মিয়ানমারে সব ধরনের আর্থিক কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির বিভিন্ন ব্যাংক। সোমবার দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি এবং ইন্টারনেট সংযোগ দুর্বল হয়ে পড়ার পরেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
মিয়ানমার ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বর্তমান রাজনৈতি পরিস্থিতিতে ইন্টারনেট সেবা ব্যহত হওয়ায় দেশটির সব ব্যাংক তাদের সব ধরনের আর্থিক কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সব ব্যাংকের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ রাখার বিষয়ে মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি নেয়া হবে এবং কবে থেকে সব কার্যক্রম আবারও শুরু হবে সে বিষয়টি পরবর্তীতে জানিয়ে দেয়া হবে।
সোমবার সকালে এক বছরের জরুরি অবস্থা জারি করে ক্ষমতা গ্রহণ করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) প্রধান অং সান সু চি, দেশটির প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ বেশ কয়েকজনকে আটকের পর পরই জরুরি অবস্থা জারি করা হয়।
এনএলডির মুখপাত্র মিও নিয়ুন্ট জানিয়েছেন, সোমবার সকালে অভিযান চালিয়ে এসব নেতাকে আটক করা হয়েছে। গত নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফলকে জালিয়াতি বলে উল্লেখ করেই মূলত ক্ষমতা দখল করেছে সেনাবাহিনী। কমান্ডার-ইন-চিফ মিন অং হ্লেইংয়ের কাছে দেশের ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়েছে।
জরুরি অবস্থার মধ্যেই রাজধানী নাইপিদোতে মোবাইল ফোন ও রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এবং রেডিওর প্রচার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশন মায়াবতির সম্প্রচার চালু রয়েছে। সোমবার সেনাবাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণের বিষয়টি মায়াবতির মাধ্যমে সম্প্রচার করা হয়েছে। টেলিভিশনের এক বিবৃতিতে জানানো হয় যে, কমান্ডার-ইন-চিফ মিন অং হ্লেইং দেশের ক্ষমতা গ্রহণ করেছেন।
বিবৃতিতে আরও জানানো হয়েছে, গত ৮ নভেম্বরের বহুদলীয় সাধারণ নির্বাচনে যে ভোটার তালিকা ব্যবহার করা হয়েছে তাতে বেশ গড়মিল পাওয়া গেছে। এ বিষয়টির সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছে ইউনিয়ন নির্বাচন কমিশন।
ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভোটার তালিকা নিয়ে জালিয়াতি করা হয়েছে যার ফলে গণতন্ত্র নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে অস্বীকৃতি জানানো এবং উচ্চ ও নিম্নকক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে পার্লামেন্ট। সংবিধানের ৪১৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, অন্যায়ভাবে বলপ্রয়োগ করে ইউনিয়নের সার্বভৌমত্ব দখল করার চেষ্টা বোঝায় এবং এতে জাতীয় সংহতি নষ্ট হতে পারে।
নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনাস্থা তৈরি হওয়ায় মিয়ানমারের বিভিন্ন শহরে শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। নির্বাচনে অংশ নেয়া বিভিন্ন দল এবং লোকজনও পতাকা প্রদর্শনসহ বিভিন্ন ধরণের উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেছে যা জাতীয় সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
সেনাবাহিনী বলছে, এই সমস্যার সমাধান না হলে এটি গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করবে। আইন অনুযায়ী, এই সমস্যার অবশ্যই সমাধান করতে হবে। ২০০৮ সালের সংবিধানের ৪১৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ীই দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে সেনাবাহিনী। এক বছর ধরে জরুরি অবস্থা জারি থাকবে।
নদী বন্দর / জিকে