কাশ্মীরি কুল চাষ করে স্বাবলম্বী হলেন ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের এক যুবক। তার নাম সুবীর হালদার। প্রাথমিকভাবে ইউটিউব দেখে এই কাশ্মীরি কুল চাষ করার কথা ভাবতে শুরু করেন ৩০ বছর বয়সী এই যুবক। পরে সেই অনুযায়ী চাষ করে ফলও লাভ করেন।
কাশ্মীরি কুল চাষ করে বর্তমানে সুবীরের মাসিক আয় প্রায় ৫০ হাজার রুপি তো হবেই। হিসেব করে বলতে না পারলেও তিনি জানান, বর্তমানে তিনি দৈনিক প্রায় ৮ থেকে ১০ কেজি করে কাশ্মীরি কুল বিক্রি করছেন স্থানীয় বাজারে। ২০০ টাকা কেজি দরে এগুলিকে বিক্রি করায় সুস্বাদু এই ফলের চাহিদাও বেশ ভালোই রয়েছে এখন।
এমনিতে ত্রিপুরা রাজ্যের কোথাও ২০০ রুপির নিচে সাধারণ মানের কুলও মিলছে না। এদিক থেকে একই দরে কাশ্মীরি কুল মিলছে দেখে ক্রেতাদের পছন্দ এবং চাহিদা এখন সে দিকেই। স্থানীয় বাজারগুলোতে কাশ্মীরি কুলের কদর বাড়ছে দেখে সুবিরবাবুও চাইছিলেন তার এই ব্যবসা ছড়িয়ে দেবেন অন্যত্র। কিন্তু জমির পরিমাণ সীমিত হওয়ায় তা আর সম্ভব করতে পারছেন না তিনি।
ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত তেলিয়ামুড়া আর ডি ব্লক। এই ব্লক এলাকারই উত্তর কৃষ্ণপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় দুই কানি জমি রয়েছে সুবীরদের। আর তাতেই কাশ্মীরি কুল চাষ করেন তিনি। সীমিত পরিমাণ জমির কারণে ফলন বাড়াতে না পারলেও এখন আবার সেখানে এই কাশ্মীরি কুলের নার্সারিও করতে শুরু করেন তিনি।
কথাপ্রসঙ্গে সুবীর জানান, মূলত আত্মনির্ভরতার স্বপ্নই সফলতা এনে দিয়েছে তাকে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের আত্মনির্ভর ত্রিপুরা গড়ার যে শ্লোগান, তাতেও উদ্বুদ্ধ হন তিনি। পরে ইউটিউব সার্চ করে এই কাশ্মীরি কুল সম্পর্কে নানা তথ্য এবং অভিজ্ঞতাও অর্জন করেন।
২০১৯ সালের শুরুর দিকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে কাশ্মীরি কুলের বেশ কিছু চারা গাছ সংগ্রহ করেন সুবীর। এরপর দুই কানি জমিতে সেই চারাগাছগুলো লাগিয়ে যত্ন করতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে সেই জমিটি কাশ্মীরি কুল বাগানেই পরিণত হয়। ২০২১ সালে দুই বছরের মাথায় সামান্য কিছু ফলন দিলেও এবছর বাগানে ঢুকতেই চোখে পড়লো সেই লাল খয়েরি রঙের সুস্বাদু কাশ্মীরি কুল।
ঝুড়ি হাতে কুল কুড়োতে কুড়োতে আত্মনির্ভর কৃষ্ণপুরের এই যুবক জানান, তিনি শুধু নিজেই আত্মনির্ভর নন এখন। অন্যকেও আত্মনির্ভর হতে উৎসাহী করে তুলছেন তেলিয়ামুড়ার এই প্রান্তিক কৃষক সুবীর হালদার।
তিনি মনে করেন, শুধুমাত্র সরকারি চাকরির পেছনে না ছুটে কিভাবে নিজে থেকেই আত্মনির্ভর হওয়া যায় তা জানতে ইউটিউব সার্চ করতে থাকুন। দেখবেন, একদিন আপনিও আত্মনির্ভরতার পথ খুঁজে পাবেন। তিনি বলেন, ইচ্ছে এবং চেষ্টা এই দুটি জিনিস থাকলে তবেই সফলতা আসে জীবনে।
সুবীর আরও বলেন, রাজ্যের বেকার তরুণ-তরুণীরা এখনো মাথা থেকে সরকারি চাকরির ভূত সরাতে পারছে না। যে কারণে না পারছে কোনো ব্যবসা-বাণিজ্যের দিক থেকে এগিয়ে যেতে, না পাচ্ছে সরকারি চাকরি। আত্মনির্ভর তো দূরে থাক, এভাবে তাদের মধ্যে মানসিক অবসাদ চলে আসে বলেই মনে করেন তিনি।
কুল চাষে যারা আগ্রহী তাদেরকে তিনি এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানান। ইতোমধ্যে সুবীর তার জমিতে কাশ্মীরি কুলের নার্সারি প্রতিষ্ঠা করে রাজ্যের অন্যান্য জায়গায়ও বিক্রি করতে শুরু করেছেন এই কুলের চারা। তার কথায়, সামান্য কিছু জমি থাকলে আপনিও এই কাশ্মীরি কুল চাষের মাধ্যমে নিজেকে আত্মনির্ভর করে গড়ে তুলতে পারেন।
নদী বন্দর / পিকে