সরকারঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধে প্রশাসনের কড়া নজর সারাদেশের হাট-বাজারে। প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়া নিষেধ। এমন অবস্থায় বিপাকে পড়েছেন গাইবান্ধার কাঁঠাল উৎপাদনকারী কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। ক্রেতা সংকটে ১০০ টাকার কাঁঠাল ১০ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে কৃষকরা ন্যায্যদাম পাচ্ছেন না, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
কৃষি বিভাগ বলছে, দেশের বিভিন্ন জেলায় কাঁঠালের চাহিদা রয়েছে। তবে করোনার কারণে চলমান কঠোর বিধিনিষেধে চাইলেও এখন কাঁঠাল বাজারজাত করা সম্ভব হচ্ছে না।
ফুলছড়ি উপজেলার কাঠাল ব্যবস্যায়ী মমতাজ মিয়া বলেন, ‘গাইবান্ধার জেলার ঐতিহ্যবাহী ভরতখালি ও ফুলছড়িতে প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবার হাট বসে। গত মঙ্গলবার (২৯ জুন) এই হাটে প্রশাসনের কঠোর নজরদারির কারণে ক্রেতা উপস্থিতি ছিল খুবই কম। এমন অবস্থায় কাঁঠাল বিক্রি করতে পারিনি। রোববার (৪ জুলাই) কাঠাল বিক্রি করতে সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়া বাজারে যাই, সেখানেও প্রশাসনের ভয়ে ক্রেতা ছিল না বললেই চলে। বাধ্য হয়ে ৭০ টাকায় কাঁঠাল কিনে ২০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। ন্যায্যদামে বিক্রি করতে না পেরে অনেক সময় পাকা কাঁঠাল গরুকে খাওয়াতে হচ্ছে।’
সাঘাটা উপজেলার ঝাড়াবর্ষা গ্রামের সোহেল রানা বলেন, ‘আমাদের গাছের কাঁঠাল প্রতিবছর পাইকাররা কিনে নিয়ে যান । এ বছর কোনো পাইকার না থাকায় কাঁঠাল পেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রায় ১০ থেকে ১৫ কেজি ওজনের কাঁঠাল ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। যার দাম অন্যান্য বছর ১৬০ থেকে ২৫০ টাকার মতো হতো।’
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক মোফাজ্জল হক বলেন, ‘গত কয়েক বছর যেসব কাঁঠাল ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি করা হতো, এ বছর সেগুলো ১০-১৫ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে, তবুও ক্রেতা নেই।’
বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃষক আমির হোসেন বলেন, ‘বিধিনিষেধের কারণে কাঁঠালসহ বিভিন্ন ফলের দাম অনেক কম। সরকার যদি এই ফল বিক্রির ভিন্ন কোনো ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে আমাদের মতো চাষিরা ফল উৎপাদন থেকে মুখ ফিড়ে নেবে।’
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মাসুদুর রহমান বলেন, ‘চাহিদা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন জেলায় কাঁঠাল পাঠানোর সুযোগ আমরা করে দিতে পারি। কিন্তু করোনার কারণে সারাদেশে কঠোর বিধিনিষেধ চলছে। প্রয়োজনের বাইরে কেউ বাড়ি থেকে বের হতে হওয়া নিষেধ, এ কারণে আমরা ফলগুলো বাজারজাত করতে পারছি না।’
নদী বন্দর / বিএফ