টানা বৃষ্টিতে যেন প্রাণের ছোঁয়া পেয়েছে শীতলক্ষ্যা নদী। নারায়ণগঞ্জের মূল শহরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া এই নদীতে টলটল করছে স্বচ্ছ পানি। স্বাভাবিক ধারায় ফিরেছে নদীর স্রোত। নদী যেন ফিরে গেছে তার পুরোনো চেহারায়।
কিন্তু স্থানীয়রা বলছেন, শুধুমাত্র বৃষ্টির সময়েই দেখা যাবে শীতলক্ষ্যার এই অপরূপ। এরপর নদী আবার হয়ে উঠবে শুষ্ক আর নিষ্প্রাণ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক সময় রূপ যৌবনে ভরপুর ছিল শীতলক্ষ্যা নদী। ধীরে ধীরে নদীর দুই পাড়ে গড়ে ওঠে কল-কারখানা। এসব কারখানার বিষাক্ত তরল বর্জ্য গিয়ে পড়ে নদীতে। এতে নাব্যতা হারাতে থাকে শীতলক্ষ্যা।
বছরের বেশিরভাগ সময়ই পানি কম থাকায় নদীর পরিস্থিতি হয়ে ওঠে নাজুক। স্বচ্ছ পানি পরিণত হয় ডাইংয়ের বিষাক্ত বর্জ্যে। থমকে যায় নদীর স্রোত আর পানি পচে বাতাসে ছড়ায় দুর্গন্ধ। সংকটে পড়ে জলজ প্রাণের অস্তিত্ব।
শীতলক্ষ্যার ৫ নম্বর খেয়াঘাট এলাকার মাঝি নজরুল জানান, এখানকার নদীর পানি দেখলেই মন ভালো লাগে। মনে হয় ডুব দেই। কিন্তু এই পানি বেশিদিন থাকবে না। কয়েকদিন পরই কল কারখানার বর্জ্যে পানি দুর্গন্ধ হয়ে যাবে। আলকাতরার মতো হয়ে যাবে পানি। তখন গন্ধে নৌকা চালানোই কষ্ট হয়ে যাবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ডাইং, প্রিন্টিং, কয়েল ও পেপার মিলসহ অন্যান্য কলকারখানার তরল বর্জ্যে ভয়ানকভাবে দূষিত হচ্ছে শীতলক্ষ্যা নদী। অপচনশীল পলিথিন, প্লাস্টিক ও নানাবিধ ময়লার নির্দ্বিধায় ফেলা হচ্ছে নদীতে।
এ বিষয়ে কল-কারখানা অধিদফতরের উপ মহাপরিদর্শক সৌমেন বড়ুয়া বলেন, নারায়ণগঞ্জে রেজিস্ট্রেশন আছে এমন কল-কারখানা ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান আছে তিন হাজার ৩০টি। এরমধ্যে ডাইং ও প্রিন্টিং কারখানা রয়েছে ১৩৮টি। কিন্তু রেজিস্ট্রেশন ছাড়াও অসংখ্য ডাইং, প্রিন্টিং, কয়েল ও পেপার মিল রয়েছে নদীর দু’পাড়ে। এসব প্রতিষ্ঠানের দূষিত বর্জ্য পরিশোধন ছাড়াই ফেলা হয় নদীতে। কিছু প্রতিষ্ঠান ইটিপি স্থাপন করলেও তা ব্যবহার করা হচ্ছে না।
নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদফতরের পরিদর্শক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, শীত মৌসুমেও কীভাবে পানি স্বচ্ছ রাখা যায় তা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বিভিন্ন পরিকল্পনা করে আগানো হচ্ছে। পরিবেশ দূষণকারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। কিন্তু অনেক সময় জরিমানা করলেও প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টে রিট করেন। তখন আর জরিমানা আদায় করা যায় না।
গ্রিন ফর পিস’র নির্বাহী পরিচালক এস এম আরিফ মিহির বলেন, বর্তমানে শীতলক্ষ্যার পানি দেখে মনে হচ্ছে যেন ছোটবেলার শীতলক্ষ্যা নদীকে দেখছি। একসময় এই নদীর পানি মানুষ পিপাসা মেটানোর জন্য পান করতো। দৈনন্দিন কাজের জন্য ব্যবহার করতো। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত দূষণের কারণে তা আর ভাবাই যায় না।
নদীতে দূষণ কমাতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
নদী বন্দর / জিকে