একটা সময় গোলা ভরা ধান ছিল পুকুর ভরা মাছ ছিল। তেমনই টেলিভিশনে ভরা ছিল জনপ্রিয় সব ধারাবাহিক। সময়ের পরিবর্তনে সব যেন আজ স্মৃতি। বইয়ের পাতায় ধান-মাছ নিয়ে আফসোস হয় আর দর্শকরা ভোগেন মনের মতো ধারাবাহিকের অভাবে।
ঠিক তখন তাদের পাশে দাঁড়ান নির্মাতা কাজল আরেফিন অমি। ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ দিয়ে মেটান তাদের অনেক দিনের ক্ষুধা। এরইমধ্যে ধারাবাহিকটির চার মৌসুম সম্পন্ন হয়েছে। জনপ্রিয়তা তিল পরিমাণ নড়চড় হয়নি।
‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ শুধু যে জনপ্রিয় তা কিন্তু না। এটি যেন হয়ে উঠেছে তারকা তৈরির কারখানা। এই নাটকের নাম লিখিয়ে অভিনয়শিল্পীদের অনেকে পেয়েছেন তারকা খ্যাতি। অনেকে ফিরে পেয়েছেন হারানো জনপ্রিয়তা।
বলতে গেলে কাবিলাকে ঘিরে ব্যাচেলর পয়েন্ট ঘোরে। গুরুত্বপূর্ণ এই চরিত্রে আছেন জিয়াউল হক পলাশ। অমির সহকারী পরিচালক পলাশকে এর আগে পার্শ্ব চরিত্রেই দেখা যেত। ধারাবাহিকটি বদলে দেয় সব হিসাব নিকাশ। তাকে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে নিয়ে আসে। রীতিমতো তারকা বনে যান পলাশ। বেড়ে যায় ব্যস্ততাও।
একাধারে কবি, গীতিকবি, অভিনেতা হিসেবে বরাবরই মারজুক রাসেলের আলাদা জায়গা রয়েছে বিনোদন অঙ্গনে। তবে এ প্রজন্মের কাছে পুরোপুরি প্রকাশিত ছিলেন না তিনি। এই দায়িত্ব পালন করেছে ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’। চিরায়িত মারজুককে নতুন দর্শকের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে। তার অভিনীত চরিত্রটি দর্শকের এতটাই ভালো লেগেছে যে অনেকেই এখন মারজুককে পাশা বলেই সম্বোধন করেন।
একই কথা বলা যায় ফারিয়া শাহরিনের ক্ষেত্রে। ক্যারিয়ারের শুরুতে জনপ্রিয়তা পেলেও একসময় অনিয়মিত হয়ে পড়েন। ফলে আলোচনার টেবিলেও ছিলেন না। ‘ব্যাচেলর পয়েন্টে’ অন্তরা চরিত্রটি যেন সুদে আসলে তার হারানো জনপ্রিয়তা ফিরিয়ে আনে। দর্শকরা এখন তাকে অন্তরা বলেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।
পারসা ইভানার ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যায়। দর্শকপ্রিয়তা আগে থেকেই ছিল। ইভা চরিত্রটি যেন তার জনপ্রিয়তা বাঁধ ভাঙা বানের পানির মতো উপচে দেয়। চরিত্রের দাপটে তার আসল নামই কোণঠাসা আজকাল। একই কথা বলা যায় মুসাফির সৈয়দ বাচ্চুর ক্ষেত্রে। অনেক আগে থেকে শোবিজে তিনি। একাধিকবার তার অভিনয় দর্শককে মুগ্ধতা করেছে। তবে তা যেন চলছিল ঢিমেতালে। ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’-এর বাচ্চু চরিত্রটি জনপ্রিয়তার তুঙ্গে নিয়ে যায় তাকে। দর্শকের কাছে তিনি এখন লগে আছি ডটকমের এমডি। ধারাবাহিকটি ক্যারিয়ার বদলে দিয়েছে চাষী আলমের। হাবু চরিত্রটির কল্যাণে তিনি এখন তারকা। অনেক আগে থেকে অভিনয় করলেও এত দর্শকপ্রিয়তা পাননি কখনও। নেটিজেনরা এখন হাবু ভাই বলেই ডাকে। তার বেশকিছু সংলাপও পেয়েছে জনপ্রিয়তা।
নির্মাতা শরাফ আহমেদ জীবনও আছেন এই দলে। ব্যস্ত এ নির্মাতাকে বোরহান চরিত্রটি ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ -এর অনুরাগীদের ঘরের মানুষে পরিণত করে। সাবলীল অভিনয়ে তিনিও চরিত্রটি জীবন্ত করে তুলেছিলেন ক্যামেরায়। ফলে রাতারাতি তারকাখ্যাতি পেতে কোনো প্রতিবন্ধকতাই ছিল না। বোরহান হিসেবে দর্শক সমাদর পাওয়ার পর থেকে অভিনেতা হিসেবেও ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন জীবন।
‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ -এ নাম লিখিয়েই জনপ্রিয়তা কড়ায়গণ্ডায় বুঝে পেয়েছেন সাইদুর রহমান পাভেল। চরিত্র ও অভিনয়ের মিশেলে দর্শকের মন জয় করতে বেশিদিন লাগেনি। তিনি এখন ব্যাচেলরপ্রেমীদের কাছে বজরা বাজারের জাকির।
শিমুল ও লামিয়ার খুনসুটি উপভোগ করেন ব্যাচেলর পয়েন্টের দর্শকরা। দুজনেই এই ধারাবাহিকের মাধ্যমে পরিচিতি পেয়েছেন। অমির সহকারী পরিচালক শিমুল শর্মাকে তারকা বানিয়েছে নাটকটি। লামিয়া লামও ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’-এর হাত ধরে পেয়েছেন পরিচিতি। নির্মাতা আশুতোষ সুজনও এই ধারাবাহিক দিয়ে পরিচিতি পেয়েছেন। নিজের নামে এলেও সানজানা সরকার রিয়া তো দর্শকের কাছে আগুন নামে পরিচিতি পেয়েছেন। এতেও বোঝা যায় তাকে ঘিরে দর্শকের উন্মাদনা কতটা। অতএব নিঃসন্দেহে বলা যায় ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ যেন তারকা তৈরির কারখানা।
নদীবন্দর/জেএস