করোনায় যখন দেশে অস্থিরতা বিরাজ করছে তখন ঝিনাইদহের গ্রামাঞ্চলে চলছে অন্য রকম এক উৎসব। শ্রম-ঘামে ফলানো সোনার ধান গোলায় তোলার উৎসবে মেতেছে কৃষক। রাত-দিন ধান কাটা, মাড়াই ও শুকাতে ব্যস্ত কৃষক পরিবারের সদস্যরা।
এবার আবহাওয়া ভালো। ঝড়-বৃষ্টি কম। সব মিলিয়ে একটা ভালো বছর পেয়েছেন কৃষকেরা।
ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের দেয়া তথ্যমতে, চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে জেলার ৬ উপজেলায় ধান রোপণ হয়েছে ৭৭ হাজার চারশ ৪০ হেক্টর জমিতে। আবহাওয়া অনুকূল থাকা আর পরিমিত পরিচর্যার কারণে এবার ধানের ভালো ফলন হয়েছে। তবে গত ৪ এপ্রিল বিকেলে হঠাৎ ঝিনাইদহসহ আশপাশের জেলাগুলোর ওপর দিয়ে কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যায়। ঝড়ের আগে পরে বৃষ্টি না হলেও গরম হাওয়া বইতে থাকে। গরম হওয়ার কারণে কিছু কিছু জমির ধান নষ্ট হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি দফতরের কর্মকর্তারা।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হলিধানি গ্রামের কৃষক লাল্টু মিয়া (৫৫) বলেন, এবছর তিনি ৫ বিঘা জমিতে ধান রোপণ করেছেন। ফলন ভালো হয়েছে। এখন পর্যন্ত ধান কাটা হয়েছে ৩ বিঘার। আর কয়েকদিন সময় পেলে সব ধান ঘরে তুলতে পারবেন তিনি।
একই মাঠে দুপুরের কড়া রোদ মাথায় নিয়ে ধান মাড়াই ও শুকানোর কাজ করছিলেন হাফিস।
তিনি বলেন, ধান লাগানোর পর মাঝামাঝি সময়ে বৃষ্টি হলে ফলন ভালো হয়। এবার সেটা হয়নি। তাই খরায় ফলন কিছুটা কম হয়েছে। তবে এতে কৃষকদের কোনো আক্ষেপ নেই।
তিনি বলেন, কয়েক বছরের মধ্যে এ বছর আবহাওয়া অনেকটা ভালো থাকায় কৃষকেরা নির্বিঘ্নে ধান ঘরে তুলতে পারছে। অন্যবার বৈশাখে টানা বৃষ্টির সঙ্গে ঝড়, শিলাবৃষ্টি থাকে। বজ্রপাতও বেশি হয়। এতে ধান কাটা ও মাড়াইয়ে সমস্যা হয়। পাশাপাশি শ্রমিক সংকট থাকলে কৃষকদের মধ্যে একটা অস্থিরতা কাজ করে। কিন্তু এবার এসব নেই। সবদিক দিয়ে এ বছর ভালো। আমরা সবাই খুশি মনে ধান ঘরে তুলছি। আর এক সপ্তাহ সময় পেলে ধান কাটা ও মাড়াই কাজ শেষ হয়ে যাবে।
মহেশপুর উপজেলার ভৈরবা গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম জানান, চলতি ইরি মৌসুমে মাঠে ৩০ বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছিলাম। প্রথম দিকে কালবৈশাখী ঝড়ে প্রতিটা জমির কিছু কিছু ধান সাদা বর্ণ হয়ে চিটা হয়েছে। যেসব জমির ধানে দুধভাত ছিল সেসব ধানের শীষে সাদা হলুদ বর্ণ ধারণ করে। যার কারণে এবছর ফলন কিছুটা কম হয়েছে তার।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বাজার গোপালপুর গ্রামের ধানচাষি লাল্টু মিয়া বলেন, আমি দুই বিঘা জমিতে ধানা লাগাইছিলাম। আজ ধান কাটছি। এবার পানি খরচ একটু বেশি হয়েছে। তারপরও ফলন ভালো। ৩৩ শতকের বিঘায় আমার ২৫ মণ হারে ফলন হবে। তাতে আমার এবার ভালোই লাভ হচ্ছে।
কালীগঞ্জ উপজেলার বালিডাঙ্গা গ্রামের কৃষক কামাল উদ্দিন বলেন, আমি এবার ৬৩ জাতের ধানের আবাদ করেছি। ধানের জমিতে চাষ দেয়া, লাগানো, সেচ, সার, ধান কাটা, বাড়িতে নিয়ে যাওয়া সব মিলিয়ে সর্বোচ্চ ১৫-১৬ হাজার টাকা এবার খরচ হয়েছে। ৬৩ জাতের ধান বিঘাপ্রতি ৩০-৩৫ মণ হারে ফলন হয়েছে।
তিনি বলেন, এখন যে বাজারদর, একমণ ধান ১ হাজার টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। তাতে ধান বেচলে ৩৫ হাজার টাকা হবে। ধানে লাভ হচ্ছে ১০ হাজার। আর ধানের যে বিচালি আছে তার দাম মনে করেন ৯ হাজার টাকা। মোটামুটি এবার ধান চাষ করে কৃষক লাভবান হয়েছে।
ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন জানান, যেকোনো সময় বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ধান ৮০ ভাগ পেকে গেলে আমরা কৃষকদের ধান কাটার পরামর্শ দিয়েছি।
তিনি জানান, গত ৪ এপ্রিল বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড়ের আগে গরম দমকা বাতাস বয়ে যায়। অতিমাত্রায় গরম বাতাসের কারণে দুধভাত হওয়া শীষগুলো পুড়ে যায়। আর এতে কৃষক যেন ক্ষতি পুষিয়ে ফলন ভালো পায় সেজন্য শুরু থেকে আমরা প্রান্তিক পর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের নানা প্রযুক্তিগত পরামর্শ দিয়েছি। এতে কৃষকরা ফলন ভালো পেয়েছেন।
নদী বন্দর / জিকে