কোটার বিষয়ে মন্ত্রিসভায় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে সবকিছু করা হবে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। রোববার (১৪ জুলাই) দুপুরে তিনি এ কথা বলেন।
সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে বেতন স্কেলের নবম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত কোটাপদ্ধতি বাতিল করে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি সেই পরিপত্র বাতিল করে হাইকোর্ট। হাইকোর্টের রায়ের মূল অংশ প্রকাশ করা হয়েছে।
হাইকোর্টের রায়ে ২০১৮ সালের পরিপত্র বাতিল করে বলা হয়েছে, সরকার চাইলে কোটা বাড়াতে বা কমাতে পারবে। কোটা পূরণ না হলে সাধারণ মেধা তালিকা থেকে নিয়োগ দেওয়া যাবে।
পরিপত্র বাতিলের রায়ের পরই আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। কোটা সংস্কারের আন্দোলনে ঘোষিত এক দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আন্দোলনকারীরা সরকারি চাকরির সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লেখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম মাত্রায় এনে সংসদে আইন পাস করে কোটাপদ্ধতি সংস্কারের দাবি জানিয়েছে।
আন্দোলন রাজধানী ছাড়িয়ে দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীরা গত সপ্তাহের প্রায় প্রতিদিনই সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন। এতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের সীমা ছিল না। এরই মধ্যে হাইকোর্টের রায়ের ওপর এক মাসের স্থগিতাদেশও দিয়েছে আপিল বিভাগ।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও কোটা সংস্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘কোটা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হওয়ার আগে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাচ্ছি না। মন্ত্রিসভায় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে সবকিছু করা হবে।’
সাধারণত প্রতি সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠক হয়। প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে এ বৈঠকে মন্ত্রিসভার সদস্যরা উপস্থিত থাকেন। সম্প্রতিককালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েই মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়। সোমবার (১৫ জুলাই) মন্ত্রিসভা বৈঠক নেই বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জানা গেছে।
২০১৮ সালের ৪ অক্টোবরের আগে সরকারি চাকরিতে নবম থেকে ১৩তম গ্রেডে নিয়োগের সংরক্ষিত কোটা ছিল ৫৬ শতাংশ। বাকি ৪৪ শতাংশ নেয়া হয় মেধা যাচাইয়ের মাধ্যমে। বিসিএসে নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩০, জেলা কোটায় ১০, নারী কোটায় ১০ ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোটায় ৫ শতাংশ চাকরি সংরক্ষণ করা আছে। এই ৫৫ শতাংশ কোটায় পূরণযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেক্ষেত্রে ১ শতাংশ পদে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়োগের বিধান ছিল।
কিন্তু শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে এ কোটা বাতিল করে সরকার। এ পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট করেন চাকরিপ্রত্যাশী ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে পরিপত্রের পাশাপাশি এর আগে দেওয়া হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের আদেশ প্রতিপালন না করা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাপ্য অধিকারের প্রতি অবজ্ঞার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে গত ৫ জুন রায় দেন হাইকোর্ট। গত ১০ জুলাই কোটা নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের ওপর স্থিতাবস্থা দিয়েছে আপিল বিভাগ।
এরপরও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে তাদের আন্দোলন থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ জানানো হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের বক্তব্য আদালতে উপস্থাপনের অনুরোধও জানিয়েছেন মন্ত্রীরা।
এ পরিস্থিতিতে আন্দোলনের মধ্যে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সম্পৃক্ততার অভিযোগও তুলেছে ক্ষমতাসীনরা। কোটা নিয়ে আন্দোলনকে আর প্রশ্রয় দিতে চায় না সরকার। এরই মধ্যে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীদের বক্তব্যে সেটি উঠেও এসেছে।
নদী বন্দর/এসএইচ