আজকাল নানা মাধ্যমে শোবিজ-তারকারা সহজলভ্য। তাই সেই আবেদন আর নেই রঙিন দুনিয়া ও তার বাসিন্দাদের নিয়ে। তবে হ্যাঁ, একটা সময় ছিলো শোবিজ মানেই সাধারণ মানুষের কাছে রহস্য, রোমাঞ্চ আর ঘোর লাগা এক জগত৷
শোবিজের মানুষ মানেই তাকে ঘিরে রাজ্যের আগ্রহ৷ সিনেমার নায়ক-নায়িকা হলে তো কথাই নেই৷ প্রিয় তারকার মতো নিজেকে গড়ে তোলা, তার স্টাইল-ফ্যাশন অনুসরণ করা ছিলো স্বাভাবিক ঘটনা।
এই যেমন নব্বই দশকে দেখা যেত তরুণ-যুবকেরা মাথার পেছনে ঘাড় পর্যন্ত টানা লম্বা চুল নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন৷ তারা ছিলেন নায়ক ওমর সানীর ভক্ত৷ প্রায় সব পাড়া মহল্লার সেলুনগুলোতে শাহরুখ খান, সালমান খান, টম ক্রুজ, ম্যারাডোনা, জাফর ইকবাল, ইলিয়াস কাঞ্চনদের পাশাপাশি ঝুলতো ওমর সানীর ছবি। যে ছবির স্টাইলে অনেকেই নিজের চুল কাটাতেন।
এতে প্রমাণ মেলে নায়ক হিসেবে কতোটা জনপ্রিয় ছিলেন ওমর সানী৷
এ নায়ক সিনেমায় অনেকদিন ধরেই অনিয়মিত। তবে নিশ্চয় তার সেই ভক্তদের মনে আজও তিনি নিয়মিত, ভালোবাসা আর পছন্দে।
নব্বই দশকের বহু হিট-সুপারহিট সিনেমার নায়ক ওমর সানীর আজ জন্মদিন।
নব্বই দশকদের ঢাকাই ছবির ক্রেজ ছিলেন চিত্রনায়ক ওমর সানী। তার অভিনীত অসংখ্য ব্যবসা সফল ছবি আজও দর্শকদের মনে গেঁথে আছে।
করোনা আক্রান্ত পৃথিবীতে উৎসব নেই কোথাও। জানা গেছে, ওমর সানীও ঘরে বসেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে জন্মদিন কাটাচ্ছেন। নেই কোনো পার্টি বা আয়োজন।
রুপালি পর্দার অভিনেতা ওমর সানী আর বাস্তবের ওমর সানীর মধ্যে বেশ পার্থক্য রয়েছে। ছোটবেলায় ছিলেন ভীষণ আড্ডাবাজ প্রকৃতির। ক্রিকেট, ফুটবল ছাড়াও অনেক খেলায় পারদর্শী ছিলেন। মাঝেমধ্যে দূরে কোথাও হারিয়ে যেতেন বন্ধুদের সাথে। প্রচণ্ড হৈহুল্লোড়ে বেড়ে ওঠা ওমর সানীর জন্ম ও শৈশব-কৈশোর কেটেছে পুরাণ ঢাকার জিঞ্জিরা এবং কালীগঞ্জে। তখন থেকেই স্বপ্ন দেখতেন একদিন অভিনয় করবেন চলচ্চিত্রে। সেই স্বপ্ন পূরণে আত্মবিশ্বাসকেই বেশি কাজে লাগিয়েছেন তিনি।
পরিবারের উৎসাহ আর বাবার অনুপ্রেরণায় রুপালি দুনিয়ায় পথ চলা শুরু করেন। ‘সুজন সখী’ নামের একটি ছবিতে প্রথম কাজ শুরু করেন তিনি। এই ছবির পরিচালক ছিলেন দারাশিকো। এরপর বিভিন্ন টানাপড়েনে মাঝপথে চলচ্চিত্রের কাজ করা বন্ধ হয়ে যায়। সেই সময় মানসিকভাবে ভেঙে পড়লেও আশা ছাড়েননি প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী ওমর সানী।
অবশেষে ১৯৯২ সালে নূর হোসেন বলাই পরিচালিত ‘এই নিয়ে সংসার’ ছবির মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্র পেয়েছিল লম্বাদেহী নায়ক ওমর সানীকে। সে ছবিতে তখনকার সুপারহিট ইলিয়াস কাঞ্চনের ছোট ভাইয়ের চরিত্রে দেখা গিয়েছিল সানীকে। ঠিক তার পরের বছর ‘চাঁদের আলো’ ছবিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। শেখ নজরুল পরিচালিত সে ছবিতে ওমর সানির বিপরীতে ছিলেন আনোয়ারার মেয়ে নবাগতা মুক্তি। এটি ছিল তার প্রথম ছবি।
নব্বইয়ের দশকে সুপারহিটের তকমা পাওয়া ‘চাঁদের আলো’ ছবির ‘তুমি আমার চাঁদ, আমি চাঁদেরই আলো, যুগে যুগে আমি তোমায় বাসবো ভালো’ গানটি এখনও সিনেপ্রেমীদের মনে দাগ কটে আছে।
এই ছবির সাফল্যের পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি সানীকে। এরপর তিনি একে একে কাজ করেন ‘হারানো প্রেম’, ‘অধিকার চাই’, ‘রঙিন নয়ণমনি’, ‘লাট সাহেবের মেয়ে’, ‘গরীবের রানী’, ‘চালবাজ’, ‘আত্ম অহংকার’, ‘সুখের স্বর্গ’, ‘বাপের টাকা’, ‘প্রেমের অহংকার’, ‘ত্যাজ্যপুত্র’, ‘ঘাত প্রতিঘাত’, ‘কে অপরাধী’, ‘মধু মিলন’, ‘তুমি সুন্দর’, ‘প্রিয়তুমি’, ‘কুলি’, ‘প্রেম প্রতিশোধ’, ‘দোলা’সহ আরো অনেক দর্শকপ্রিয় ছবিতে।
রুপালি পর্দার বাইরে অভিনেতা ওমর সানীর রয়েছে দারুণ একটি সুখের সংসার। তার সহধর্মিণী চিত্রনায়িকা মৌসুমী। এই তারকা দম্পতি জুটি নব্বইয়ের দশকের সবচেয়ে জনপ্রিয় জুটিগুলোর মধ্যে অন্যতম।
‘দোলা’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করার সময় সানী-মৌসুমীর পরিচয় পরিণয়ে পরিণত হয়। এরপর ১৯৯৬ সালের ২ আগস্ট বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তারা। এই দম্পতির দুই সন্তান ফারদিন এহসান স্বাধীন এবং ফাইজা।
সম্প্রতি তার ছেলে স্বাধীন বিয়ে করেছেন কানাডার নাগরিক সাদিয়া রহমান আয়েশাকে। ছেলের বিয়ের পরপরই ওমর সানীর পরিবারে করোনা আঘাত হানে৷ তিনি ছাড়া আর সবাই করোনা আক্রান্ত হন৷ তবে বর্তমানে সবাই ভালো আছেন।
নদী বন্দর / এমকে