কৃষকদের পানির কথা চিন্তা করে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ফরিদপুরের পদ্মা নদীর শাখা থেকে শুরু করে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার ডাঙ্গী ইউনিয়নের বিলগোবিন্দপুর হয়ে সদরপুরে গিয়ে মেশানো হয় খালটি। সেই খালের পানি দিয়েই এ অঞ্চলের কৃষকরা দীর্ঘদিন চাষাবাদ করতেন। সময়ের পরিক্রমায় বেশকিছু বছর ধরে খালটি ভরাট হয়ে মৃতপ্রায় অবস্থায় আছে। বর্ষা মৌসুমে অল্প পানি থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে খালটি থাকে পানিশূন্য।
খালের দু’পাশে ধান, পাট, পেঁয়াজ চাষের জন্য উর্বরভূমি হলেও পানির অভাবে চাষাবাদ ব্যহত হচ্ছিল। ফলে বেশির ভাগ জমিই থাকত পতিত। শ্যালো মেশিনের সাহায্যে পানি উঠিয়ে কেউ কেউ চাষাবাদ করলেও তাদের খরচ পড়তে অনেক বেশি। দীর্ঘদিন ধরে কৃষকদের এমন দুঃখ-দুর্দশার কথা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনো সুফল পাননি তারা।
অবশেষে কৃষকদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে কাটাখালী খালটি সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে সাড়ে ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এ খালটি সংস্কারে ‘ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প’ (দ্বিতীয় পর্যায়) এর আওতায় ২ কোটি ৬২ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নেয় এলজিইডি। কাজ সম্পাদনের দায়িত্ব দেয়া হয় বিল গোবিন্দপুর পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতিকে। বর্তমানে এ প্রকল্পের বেশির ভাগ কাজই শেষের পথে।
খালটি পুনঃখননে খুশি এ অঞ্চলের হাজারো কৃষক। নতুন করে তারা স্বপ্ন দেখছেন ফসল ফলানোর। কাজ শেষ হলে নগরকান্দার ডাঙ্গী, রামনগর, ফুলসূতি ইউনিয়নের ১০ হাজার কৃষক সরাসরি উপকৃত হবেন এমনটি জানান এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা জানান, পর্যাপ্ত পানি না পাওয়া এবং সেচ ব্যবস্থার বিকল্প না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে নগরকান্দার কৃষকরা কষ্টে ছিলেন। খরা মৌসুমে পানির কারণে ফসল ফলানো কঠিন ছিল কৃষকের। দীর্ঘদিন ধরে এই হাহাকার চললেও কৃষকদের দুঃখের কথা কেউ শোনেনি। অবশেষে কৃষকদের দুঃখের দিনের অবসান ঘটতে যাচ্ছে।
বিল গোবিন্দপুরের কৃষক মো. এনায়েত হোসেন, মোতালেব সরদার, শামসু মাতুব্বর, বাদশা প্রামানিক জানান, খালটি সংস্কার হওয়ায় তারা খুশি। আগামীতে এ খালের পানি দিয়েই বিভিন্ন ফসলের আবাদ করতে পারবেন।
ডাঙ্গী এলাকার কৃষক মজিদ বেপারী, সামসুদ্দিন শেখ জানান, পাটের জন্য বিখ্যাত তাদের এলাকা। কিন্তু পানির কারণে সেই পাট আবাদ করতে পারতেন না। খালটি খনন হওয়ায় এবার আর তাদের পানির কোনো সমস্যা থাকবে না।
খালটি খনন হলে শুধু কৃষি কাজই নয়, খালে মাছ চাষের সম্ভাবনার কথা জানালেন মৎস্যচাষি বাবলু সরদার।
তিনি বলেন, খালটি সংস্কার শেষ হলে একদিকে যেমন পানি ব্যবহার করে চাষাবাদ করা যাবে তেমনি মাছ চাষ করেও অনেকে জীবিকা নির্বাহ করতে পারবেন।
বিল গোবিন্দপুর পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সভাপতি সরদার সাইফুজ্জামান বুলবুল বলেন, খালটি পুনঃসংস্কার হওয়ার কারণে এর সুফল পাবে নগরকান্দার হাজারো কৃষক ও মৎস্যজীবী। খাল খননের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। খালটি খনন শেষ করে দুইপাড়ে নতুন করে গাছ লাগানো হবে।
নগরকান্দা উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান সরদার জানান, কাটাখালী খালটি খননের কারণে এ অঞ্চলের কৃষকদের মাঝে খুশির বন্যা বইছে। এই খালটির পানি ব্যবহার করে কৃষকের ফসলের উৎপাদন হবে অনেক বেশি। এখন আর কোনো জমি পতিত থাকবে না। খালটি সংস্কারের ফলে নগরকান্দায় নতুন করে কৃষি বিপ্লবের সূচনা হবে বলে জানিয়ে সরকারকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
নদী বন্দর / জিকে