টপ অর্ডার ব্যাটারদের বার বার ব্যর্থতার পরও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে লড়াই করতে চায় বাংলাদেশ। শুক্রবার সেন্ট লুসিয়ার ড্যারেন সামি জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হবে ম্যাচটি।
বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় শুরু হওয়া ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে দেশের একমাত্র বেসরকারি ক্রীড়া চ্যানেল টি-স্পোর্টস।
সিরিজের প্রথম টেস্টে সফরকারীরা ৭ উইকেটে পরাজিত হয়। ওই ম্যাচেও যথারিতি চরমভাবে ব্যর্থ ছিল বাংলাদেশ দলের টপ অর্ডার। এই ব্যর্থতার কারণে মাত্র ১০৩ রানে গুটিয়ে যায় টাইগারদের প্রথম ইনিংস। টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে তৃতীয়বারের মতো নেতৃত্ব শুরু করা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান বলেছেন, ওই পরাজয়ের মূল কারণ ছিল টপ অর্ডারের ব্যাটিং বিপর্যয়। মাত্র ৪৫ রানের মধ্যে ৬ উইকেট হারানোটা সত্যিই বেদনাদায়ক।
টপ অর্ডার ব্যাটারদের ব্যর্থতা বাংলাদেশ দলের জন্য এখন নিয়মিত সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজেদের ত্রুটিগুলো দূর করার কোনো উপায়ই যেন খুঁজে পাচ্ছেন না তারা। দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বশেষ ৫টি টেস্টে নিয়মিতই ব্যাটিং বিপর্যয়ের শিকার হয়েছে বাংলাদেশ। তা হয় প্রথম ইনিংসে, না হয় দ্বিতীয় ইনিংসে। ফলে পরাজয়ের লজ্জা মাথা পেতে নিতে হয়েছে দলটিকে।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশ দলের দুই দফা ব্যাটিং বিপর্যয় ঘটেছে টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে। প্রথম টেস্টে ৫৩ ও দ্বিতীয় টেস্টে ৮০ রানে গুটিয়ে যায় টাইগার ইনিংস।
এদিকে ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কা বিপক্ষে প্রথম টেস্টে টপ অর্ডারের ভালো ব্যাটিং চাপে ফেলে দিয়েছিল সফরকারীদের। শেষ পর্যন্ত ড্র হয় ম্যাচটি। কিন্তু দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ভেঙ্গে পড়ে টপ অর্ডার। যাতে মাত্র ২৪ রানেই হারিয়ে ফেলে ৫টি উইকেট। শেষ পর্যন্ত সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি দল, হার মানে ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়েও প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে টপ অর্ডার। যার ফলে আরো একটি পরাজয় মাথা পেতে নিতে হয় সফরকারীদের। বারবার এমন ব্যর্থতায় বাংলাদেশ এখন বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এ ম্যাচেও হারলে বাংলাদেশ যে শুধু আরো একবার পরাজয়ের লজ্জায় ডুববে, তাই নয়, টেস্ট ক্রিকেটে শততম পরাজয়ের স্বাদও পেতে হবে তাদেরকে।
এ পর্যন্ত ১৩৩টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। যার মধ্যে জয় মাত্র ১৬টি। পরাজয় লেখা হয়েছে ৯৯টি ম্যাচে। বাকী ১৮টি ম্যাচ ড্র হয়েছে। অধিকাংশ ড্র’ই অবশ্য বৃষ্টির কল্যাণে হয়েছে।
তবে দ্বিতীয় টেস্টের ভেন্যু সেন্ট লুসিয়া এমন একটি জায়গা, যে মাঠে প্রথমবারের মতো প্রতিপক্ষের ওপর আধিপত্য বিস্তার করেছিল বাংলাদেশ। যদিও শেষ পর্যন্ত ড্র হয়েছিল ম্যাচটি।
২০০৪ সালের স্মরণীয় ওই ম্যাচে বাংলাদেশ দলের হয়ে সেঞ্চুরি করেছিলেন হাবিবুল বাশার সুমন, খালেদ মাসুদ পাইলট ও মোহাম্মদ রফিক। ম্যাচটি জয়ের দ্বারপ্রান্তেই নিয়ে গিয়েছিলেন তারা। যদিও শেষ পর্যন্ত ড্রয়ের মাধ্যমে হাফ ছেড়ে বাঁচে স্বাগতিক ক্যারিবীয়রা।
এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া বাংলাদেশ কি সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারবে? এই প্রশ্নটিই অনুরাগীদের এখন ম্যাচটির প্রতি আগ্রহী করে তুলছে।
অ্যান্টিগা টেস্টে টপ অর্ডারের বিপর্যয়ের মাসুল দেয়ার পরও সেখানে কিছু ইতিবাচক দিক ছিল। বিশেষ করে পেসারদের পারফরমেন্স ছিল চোখে পড়ার মতো। টপ অর্ডারে এক অথবা দুইজন ব্যাটার দাঁড়িয়ে যেতে পারলে ম্যাচটি হয়তো বা জিততেও পারতো বাংলাদেশ।
সুতরাং প্রথম টেস্টের পর সাকিবের দেয়া ইঙ্গিতটিই হবে প্রথম ও প্রধান বিষয়। সাকিব বলেন, ‘আমাদেরকে সর্ব প্রথম নিজেদেরকেই আরো ভালোভাবে মেলে ধরতে হবে। মধ্যাহ্ন বিরতির আগেই ছয় উইকেট হারিয়ে ফেলাটা কোনভাবেই ভালো কিছু নয়। প্রথম ওই সেশনটিই আমাদের একেবারেই শেষ করে দিয়েছে। আমরা এতো বেশী বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিলাম, যেখান থেকে বোলারদের আর কিছু করার ছিল না। অথচ বোলাররা সবাই আন্তরকিতার সঙ্গে বল করে গেছেন।’
এ পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৯টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। যার মধ্যে জয় পেয়েছে মাত্র ৪টিতে। হেরেছে ১৩টি ম্যাচে। বাকী দুটি ম্যাচ ড্র হয়েছে।
এদিকে টাইগার শিবিরের বড় চিন্তা মোমিনুল হকের ব্যাটিং। নির্ভরযোগ্য ওই ব্যাটার টানা নয় ইনিংসেই দুই অঙ্কের কোটা স্পর্শ করতে পারেননি। প্রথম টেস্টে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে দুই ইনিংস থেকে তার সংগ্রহ ছিল যথাক্রমে শুন্য ও ৪ রান।
মোমিনুল ইচ্ছে করলে বিরতি নিতে পারেন বলেও মন্তব্য করেছেন সাকিব। তবে সাকিবের ধারনার সঙ্গে একমত হয়ে টিম ম্যানেজমেন্ট সাবেক টেস্ট অধিনায়ককে আসন্ন ম্যাচের বাইরে রাখবেন কিনা- সেটি এখনো পর্যন্ত জানা যায়নি।
ইতোমধ্যে অবশ্য দ্বিতীয় টেস্টের স্কোয়াডের জন্য ব্যাটার এনামুল হক বিজয় ও পেসার শরিফুল ইসলামকে ডেকে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। ম্যানেজমেন্ট ইচ্ছে করলে সিরিজের দ্বিতীয় ও গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে পরিবর্তন এনে একাদশ সাজাতে পারে।
সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ নাজমুল হোসাইন শান্তর পরিবর্তে এনামুল হক বিজয়কে সুযোগ দিতে পারে টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে রিজার্ভ বেঞ্চে ঘাটতির কারণে মোমিনুল হক হয়তো আরেকটি সুযোগ পেতেই পারেন। এছাড়া মুস্তাফিজুর রহমানের স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন তরুণ বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম।
অন্যদিকে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ তাদের লাইন আপ পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম।
বাংলাদেশ একাদশ (সম্ভাব্য):
তামিম ইকবাল, মাহমুদুল হাসান জয়, এনামুল হক বিজয়, মোমিনুল হক, লিটন দাস, সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), নুরুল হাসান সোহান (উইকেটকিপার), মেহেদি হাসান মিরাজ, এবাদত হোসাইন, খালেদ আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ একাদশ (সম্ভাব্য):
ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট (অধিনায়ক), জন ক্যাম্পবেল, রেমন রেইফার, এনক্রুমাহ বোনার, জারমেইন ব্ল্যাকউড, কাইল মায়ার্স, জশুয়া ডি সিলভা (উইকেটকিপার), আলজারি জোসেফ, কেমার রোচ, গুডাকেশ মোতি, জেইডেন সিলেস।
নদী বন্দর/এসএফ