করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে টানা ৪৮ দিন বন্ধ থাকার পর সোমবার (২৪ মে) থেকে বরিশাল নৌপথে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে। তবে প্রথমদিনই অভ্যন্তরীণ ও ঢাকাগামী লঞ্চগুলোতে যাত্রী পরিবহনে মানা হয়নি স্বাস্থ্যবিধি। সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে বরিশাল নদীবন্দর থেকে ছেড়ে গেছে ঢাকাগামী পাঁচটি লঞ্চ।
এদিকে লঞ্চগুলোতে সরকারি নির্দেশনা মেনে যাত্রী তোলা হচ্ছে কি-না তা তদারকির জন্য সোমবার রাত সোয়া ৮টা থেকে পৌনে ৯টা পর্যন্ত নদী বন্দরে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাত হোসেন এবং জাবেদ হোসেন চৌধুরী। তারা সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী বহনের জন্য বার বার লঞ্চ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন।
পাশাপাশি বিআইডব্লিউটিএ ও নৌ থানা-পুলিশের সদস্যরা কিছুক্ষণ পরপর মাইকে যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। যাত্রীদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে লঞ্চে উঠতে এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে বসতে অনুরোধ করেছেন তারা। তবে লঞ্চ কর্তৃপক্ষের সেদিকে কোনো খেয়াল ছিল না। ফলে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে প্রশাসন থেকে নানা পদক্ষেপ নিলেও লঞ্চ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় তা ব্যর্থ হয়েছে।
সোমবার রাত ৮টার দিকে বরিশাল নদী বন্দর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়ার জন্য বরিশাল নদী বন্দরে সুন্দরবন-১০,পারাবত-১০, সুরভি-৯, কীর্তনখোলা-১০ ও এমভি মানামি লঞ্চ অপেক্ষায় রয়েছে। পন্টুনে ছিল যাত্রীদের ভিড়। একজনের শরীরের সঙ্গে আরেকজনকে ঠেলাঠেলি করে লঞ্চে প্রবেশ করতে হচ্ছে। লঞ্চের সামনে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখলেও অনেক যাত্রী সেটি ব্যবহার করছেন না। লঞ্চ কর্তৃপক্ষের সেদিকে নজর নেই।
লঞ্চের ভেতরে প্রবেশ করে দেখা যায়, ডেকে বসা বেশির ভাগ যাত্রীর মুখে নেই কোনো মাস্ক। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে একে অপরের গা ঘেঁষে লঞ্চের ডেকে গাদাগাদি করে বসে আছেন। তারপরও লঞ্চগুলোতে যাত্রী উঠানো হচ্ছে। যদিও ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অর্ধেক যাত্রী বহনের নির্দেশনা রয়েছে। আর অর্ধেক যাত্রী বহনের নির্দেশনার কারণে লঞ্চের ডেক যাত্রীর ভাড়া ২৫৫ থেকে বাড়িয়ে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ ৪০০ টাকা করেছে। তারপরেও অতিরিক্ত যাত্রী নিয়েই রাত পৌনে ৯টা থেকে সোয়া ৯টার মধ্যে বিশাল আকারের পাঁচটি লঞ্চ বরিশাল নদী বন্দর ত্যাগ করে। অবশ্য এর আগে নদী বন্দরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে যাত্রী পরিবহন ও অতিরিক্ত যাত্রী লঞ্চে তোলার দায়ে বরিশালের তিনটি লঞ্চের কর্তৃপক্ষকে ১৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
বরিশাল সদর নৌ-থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসনাত জামান বলেন, টানা ৪৮ দিন লঞ্চ বন্ধ থাকায় সোমবার যাত্রীদের চাপ ছিল বেশি। এরপরও স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী বহন নিশ্চিতে বিআইডব্লিউটিএ ও নৌ-পুলিশের সদস্যরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন। কিছুক্ষণ পরপর মাইকে যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়েছে। যাত্রীদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে লঞ্চে উঠতে অনুরোধ করা হয়েছে। পাশাপাশি লঞ্চঘাটে যারা প্রয়োজন ছাড়া ঘোরাফেরা করেছেন তাদের সেখান থেকে চলে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। তবে কিছু কিছু যাত্রীদের মধ্যে উদাসীনতা লক্ষ করা গেছে।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাত হোসেন বলেন, করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে তিনি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জাবেদ হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে পৃথকভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়।
এ সময় স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করা ও ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী বহন করার নির্দেশন থাকলেও অতিরিক্ত যাত্রী বহনের দায়ে তিন লঞ্চের কর্তৃপক্ষকে ১৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
নদী বন্দর / পিকে