টি-টোয়েন্টি ম্যাচের ৪৮০টি বৈধ বলের মধ্যে শেষ ৪৭০টি বলের খেলা। ফল পেতে শেষ ১০ বলে প্রয়োজন ২৪ রান। উইকেটের দুই ব্যাটারই নতুন; একজন খেলেছেন ৩ বল আর অন্যজন মাত্র ২টি। এমতাবস্থায় বোলিং দলের পক্ষেই থাকবে বাজির দর।
কিন্তু উইকেটের দুই ব্যাটারের একজন যদি হন রবীন্দ্র জাদেজা, তাহলে ব্যাটিং দলের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যাবে না। যার প্রমাণ তিনি দিলেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে ম্যাচে। তার ৪ বলের জাদুতে প্রায় হারতে থাকা ম্যাচে শ্বাসরুদ্ধকর এক জয় পেয়েছে চেন্নাই।
আবুধাবিতে আগে ব্যাটিং করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৭১ রান করেছিল কলকাতা। জবাবে একদম শেষ বলে গিয়ে ২ উইকেট হাতে রেখে ম্যাচ জিতে নিয়েছে চেন্নাই। এ জয়ের সুবাদে দশ ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে উঠে গেছে তারা।
শেষ ১০ বলে যখন ২২ রানের প্রয়োজন, তখন বোলিংয়ে ছিলেন তখনও পর্যন্ত ৩.২ ওভারে মাত্র ২০ রান দেয়া প্রাসিদ কৃষ্ণা। তার স্পেলের শেষ চার বলে যথাক্রমে ৬, ৬, ৪ ও ৪ হাঁকিয়ে সমীকরণটা ছয় বলে ৪ রানে নামিয়ে আনেন জাদেজা।
তবে বাকি ছিলো শেষ ওভারের নাটকীয়তা। তখন পর্যন্ত ৩ ওভারে ৩৭ রান করা সুনিল নারিনকে শেষ ওভারের দায়িত্ব দেন কলকাতা অধিনায়ক ইয়ন মরগ্যান। শেষ ওভারের প্রথম বলেই স্যাম কুরানকে সাজঘরে পাঠান নারিন। পরের রান নিতে পারেননি শার্দুল ঠাকুর।
তৃতীয় বল ফাইন লেগে ঠেলে দিয়েই ৩ রান নিয়ে নেন শার্দুল ও জাদেজা। ফলে সমান হয়ে যায় দুই দলের স্কোর। কিন্তু চতুর্থ বলে রান করতে পারেননি জাদেজা, পঞ্চম বলে তাকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন নারিন। আউট হওয়ার আগে ৮ বলে ২২ রান করেন জাদেজা।
ম্যাচ গড়ায় শেষ বলের উত্তেজনায়। নারিনের লেন্থ বল হাঁটু গেড়ে মিড উইকেটের দিকে খেলেই দৌড়ে এক রান নিয়ে নেন দ্বীপক চাহার, নিশ্চিত হয়ে যায় কলকাতার জয়। নারিন ৩ উইকেট নিলেও, খরচ করেন ৪১ রান।
কলকাতার করা ১৭১ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে টপঅর্ডারের কাছ থেকে চাহিদামাফিক ব্যাটিংই পেয়েছে চেন্নাই। দুই ওপেনার রুতুরাজ গাইকদ (২৮ বলে ৪০) ও ফাফ ডু প্লেসি (৩০ বলে ৪৩) খেলেন চল্লিশোর্ধ্ব ইনিংস। তিনে নামা মঈন আলির ব্যাট থেকে আসে ৩২ রান।
এমন দারুণ শুরুর পর মিডল অর্ডারে হতাশ করেন আম্বাতি রাইডু (৯ বলে ১০), সুরেশ রায়না (৭ বলে ১১) ও মহেন্দ্র সিং ধোনিরা (৪ বলে ১)। এরপরই সেই ৪ বলের জাদু দেখান জাদেজা। যার সুবাদে শীর্ষে উঠে যায় চেন্নাই।
এর আগে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন কলকাতার অধিনায়ক মরগ্যান। ব্যাট করতে নেমে শুরুতে ঝড় তোলেন রাহুল ত্রিপাঠি আর ফিনিশিংটা দেন দীনেশ কার্তিক। এ দুজনের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৭১ রান করে কলকাতা।
কলকাতাকে লড়াকু সংগ্রহ এনে দেয়ার পথে সর্বোচ্চ ৪৫ রান করেন তিন নম্বরে নামা রাহুল ত্রিপাঠি। তার ৩৩ বলের ইনিংসে ছিলো ৪ চার ও ১ ছয়ের নাম। এর আগে দুই ওপেনার ভেংকটেশ আইয়ার (১৫ বলে ১৮) ও শুবমান গিল (৫ বলে ৯) তেমন কিছু করতে পারেননি।
ত্রিপাঠির অমন ব্যাটিংয়ের পরেও মিডল অর্ডারে নামা অধিনায়ক ইয়ন মরগ্যান ব্যর্থতা (১৪ বলে ৮) পরিচয় দেন। বেশি কিছু করতে পারেননি মারকুটে অলরাউন্ডার আন্দ্রে রাসেলও। তার ব্যাট থেকে আসে ১৫ বলে ২০ রান।
তবে ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে নিতিশ রানাকে সঙ্গে নিয়ে ঝড় তোলেন দীনেশ কার্তিক। এই জুটিতে আসে ১৮ বলে ৩৯ রান। যেখানে কার্তিকের অবদান ৩ চার ও ১ ছয়ের মারে মাত্র ১১ বলে ২৬ রান। ইনিংসের শেষ ওভারে আউট হন কার্তিক।
শেষ ওভারের শেষ বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দলীয় সংগ্রহ ১৭১ রানে পৌঁছে দেন রানা। তিনি অপরাজিত থাকেন ২৭ বলে ৩৭ রান করে। চেন্নাইয়ের পক্ষে ২টি করে উইকেট নেন শার্দুল ঠাকুর ও জস হ্যাজলউড। এই ম্যাচের একমাত্র পরিবর্তিত খেলোয়াড় স্যাম কুরান ৪ ওভারে দিয়েছেন ৫৬ রান।
নদী বন্দর / পিকে