1. badsha.dru@gmail.com : admi2017 :
  2. nadibandar2020@gmail.com : Nadi Bandar : Nadi Bandar
হারিয়ে যাচ্ছে ফরিদপুরের ধানের গোলা - Nadibandar.com
বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৫৫ পূর্বাহ্ন
নদী বন্দর প্রতিনিধি:
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২১
  • ১৮২ বার পঠিত

বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে ফরিদপুরের ধানের গোলা। একসময় গ্রামাঞ্চলে কৃষকদের বাড়িতে এরকম ধানের গোলার প্রচলন ছিল। গোলাভরা ধান ও পুকুর ভরা মাছ ছিল। জমিদারি প্রথা ও কৃষক পরিবারের বিভিন্ন ঐতিহ্যের মধ্যে ছিল এই ধানের গোলা।

এখন মাঠের পর মাঠ ধানক্ষেত থাকলেও কৃষকের বাড়িতে নেই ধান মজুদ করার জন্য বাঁশ-বেত দিয়ে তৈরি ঐতিহ্যবাহী ধানের গোলা। অথচ একসময় সমাজে মানুষের আভিজাত্য নির্ভর করতো কার কয়টি ধানের গোলা আছে এ হিসাব কষে। শুধু তাই নয়, কন্যা পাত্রস্থ করতেও বরপক্ষের লোকজন আগে দেখতো ধানের গোলা। নতুন প্রজন্মের কাছে এটা একটা ইতিহাস। শুধু রূপকথার গল্পের মতো। প্রবীণ ও পুরোনোদের কাছে এটি শুধু হারিয়ে যাওয়া একটি ঐতিহ্য।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রামবাংলার কৃষক পরিবারের সমৃদ্ধির প্রতীক ধানের গোলা এখন আর ফরিদপুরে কোথাও চোখে পড়ে না। তবে পুরো জেলার মধ্যে একটি মাত্র ধানের গোলা এখনও ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। সদর উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামে কৃষক অধীর কুমার বিশ্বাসের বাড়িতে এটি রয়েছে। তার মাঠের সব ধান এই গোলায়ই তিনি সংরক্ষণ করেন। পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে বাড়ির উঠানে এখনো তিনি এই ধানের গোলাটি যত্ন করে রেখেছেন। আগেকার দিনের মতো ব্যবহার করছেন।

অধীর কুমার বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, এককালে এ রকমের ধানের গোলা কৃষক ও সাধারণ পরিবারে ছিল। কিন্তু এখন আর কোথাও দেখা যায় না। ফরিদপুর জেলার মধ্যে আমার বাড়িতে একটি মাত্র ধানের গোলা আছে। এখন এর বয়স হয়েছে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ বছর। গোলাটিতে একশত মণেরও বেশি ধান রাখা যায়। আমার নিজের জমির যতো ধান হয়, রাখার উপযোগী করে তা এ গোলায়ই রাখি।

 

বাপ-দাদার আমল থেকে দেখে এসেছি। অনেক যত্ন করে ব্যবহার করা হয় এবং মাঝে মাঝে সংস্কার করে পুরোনো ঐতিহ্য টিকিয়ে রেখেছি। ধানের মৌসুমে ধান কেটে শুকিয়ে গোলায় রাখা হয়। প্রয়োজনের সময় গোলা থেকে ধান বের করে পুনরায় রোদে শুকিয়ে ভাঙানো হয়।

অধীর কুমার বলেন, আগেরকার সময় নামকরা গৃহস্থ বলতে মাঠভরা বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত, গোয়াল ভরা গরু, পুকুর ভরা মাছ আর কৃষকের গোলা ভরা ধানকেই বোঝাত। এখন আর আগের মতো কেউ এভাবে ধান রাখে না। বস্তায় করে গোডাউন অথবা ঘরের মধ্যে রেখে দেন।

তিনি আরও বলেন, প্রথমে বাঁশ-কঞ্চি দিয়ে গোল আকৃতির কাঠামো তৈরি করা হয়। এঁটেল মাটির কাদা তৈরি করে ভেতরে ও বাইরে আস্তরণ লাগিয়ে উপরে টিনের চালা দিয়ে বিশেষ উপায়ে তৈরি করা এই ধানের গোলা। প্রবেশপথ বেশ উপরে, যেন চোর বা ডাকাত সহজে ধান নিতে না পারে। এ ধরনের ধানের গোলায় ইঁদুর ঢুকেও ক্ষতি করতে পারে না। গোলায় শুকানো ভেজা ধানের চাল শক্ত হয়। তখনকার কৃষকদের কাছে এটিই ছিল ধান রাখার আদর্শ পদ্ধতি।

উপজেলা সদরের সদরদি গ্রামের বাসিন্দা মো. সজীব মোল্লা। তিনি ফরিদপুর সিটি পেজের মডারেটর হিসেবে জেলার বিভিন্ন স্থানে বিচরণ করেন। কিন্তু এর আগে কখনো তিনি ধানের গোলা দেখেননি। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আমার গ্রামের পাশেই কৃষ্ণনগর গ্রামে পুরোনো ঐতিহ্যবাহী একটি মাত্র ধানের গোলা আছে। কিন্তু এর আগে এটি সম্পর্কে জানিনি।

মধুখালী উপজেলার মেকচামী ইউনিয়নের বামুন্দী গ্রামের বাসিন্দা ও প্রবীণ শিক্ষক প্রভাষ মণ্ডল জানান, এখন আর গোলার প্রচলন বা কদর কোনোটাই নেই। এখন এটি চোখেও পড়ে না। ড্রাম কিংবা বস্তায়ই ধান রাখা হয়।

 

বোয়ালমারী উপজেলা সদর এলাকার বাসিন্দা, সাংস্কৃতিক কর্মী আমীর চারু, সুমন খানসহ অনেকেই জানান, এখন আর এসব চোখে পড়ে না। একেবারেই বিলুপ্তির পথে। গোলা নির্মাণ করার জন্য বিভিন্ন এলাকায় আগে দক্ষ শ্রমিক ছিল। এখন এই পেশাটিও হরিয়ে গেছে।

কবি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কাজী হাসান ফিরোজ ও সমর চক্রবর্তী বলেন, বাপ-দাদার আমল থেকে দেখেছি ও শুনেছি গোলায় ধান রাখা কৃষকের জন্য খুবই ভালো। কিন্তু এগুলো আমাদের সমাজ থেকে হারিয়ে গেছে। অন্য জেলায় কিছু কিছু দেখা গেলেও আমার জানা মতে ফরিদপুরে নেই। গোলাগুলো একসময় আমাদের পরিবারের ঐতিহ্য বহন করতো।

সালথা উপজেলা যদুনন্দীর গোপীনাথপুর গ্রামের নরেন্দ্র নাথ মজুমদার ও সদরপুর, নগরকান্দা, ভাঙ্গা এলাকার প্রবীণরা জানান, আগেরকার দিনে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই এ ধরনের ধানের গোলা থাকত। নাতি-নাতনিদের কাছে বললে তারা এখন বিশ্বাসও করতে চায় না। কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে গ্রামীণ ঐতিহ্য ধানের গোলা।বর্তমানে রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও আধুনিক কালের কলের নাঙলে ওলট-পালট করে দিয়েছে গ্রামাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী সেসব চালচ্চিত্র। শুধু ধানের গোলা নয়, ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য, কৃষ্টি, সভ্যতা ও সংস্কৃতি।

এ প্রসঙ্গে ফরিদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. হযরত আলী বলেন, কালের বিবর্তনে আজ বিলুপ্ত। আশির দশকের দিকে ওইসব ধানের গোলা কৃষক ও সাধারণ মানুষ ব্যবহার করতো। আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে মানুষের পারিবারিক ব্যবহার্য উপকরণে।

ফলে ঐতিহ্যবাহী এসব ধানের গোলার জায়গা দখল করে নিয়েছে পাটের বস্তা। এগুলো তৈরি ঝামেলামুক্ত ও সহজে বাজারে পাওয়া যায় বলে মানুষ বাঁশের গোলার পরিবর্তে এসব আধুনিক উপকরণ ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে হারিয়ে গেছে বাঁশের গোলার কদর। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তালিকায় এর অবস্থান শূন্য বলে তিনি জানান।

নদী বন্দর / এমকে

 

 

 

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 Nadibandar.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com