চীনের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াং জেমিন মারা গেছেন। স্থানীয় সময় বুধবার বেলা ১২টা ১৩ মিনিটে চীনের সাংহাই শহরে ৯৬ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন প্রবীণ এ রাজনীতিক। চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সিনহুয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
জিয়াং জেমিন দীর্ঘদিন ধরে লিউকেমিয়াসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন।
এদিকে, তার মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছে চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি। জিয়াংকে দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত কমিউনিস্ট যোদ্ধা হিসেবে উল্লেখ করেছে দলটি। তাছাড়া দেশটির পার্লামেন্ট, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকেও জিয়াংয়ের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়েছে।
প্রয়াত এ রাজনীতিকের প্রতি সম্মান জানিয়ে কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান অফিস, সরকারি সব দপ্তর, প্রতিটি চীনা দূতাবাস ও কনস্যুলেটে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে শি জিনপিং প্রশাসন।
১৯৮৯ সালে তিয়ানআনমেন ট্রাজেডির পর একপ্রকার অপ্রত্যাশিতভাবেই চীনের ক্ষমতায় আসেন জিয়াং। ১৩ বছর পর ২০০২ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট হু জিনতাওয়ের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন তিনি।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে জিয়াংয়ের সবচেয়ে আলোচিত কাজ হলো, চীনকে বৈশ্বিক কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতা থেকে বের করে নিয়ে আসা। এমনকি, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতেও আগ্রহ দেখান তিনি।
আরও বলা হয়, চীন যে নজিরবিহীন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তা জিয়াংয়ের শাসনামল থেকেই শুরু হয়েছে।
তার হাত ধরেই চীনে মুক্ত বাজারভিত্তিক অর্থনৈতিক সংস্কার, ১৯৯৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের হাত থেকে হংকংকে মুক্ত করা ও ২০০১ সালে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সদস্য হওয়ার মতো বৈপ্লবিক পরিবর্তন দেখেছে চীন।
বলা হয়, চীনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের উত্থানেও সহায়ক হিসেবে কাজ করেছেন জিয়াং। ২০১২ সালে ক্ষমতা নেওয়ার পর জিয়াংয়ের অর্থনৈতিক উদারীকরণ ও কঠোর রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের মিশ্রণেই চীন শাসন করছেন জিনপিং।
তবে জানা যায়, জিয়াংয়ের শাসনামলে বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে চীনের সম্পর্ক ভালো হলেও, দেশের ভেতরে বিরোধীদের ওপর ব্যাপক দমনপীড়ন চালানো হয়। মানবাধিকারকর্মী, শ্রম অধিকার ও গণতন্ত্রপন্থি কর্মীদের ব্যাপক নির্যাতন করা হয়।
অনেকের ধারণা, ২০০২ সালে হু জিনতাও চীনের ক্ষমতায় আসার পর জিয়াং আরও বেশি ক্ষমতাধর হয়ে ওঠেন। কারণ প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরে গেলেও বয়জ্যেষ্ঠ ও ক্ষমতাধর নেতা হিসেবে দলের কলকাঠি নাড়তেন তিনি। চীনে তিনি ঝাংঝে বা সিনিয়র হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
নদী বন্দর/এসএইচ