চলতি বছরের শুরুর মাস জানুয়ারিতে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪২৭টি। এসব দুর্ঘটনায় ৪৮৪ জন নিহত ও ৬৭৩ জন আহত হয়েছেন। নিহতের মধ্যে আছেন ৯২ নারী ও ৪৭ শিশু। সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে।
আর নতুন বছরের প্রথম মাসে সারাদেশে ১৫৯টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ১৬৮ জন মারা গেছেন, যা মোট নিহতের ৩৪ শতাংশ। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে ৮৯টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১০৩ জন নিহত হয়েছিলেন। তুলনামূলক চিত্রে গত বছরের তুলনায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেড়েছে ৭৮ শতাংশ এবং প্রাণহানি বেড়েছে ৬৩ শতাংশ।
শনিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) গণমাধ্যমে প্রতিবেদনটি বিজ্ঞপ্তি আকারে পাঠানো হয়েছে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন সাতটি জাতীয় দৈনিক, পাঁচটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে বলে জানিয়েছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাবে, জানুয়ারিতে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪২৭টি। এসব দুর্ঘটনায় ৪৮৪ জন নিহত ও ৬৭৩ জন আহত হয়েছেন। নিহতের মধ্যে আছেন ৯২ নারী ও ৪৭ শিশু। একই সময়ে চারটি নৌদুর্ঘটনায় ৭ জন নিহত, ৪ জন আহত ও ৬ জন নিখোঁজ হয়েছেন। আর রেলপথে ১১টি দুর্ঘটনায় ১৪ জন নিহত ও ৬ জন আহত হয়েছেন।
মোটরসাইকেলের চালক নিহতের হার বেড়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জানুয়ারিতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৭ দশমিক ২৩ শতাংশ। সড়কে কিশোর-যুবকরা চরম বেপরোয়া হয়ে মোটরসাইকেল চালান। তারাই বেশি দুর্ঘটনায় শিকার। মোটরসাইকেল চালানোর ক্ষেত্রে ট্রাফিক আইনের প্রয়োগ ও নিয়মিত মনিটরিং নিশ্চিত না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাবে, ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। এ বিভাগে ১১২টি দুর্ঘটনায় ১২৮ জন নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ঘটেছে সিলেট বিভাগে। এই বিভাগে ৩২টি দুর্ঘটনায় ২৭ জন নিহত হয়েছেন। একক জেলা হিসেবে ঢাকা জেলায় সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ঢাকায় ৩১ দুর্ঘটনায় ৩৬ জন নিহত হয়েছেন। আর সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ঘটেছে ঝালকাঠি জেলায়। এ জেলায় দুটি দুর্ঘটনায় একজন নিহত হয়েছেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, জানুয়ারিতে সারাদেশে দুর্ঘটনায় ১৪৬ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ৩০ দশমিক ১৬ শতাংশ। আর যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৫৩ জন, যা ১০ দশমিক ৯৫ শতাংশ। দুর্ঘটনায় আক্রান্ত যানবাহনের সংখ্যা ৭১১। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার শিকার মোটরসাইকেল (১৬৪টি)। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছে ট্রাক (১১৯টি) ও বাস (৮৩টি)। এছাড়া ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-টেম্পো-লেগুনা-মিশুক সড়ক দুর্ঘটনায় পড়েছে ১৪৮টি।
ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাসহ সড়ক দুর্ঘটনায় ১০টি প্রধান কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলোর অন্যতম হলো চালকদের অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যান চলাচল, তরুণদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা ও বিআরটিএর সক্ষমতার ঘাটতি।
দক্ষচালক তৈরির উদ্যোগ বাড়ানো, চালকের বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করাসহ ১০টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে। সুপারিশগুলোর অন্যতমগুলো হলো ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করা, মহাসড়কে সার্ভিস লেন তৈরি করা, মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ এবং ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করা।
প্রতিবেদনের বিষয়ে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। শুধু বৈঠক, কমিটি গঠন এবং সুপারিশ তৈরির মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে পুরো উদ্যোগ। পরিস্থিতি বিবেচনায় গোটা পরিবহন খাত ঢেলে সাজানো জরুরি। জাতীয় স্বার্থেই সরকারকে এ বিষয়ে মনোযোগী হওয়া উচিত। এ জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা।
নদী বন্দর / পিকে