সিলেটের বনেদি পরিবারে জন্ম নেওয়া জুবাইদা রহমান পেশাগত জীবনে একজন চিকিৎসক হলেও সেই পেশায় পুরোপুরি মনোনিবেশ করার সুযোগ মেলেনি। বৈবাহিক জীবনে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ঘরে পুত্রবধূ হয়ে পড়ে যান রাজনীতির মারপ্যাচে! জিয়া পরিবারের অন্যদের মতো তাকেও হতে হয়েছে একাধিক মামলার আসামি। হয়েছে সাজাও। বরখাস্ত হয়েছেন সরকারি চাকরি থেকে। সব মিলিয়ে বেশ ঝড়ঝাপটার মধ্য দিয়ে কেটেছে জীবনের ১৭টি বছর। ২০০৮ সাল থেকে ২০২৫ সাল এই পুরো সময়ে তাকে থাকতে হয়েছে নির্বাসনে।
২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তারেক রহমানের সঙ্গে দেশ ছেড়েছিলেন ডা. জুবাইদা রহমান। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে বদলে গেছে অনেক কিছু। সেই পরিবর্তনের ফলশ্রুতিতে দেশে ফেরার পথ সুগম হয় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানের। অবশেষে চিকিৎসার জন্য চার মাস আগে লন্ডন যাওয়া শাশুড়ি বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে মঙ্গলবার (০৬ মে) সকাল দশটা ৪২ মিনিটে দেশে ফিরলেন জুবাইদা রহমান। তবে লন্ডনে রেখে এসেছেন স্বামী তারেক রহমান ও একমাত্র মেয়ে জাইমা রহমানকে।
বিমানবন্দর থেকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে গুলশানের ফিরোজায় গেলেও জুবাইদা রহমান ধানমন্ডিতে বাবার বাসায় থাকবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে তার দেশে ফেরার আগেই ঢাকার ধানমন্ডির ৫ নম্বর সড়কের ‘মাহবুব ভবন’-এ গত কদিন ধরে সাজসজ্জা আর গোছগাছের কাজ করা হয়। এটি তার বাবা সাবেক নৌবাহিনী প্রধান রিয়াল অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খানের বাসভবন।
এখানে বর্তমানে মাহবুব আলী খানের স্ত্রী সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু এবং বড় মেয়ে শাহীনা জামান ও তার পরিবারের সদস্যরা থাকেন। অবশ্য সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু সম্প্রতি রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন চিকিৎসার জন্য।
ওয়ান ইলেভেনের পর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তারেক রহমান, জুবাইদা রহমান ও ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে রাজধানীর কাফরুল থানায় একটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন। এর আগে ১১ সেপ্টেম্বর তারেক রহমানের সঙ্গে দেশ ছাড়েন ডা. জুবাইদা রহমান। ওই মামলায় জুবাইদা রহমানকে তিন বছরের কারাদণ্ড ও ৩৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেয় ঢাকার একটি আদালত।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর জুবাইদার ওই সাজা স্থগিত করে আদালত। এরপরই দেশে আসার পথ সুগম হয় জুবাইদা রহমানের।
সিলেটে জন্ম নেওয়া জুবাইদা ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করে ১৯৯৫ সালে বিসিএস পরীক্ষায় স্বাস্থ্য ক্যাডারে প্রথম স্থান অধিকার করে সরকারি চিকিৎসক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ২০০৮ সালে শিক্ষা ছুটি নিয়ে লন্ডন যাওয়া পর সরকার তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে। পরে তিনি সেখানকার ইম্পেরিয়াল কলেজ থেকে মেডিসিনে এমএসসি ডিগ্রি নেন।
জুবাইদার বাবা রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খান ১৯৭৮ সালের ৪ নভেম্বর থেকে ১৯৮৪ সালের ৬ অগাস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশের নৌবাহিনীর প্রধান ছিলেন। এরপর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সরকারের সময়ে তিনি যোগাযোগ ও কৃষিমন্ত্রী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানী জুবাইদা রহমানের চাচা।
নদীবন্দর/জেএস