তিস্তার নদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিয়েছে ভাঙন। এই ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে লালমনিরহাটের তিস্তাপাড়ের কয়েক হাজার পরিবার। তবে ডাম্পিংয়ের জন্য জিও ব্যাগে বালু ভরাট করতে নদীর ভাঙন কবলিত এলাকা থেকেই বালু উত্তোলনের জন্য ড্রেজার মেশিন বসিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ঠিকাদার। এতে বাধা দিয়েছে ভাঙন কবলিত পরিবারগুলো। তাদের মতে, বালু উত্তোলনে নদীর ভাঙন আরও ত্বরান্বিত হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নে তিস্তা পাড়ের কলোনি পাড়ায় গত কয়েকদিন থেকে নদীর তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জরুরি ভিত্তিতে সেখানে জিও ব্যাগ ফেলার উদ্যোগ নেয়। তবে জিও ব্যাগগুলো ভরাট করতে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে নদী পাড়ের কাছ থেকেই।
সরেজমিনে দেখা যায়, নদীর পাড় ঘেঁষেই বসানো হয়েছে ড্রেজিং মেশিন। তিস্তা পাড়ের কলোনি পাড়ায় অন্তত ৩০টি পরিবারের বসবাস। তাদের সবাই কয়েক দফায় তিস্তা নদীর ভাঙনের শিকার হয়ে বসতভিটা ও আবাদি জমি হারিয়েছেন। আবারও তারা পড়েছেন ভাঙনের মুখে। ভাঙন আতঙ্কে তাদের রাত এখন নির্ঘুম।
কলোনি পাড়া গ্রামের আকবর আলী (৫০) বলেন, ‘জিও ব্যাগে বালু ভরতে নদীপাড় থেকে মাত্র ২৫ থেকে ৩০ মিটার দূরত্বে পাউবোর ঠিকাদার ড্রেজার বসিয়েছে বালু উত্তোলনের জন্য। এখান থেকে বালু তুললে গ্রাম আরও বেশি ভাঙনের কবলে পড়বে।’
একই গ্রামের কৃষক নায়েব আলী (৫৬) বলেন, ‘বার বার নদী ভাঙনের শিকার হয়ে আমরা নিঃস্ব। এখন এই বসতভিটাটুকু শেষ সম্বল। নিরাপদ দূরত্ব থেকে বালু সংগ্রহ করে জিও ব্যাগে না ভরা হলে আমাদের এইটুকু সম্বলও হারাব।’
কথা হয় তিস্তা পাড়ের রোকেয়া বেওয়ার (৪৮) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গ্রামবাসীর বাধা সত্ত্বেও ঠিকাদার জোর করেই নদীর পাড় থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু তোলার চেষ্টা করছে। নদী থেকে বালু তুলে ভাঙন ঠেকানোর নামে আমাদের ভাঙনের মুখে ঠেলে দিচ্ছে তারা।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাউবোর ঠিকাদার গোলাম মোস্তফা স্বপন বলেন, ‘স্থানীয়রা না বুঝেই বালু উত্তোলনে বাধা দিচ্ছে। নিরাপদ দূরত্বে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কাজটি জরুরি বলে তাড়াতাড়ি বালু উত্তোলন করে জিও ব্যাগে ভরে ডাম্পিং করতে হবে।’
এ বিষয়ে লালমনিরহাট পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ‘নদী পাড় থেকে ৫০০ থেকে ৬০০ মিটার দূরত্ব থেকে বালু উত্তোলন করে জিও ব্যাগে ভরে তা ডাম্পিং করতে ঠিকাদারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাউবো কর্মকর্তা এটা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন। অনির্ধারিত বাজেটে জরুরি কাজ হিসেবে কলোনি পাড়া এলাকায় তিস্তা নদীর ভাঙন ঠেকাতে এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’
নদী বন্দর / পিকে