ সালের পর মোংলা বন্দরের ব্যবহার বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যেসব কন্টেইনারবাহী জাহাজ আগমণ করে এসব জাহাজ পূর্ণ লোড অবস্থায় প্রায় ৯.৫০ মিটার ড্রাফটের হয়ে থাকে। নাব্যতা সংকটের কারণে সেসব জাহাজ মোংলা বন্দরে সরাসরি প্রবেশ করতে পারে না। ইনারবার ড্রেজিং সম্পন্ন হলে এ সংকট কেটে যাবে বলে জানান তিনি।
নদী বন্দর / এমকে