কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার ঘটনায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে তুমুল উত্তেজনা বিরাজ করছে। এর মধ্যেই, বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) রাতে জম্মু ও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা (LoC) বরাবর ভারত ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
ভারতের সেনাবাহিনীর বরাত দিয়ে এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানি সেনাদের পক্ষ থেকে প্রথমে ছোট অস্ত্রে গুলিবর্ষণ শুরু হয় এবং ভারতীয় বাহিনীও পাল্টা জবাব দেয়। তবে এতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এর আগে, গত মঙ্গলবার বিকেলে পেহেলগামের বৈসারণ উপত্যকায় সশস্ত্র হামলায় ২৬ জন নিহত হন। তাদের মধ্যে ২৫ জন ভারতীয় এবং একজন নেপালের নাগরিক। ওই হামলার পর ভারত দাবি করে—এটি পাকিস্তান থেকে পরিচালিত একটি জঙ্গিগোষ্ঠীর কাজ। তবে পাকিস্তান এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং হামলার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে জানিয়েছে।
হামলার পরপরই ভারত একাধিক কঠোর পদক্ষেপ নেয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— পাকিস্তানের সঙ্গে ছয় দশকের পুরনো সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত ঘোষণা, আটারি সীমান্ত বন্ধ, দিল্লিতে নিযুক্ত পাকিস্তানি সামরিক উপদেষ্টাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা, হাইকমিশনে কর্মী সংখ্যা কমিয়ে আনা এবং সব পাকিস্তানি নাগরিকের ভিসা বাতিল করে দেশত্যাগের নির্দেশ দেওয়া।
ভারত জানিয়েছে, পাকিস্তান চুক্তির আওতায় আলোচনায় আগ্রহ দেখায়নি এবং পানি ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা করেনি। তাছাড়া, সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগও ভারতের এই সিদ্ধান্তের পেছনে বড় কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ভারতের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় পাকিস্তানকে পাঠানো চিঠিতে বলেছে, ‘চুক্তি অনুযায়ী পারস্পরিক আস্থার ভিত্তিতে কাজ করার কথা থাকলেও, বাস্তবে পাকিস্তান নিয়মিত সীমান্তপারের সন্ত্রাসে জড়িত থেকে চুক্তির মূল উদ্দেশ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।’
পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান ভারতের এই সিদ্ধান্তকে আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘনের শামিল বলে দাবি করেছে। ইসলামাবাদ বলেছে, ১৯৬০ সালের চুক্তি বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত হয়, যা একতরফাভাবে বাতিল করা যায় না। পাকিস্তান হুঁশিয়ারি দিয়ে জানায়, চুক্তির আওতায় তাদের প্রাপ্য পানি আটকে দিলে বা অন্যদিকে প্রবাহিত করলে, তারা তা যুদ্ধ ঘোষণার সমান বলে বিবেচনা করবে এবং জাতীয় শক্তি দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাবে।
সিন্ধু পানি চুক্তি ছাড়াও কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং বাণিজ্যের দিকেও প্রভাব পড়েছে। পাকিস্তান ভারতের সব ধরনের বাণিজ্য স্থগিত করেছে, ভারতের উড়োজাহাজের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করেছে এবং পাকিস্তানে অবস্থানরত ভারতীয়দের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে। শিখ তীর্থযাত্রীদের ক্ষেত্রে অবশ্য এই সিদ্ধান্ত প্রযোজ্য নয়।
এই চলমান উত্তেজনার মধ্যে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তার মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক এক বিবৃতিতে জানান, জাতিসংঘ মহাসচিব দুই দেশকে ‘সর্বোচ্চ ধৈর্য’ ধারণের আহ্বান জানিয়েছেন এবং বলেছেন, বর্তমান উত্তেজনা যেন কোনোভাবেই আরও বড় সংঘাতে রূপ না নেয়, সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। মহাসচিব আশাবাদ ব্যক্ত করেন, ভারত ও পাকিস্তান নিজেদের সমস্যা শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করবে।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, পরিস্থিতি যদি নিয়ন্ত্রণে না আনা যায়, তবে দুই দেশের মধ্যে আবারও সীমান্ত সংঘাতের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে, যেমনটি দেখা গিয়েছিল ২০১৯ সালে। সেবার কাশ্মীরে এক আত্মঘাতী হামলার পর ভারত পাকিস্তানের বালাকোট এলাকায় বিমান হামলা চালায়।
সূত্র: এনডিটিভি
নদীবন্দর/জেএস