ফরিদপুরের সালথা উপজেলার শেষ সীমানায় অবস্থিত চাঁপাই বিলে ফুটেছে গোলাপি রঙের হাজারো দৃষ্টিনন্দন পদ্ম ফুল। ফুলগুলো দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছে শত শত দর্শনার্থী।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বর্ষা মৌসুমের প্রথম দিকে বিলের দুই পাশ দিয়ে ফসলি জমিতে থাকা পাট ও ধানের সবুজ পাতা যখন দোল খেতে শুরু করে, তখন বিলের পানির নিচ থেকে বেড়ে উঠতে থাকে সবুজ রঙের পদ্ম ফুলের গাছ। এরপর ধীরে ধীরে পানির ওপর বড় হতে থাকে থালার মতো গোলাকার পদ্মের সবুজ পাতা।
এ সময় পুরো চাঁপাই বিল এলাকাই সবুজ রঙে রাঙিয়ে থাকে। পরে সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে থাকা লম্বা ডগার ওপর ফোটে গোলাপি রঙের হাজারো পদ্ম ফুল।
অসংখ্য পাপড়ির চমৎকার বিন্যাসে সজ্জিত একেকটি পদ্ম যেমনি সুগন্ধি ছড়াচ্ছে, তেমনি খুব সহজেই যেকোনো মানুষের হৃদয় কেড়ে নিচ্ছে। পদ্মের শোভা এখন মুগ্ধ করছে সবাইকে।
জানা গেছে, প্রায় ৩০০ একর জায়গা জুড়ে এই বিল। সালথা উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের বিল ভাবুকদিয়া গ্রামের মধ্যে বিলের একটি অংশের অবস্থান। বিলের আরেকটি অংশের অবস্থান ফরিদপুর সদর উপজেলার কানাইপুর ইউনিয়নের রনকাইল গ্রামের মধ্যে। আদিযুগ থেকে স্থানীয়রা এটাকে চাঁপাই বিল নামে চিনে। তবে এখন অনেকে এটাকে পদ্ম বিল নামে ডাকে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রকৃতির মোহনীয় এই সৌন্দর্য এক নজর দেখতে আসছেন শত শত দর্শনার্থী। তারা পরিবার-পরিজন ও বন্ধু-বান্ধব নিয়ে বিলের মধ্যে নৌকায় করে ঘুরে পদ্মের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। আবার কেউ কেউ পদ্ম ফুল ও পাতার সঙ্গে নানা ভঙ্গিতে ক্যামেরা বন্দি হচ্ছেন। কেউবা টিকটক ভিডিও তৈরি করে ও ছবি তুলে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। কেউ আবার নৌকায় বসে বাঁশি বাজিয়ে ও গান গেয়ে দর্শনার্থীদের আনন্দ দিচ্ছেন।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, গেল বছরগুলোতে চাঁপাই বিলটি পানিতে ভরে থাকত। দেশীয় মাছও পাওয়া যেত প্রচুর। তখন তেমন পদ্ম ফুল ফুটত না। এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে পানি কম হলেও পুরো বিলে ফুটেছে পদ্ম ফুল। আর তা দেখতে দিন যাচ্ছে আর বাড়ছে দর্শনার্থীদের ভিড়।
শুধু ফরিদপুর জেলা নয়, আশপাশের জেলা ও উপজেলা থেকেও শত শত মানুষ পদ্ম ফুলের এই দৃশ্য দেখতে আসেন। ভ্রমণ পিপাসুদের এই সমাগমে এলাকাবাসীও আনন্দিত। তবে কয়েকজন দর্শনার্থী নৌকায় ঘুরে ঘুরে বিলের মধ্যে থেকে ফুটন্ত পদ্ম ফুলগুলো ছিড়ে নিয়ে যাচ্ছে। এতে বিলের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে।
এদিকে পর্যটকদের কারণে স্থানীয়দের বাড়তি আয়ের ব্যবস্থা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন নৌকার মাঝি। তারা পর্যটকদের নৌকায় করে বিল ঘুরিয়ে অর্থ উপার্জন করতে পারছেন।
বিলে ঘুরতে আসা লাবনী আক্তার বলেন, ফেসবুকে ছবি দেখে ঘুরতে এসেছি। অসম্ভব সুন্দর পদ্ম বিলের চিত্র। সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি। যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না।
হারুন আর রশিদ নামের এক পর্যটক বলেন, ফরিদপুরে বিনোদনের মতো তেমন জায়গা নেই। তাই তো অবসর সময়ে চাঁপাই বিলে পদ্ম ফুল দেখতে এলাম। এখানে এসে খুব ভালো লাগছে। তবে এখানে ভ্রমণ পিপাসুদের বসার জন্য কিছু বেঞ্চের ব্যবস্থা করলে বেশ ভালো হতো। এ ছাড়া এখানে কোনো শৌচাগারও নেই। তাই ভ্রমণ পিপাসুদের কথা মাথায় রেখে শৌচাগারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
সালথার গট্টি ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, বিলটির একটি অংশ আমাদের গট্টি ইউনিয়নের বিল ভাবুকদিয়া গ্রামের মধ্যে। আরেকটি অংশ জেলা সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের রনকাইল গ্রামের মধ্যে। তাই উভয় ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগে বিলের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে হবে। আমি ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে দর্শনার্থীদের সুযোগ-সুবিধার জন্য কাজ করার চেষ্টা করব।
কানাইপুর ইউপি চেয়ারম্যান ফকির মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, পর্যটকদের সুবিধার কথা ভেবে একটি রাস্তা ও টিউবওয়েলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। চৌকিদার দিয়ে পর্যটকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আরো কিছু কাজ করা প্রয়োজন, যা আমাদের ইউনিয়নের পক্ষে সম্ভব না। যদি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও পর্যটন করপোরেশন এগিয়ে আসে তাহলে এখানে পরিকল্পিত পর্যটন এলাকা হতে পারে। কেননা এই বিলে বছরের ছয় মাসই পানি থাকে, সুযোগ সুবিধা থাকলে এই ছয় মাসই পর্যটক আসতে পারেন।
ঢাকা থেকে যেভাবে যাবেন : ঢাকার দর্শনার্থীদের গাবতলী থেকে সরাসরি গোন্ডেন লাইন বা যেকোনো বাসে করে প্রথমে ফরিদপুর বাস টার্মিনালে নামতে হবে। তারপর সেখান থেকে মাহিন্দ্রা বা বাসে করে কানাইপুর বাজারে আসতে হবে। সেখান থেকে অটোরিকশা বা ভ্যানে রনকাইল বাজারের ভেতর দিয়ে চাঁপাই বিলের পারে গিয়ে নামতে হবে।
অন্যদিকে ফরিদপুর থেকে মাহিন্দ্রা বা বাসে করে সালথা উপজেলার ঠেনঠেনিয়া বাজারে এসে নামতে হবে। সেখান থেকে অটোরিকশা বা ভ্যানে করে সরাসরি ভাবুকদিয়া গ্রামের ভেতর দিয়ে চাঁপাই বিল পারে এসে নামতে হবে। এতে ঢাকা থেকে চাঁপাই বিলে পদ্ম ফুল দেখতে আসতে প্রতিজন দর্শনার্থীর খরচ হবে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা।
প্রতিজন দর্শনার্থীর নৌকায় ঘুরতে প্রতি ঘণ্টায় ৫০ টাকা করে ভাড়া লাগে। আবার পরিবারসহ বা দল বেঁধে একটি নৌকা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় ভাড়া নিয়ে পুরো বিল ঘুরে দেখা যায়।
নদী বন্দর/এসএইচ