নদীর তীরে কয়েক হাজার মানুষ। সবাই ব্যস্ত নদীতে মাছ ধরতে। নদীর দুপাড়ে মানুষের ঢল। একের পর এক জালে উঠে আসছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। রয়েছে নদীতে থাকা আইড়, বোয়াল, রুই, কার্প, বাছা মাছসহ আরও অনেক প্রজাতির মাছ। মাছ শিকারে অংশ নিয়েছেন হাজারও সৌখিন এবং পেশাজীবী মাছ শিকারীরা। কারও জালে মাছ আটকা পড়ছে আবার কারও জালে একেবারের মাছ ধরা পড়ছে না। তবে শুধু মাছ ধরা কিংবা কেনাবেচাই নয়, প্রতিবছর পালিত হয়ে আসা এই উৎসবটি দিনদিন স্থানীয় ঐতিহ্যের একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে একটি উৎসবের রূপ নিয়েছিল মৌলভীবাজারের মনু পাড়ের তিনদিনের হাট উৎসবটি। শনিবার থেকে কুলাউড়ার মনু নদে ঐতিহ্যবাহী তিনদিনব্যাপী এ হাট উৎসব এর আয়োজন করা হয়। উৎসবের উদ্যোগ গ্রহণ করেন স্থানীয়রাই। হাট উৎসবের দিন থেকে আয়োজন করা হয় মাছ ধরা উৎসবের। মেলা চলে গতকাল সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) পর্যন্ত। স্থানীয়রা এই উৎসবকে বলেন ‘হাট উৎসব’। এই উৎসবকে রাঙিয়ে তোলেন মূলত সৌখিন ও পেশাদার মাছ শিকারীরা। হাজারও সৌখিন মানুষ পেশাদার মাছ শিকারীদের সংমিশ্রণে প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠেছিল উৎসবের স্থানটি।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় মনু নদের বিভিন্ন জায়গায় মাছ ধরছেন উৎসবে অংশ নেওয়া শিকারীরা। মাছ শিকারীরা একসাথে আনন্দ করে পলো, কুচা, ঝাঁকি জাল, প্লেন জাল, টানা জালসহ বিভিন্ন ধরনের মাছ ধরার সরঞ্জাম নিয়ে নদে মাছ শিকার করতে নামেন; কেউ নৌকায়, কেউবা কলাগাছের ভেলায় চেপে। আবার অনেকেই নদীর চরে অথবা শুকনো স্থান থেকে জাল দিয়ে মাছ ধরার চেষ্টা করেন। কেউ কেউ নদীতে নেমেও মাছ ধরেন। ‘মাছ হাট’উৎসবটি নদীর বিভিন্ন বাঁকে, যে স্থানে ডহর বা গভীর রয়েছে সেসব স্থানেই মাছ ধরা উৎসব চলে। দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে পালিত হয়ে আসা এই উৎসবটি স্থানীয় ঐতিহ্যেরই অংশ হয়ে গেছে।
শনিবার সকালে প্রথম দিন মনু-কটারকোনা রেল সেতুর পূর্ব স্থান থেকে সকাল ১০টায় শুরু হয় মাছ ধরা। দ্বিতীয় দিন রোববার সুজাপুর ছৈদল বাজার ডহরে ধরা হয় মাছ। শেষ দিন আজ সোমবার উজান দিকে ভারতীয় সীমান্তের কাছাকাছি বেলেরতল এলাকায় মাছ ধরার মাধ্যমে তিনদিনব্যাপী এ উৎসব শেষ হয়।
হাট উৎসবের আয়োজক কমিটির সদস্য কামাল হোসাইন জানান, প্রতি বছরই কুলাউড়ায় মনু নদে এ উৎসবটি পালন করা হয়। নদীপাড় ও আশপাশের হাজারও উৎসুক জনতা মাছ শিকার দেখতে উপস্থিত হন। অনেকেই মাছ শিকার দেখার পাশাপাশি মাছ কেনার জন্যও সেখানে উপস্থিত হন। তবে শুধু কেনাবেচাই নয়, প্রতিবছর পালিত হয়ে আসা এই উৎসবটি দিন দিন স্থানীয় ঐতিহ্যের একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে বিবাহিত মেয়েরা বাবার বাড়ি নাইওর আসেন। অনেকেই আবার নতুন জামাইকে দিয়ে মাছ ধরাতে এই উৎসবে নিয়ে আসেন। তাই উৎসবটি স্থানীয়দের কাছে একটু বেশিই আনন্দের।