কাপ্তাই হ্রদের পানিতে ফুল ভাসিয়ে পুরনো বছরকে বিদায় এবং নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়েছে রাঙামাটির পাহাড়ি জনগোষ্ঠী।
শনিবার ভোরে গঙ্গা দেবীর উদ্দেশ্যে নদীতে ফুল ভাসানোর মধ্যে দিয়ে শুরু হয় এই উৎসব। উৎসবে পাহাড়ি নারীরা বাহারি রঙের পিনন-হাদি আর ছেলেরা ধুতি-পাঞ্জাবি পরে কাপ্তাই হ্রদে ফুল ভাসানোর উৎসবে মেতে ওঠে।
সকালে রাঙামাটি রাজবন বিহার ঘাটে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি-জেএসএসের সহসভাপতি ঊষাতন তালুকদার, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, চাকমা কালচারাল কাউন্সিল বাংলাদেশসহ নানা সংগঠন ও বয়সের নারী-পুরুষ ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে ফুল ভাসিয়েছে।
এ ছাড়া গর্জনতলী, কেরানি পাহাড়, আসাম বস্তিসহ শহরের বিভিন্ন জায়গায় পুরনো বছরের সব দুঃখ, কষ্ট ও গ্লানি দূর করে নতুন বছর যাতে সুখ-শান্তিতে কাটানো যায় সেজন্য কাপ্তাই হ্রদের পানিতে ফুল ভাসানো হয়েছে।
রাজবন বিহার ঘাটে ফুল ভাসাতে আসা মার্সি চাকমা বলেন, “বিজু আমাদের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর প্রধান ঐতিহ্যবাহী উৎসব। আজকে হচ্ছে বিজুর প্রথম দিন ‘ফুল বিজু’। এই ফুল বিজুতে আমরা পানিতে ফুল ভাসিয়ে মা গঙ্গা দেবীর কাছে সবাই প্রার্থনা করি পুরনো বছরের সব দুঃখ, কষ্ট ও গ্লানি দূর করে নতুন বছর যাতে সুখ-শান্তিতে কাটাতে পারি।”
পারমী চাকমা বলেন, “খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে ফুল নিয়ে আমাদের চাকমাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পিনন-হাদি পরে পানিতে ফুল ভাসাতে এসেছি। আমি ফুল ভাসিয়ে গঙ্গা দেবীর কাছে প্রার্থনা করেছি নতুন বছরে আমরা যাতে সবাই সুখ-শান্তিতে থাকতে পারি।”
চাকমা কালচারাল কাউন্সিল বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা লিটন চাকমা বলেন, “আমরা ভোরে বিভিন্ন বাড়ি থেকে ফুল সংগ্রহ করে নদী বা ছড়াতে গঙ্গা দেবীর উদ্দেশে ফুল নিবেদন করে থাকি। এভাবে আমরা পুরাতন বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে থাকি।”
জেএসএসের সহসভাপতি ঊষাতন তালুকদার বলেন, “বিজু মানে চেতনা, বিজু মানে আনন্দ-উচ্ছ্বাস। পুরাতন বছরের গ্লানি, দুঃখ, কষ্টকে মুছে ফেলে নতুন বছরের আশা রাখব, এই পার্বত্য অঞ্চলের মানুষ যেন নিজস্ব কৃষ্টি, সংস্কৃতি নিয়ে সুখ-শান্তিতে থাকতে পারি এবং সবাই মিলে সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে পারি।”
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ বলেন, “রাঙামাটি পুরো শহর এক উৎসবে পরিণত হয়েছে। আমরা আশা করছি, এসব উৎসব উদযাপনের মাধ্যমে আমরা আগামী দিনের সৌহার্দ্য সম্প্রতিকে আরও সুদৃঢ় করব।”
ফুল বিজুর দিনে পুরো পার্বত্য চট্টগ্রাম দিয়ে বয়ে চলা চেঙ্গী, মাইনী, কাচালং, কর্ণফুলীসহ পাহাড় থেকে নেমে আসা ছড়াগুলোতে ফুল ভাসায় পাহাড়িরা।
রোববার বিজু উৎসবের দ্বিতীয় দিন ‘মূল বিজু’। এদিন বাড়িতে বাড়িতে রান্না করা হয় পাহাড়িদের ঐতিহ্যবাহী খাবার ‘পাজন’সহ বিভিন্ন ধরনের খাবার। তা দিয়ে অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয়।
উৎসবের তৃতীয় দিন হচ্ছে ‘গজ্যাপজ্যা বিজু’ বা নববর্ষ উৎসব। এদিন বিশ্ব শান্তির কামনায় মন্দিরে গিয়ে প্রার্থনা করা হয়।
১৬ এপ্রিল মারমাদের জলকেলি উৎসবের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী এই উৎসব।
নদীবন্দর/ইপিটি