বঙ্গদেশে শীত নামলেই দেখা মেলে পরিযায়ী পাখির। রাশিয়া, সাইবেরিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসে তারা। এসব যাযাবর পাখি প্রতি বছর খাবার, প্রজনন ও বাসস্থানের সন্ধানে সুদূর পথ পাড়ি দিয়ে ঢাকা চিড়িয়াখানা লেক, মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যাললের ঝিলসহ দেশের বিভিন্ন হাওরে ঘাঁটি গাড়ে।
তবে এবছর শীতের তীব্রতা বাড়লেও এখনো ঢাকা চিড়িয়াখানার লেকে পরিযায়ী পাখির দেখা মেলেনি। চিড়িয়াখানার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জানুয়ারির মাঝামাঝি দেখা মিলতে পারে পরিযায়ী পাখির।
রোববার (২ জানুয়ারি) সরেজমিনে জাতীয় চিড়িয়াখানা ঘুরে দেখা গেছে, স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রাণীরা ঘোরাফেরা করছে। তাদের শীত থেকে বাঁচাতে খাঁচায় খড় ও পাটের চট দেওয়া হয়েছে বলে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক জানিয়েছেন।
সাধারণ, বরফ শুভ্র হিমালয় ও হিমালয়ের ওপাশ থেকেই বেশিরভাগ পরিযায়ী পাখির আগমন ঘটে বাংলাদেশে। খাবার, থাকা ও বাসা বানানোর সন্ধানেই এসব পাখি এক দেশ থেকে অন্য দেশে পাড়ি জমায়।
রোববার ছিল চিড়িয়াখানার সাপ্তাহিক বন্ধের দিন। তবে এদিনও দর্শনার্থীদের উপস্থিতি চোখে পড়ে। গত বছর মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে জানুয়ারি মাসের প্রথম রোববার চিড়িয়াখানায় প্রবেশে কোনো টিকিট লাগেনি। এবারও দর্শনার্থীরা বছরের প্রথম রোববার চিড়িয়াখানায় এসেছিলেন। তবে তাদের ফিরে যেতে হয়েছে মূল ফটকের বাইরে থেকেই। দর্শনার্থীরা বলছেন, আগে থেকে বিষয়টি জানানো হলে তাদের এমন বিড়ম্বনা পোহাতে হতো না।
রাজধানীর শনির আখড়া থেকে চিড়িয়াখানায় ঘুরতে আসা কাপড় ব্যবসায়ী সামিউল জানান, ১ হাজার ২০০ টাকা খরচ করে এলাম। এসে দেখি চিড়িয়াখানা বন্ধ। এটা আগে থেকেই জানানো উচিত ছিল।
সংশ্লিষ্টরা জানান, শীতের শুরু থেকেই দর্শনার্থী বেড়েছে। চিড়িয়াখানায় গাছপালা বেশি থাকায় এখানে শীতও বেশি। তবে শীতের প্রকোপ থেকে প্রাণীদের সুরক্ষিত রাখতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, পরিচ্ছন্নকর্মীরা কাজ করছেন। বাঘ, সিংহ, ঘোড়া, জিরাফেরা নিজ নিজ খাঁচায় নির্ভার ঘোরাফেরা করছে।
জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক ডা. মো. আব্দুল লতিফ বলেন, শীতে পশু-পাখির তেমন কোনো ঠান্ডাজনিত সমস্যা দেখা যায়নি। শীতের শুরু থেকেই প্রতি বছরের মতো এবার পশুপাখির যেন ঠান্ডার সমস্যা না হয়, সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, রোববার চিড়িয়াখানা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ চলে। শীতে সুরক্ষা দিতে বাঘ, সিংহের খাঁচায় মোটা বালু দেওয়া হয়েছে। বানর, ময়ূর ও অন্যান্য পাখি যাদের শীতে ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা বেশি, সেইসব পশু-পাখির খাঁচা রাতের বেলায় পাটের চট দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। আবার সকালে চট সরিয়ে নেওয়া হয়। বড় প্রাণীদের খাঁচায় খড় বিছানো হয়েছে, যাতে তাদের শীত কম লাগে।
চিড়িয়াখানার কর্মকর্তা সারোয়ার রনি জানান, গত বছর জন্ম নেওয়া জিরাফ শাবকসহ অন্য প্রাণীরা ভালো আছে। তারা খাওয়া-দাওয়াও করছে ঠিক মতোই।
এদিকে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব, বন বিভাগ এবং প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক জোট আইইউসিএনের যৌথ জরিপে দেখা গেছে, দেশে গত বছরের তুলনায় এবার প্রায় ২০ হাজার পরিযায়ী পাখি কম এসেছে। বাংলাদেশের প্রধান জলাভূমিতে এ বছর সব মিলিয়ে ১ লাখ ২৫ হাজার পরিযায়ী পাখি এসেছে। গত বছর প্রায় ১ লাখ ৪৫ হাজার পাখি এসেছিল।