হিমালয়-কন্যা খ্যাত উত্তরের জনপদ পঞ্চগড়। অবস্থানগত কারণেই এটি শীতপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত। প্রতিবছর দেশের অন্য জেলার তুলনায় শীতের প্রকোপ এখানে বেশি থাকে। পুরো শীতকাল জুড়েই দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়ে থাকে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়।
রোববার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে সূর্য উঁকি দেয়ার চেষ্টা করলেও কুয়াশার সাথে বাঁধ সাধে মেঘ। সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) দিনভর ঘনকুয়াশা আর মেঘে ঢাকা ছিল সূর্যালোক। তবে মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) অন্যান্য দিনের তুলনায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হলেও দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মিলছে সূর্যের দেখা।
চলতি মৌসুমেও অধিকাংশ দিন এখানেই দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হচ্ছে। গত রোববার রেকর্ড করা হয় ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পরদিন সোমবার রেকর্ড করা হয় ১৫ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর মঙ্গলবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস, যা গত দুইদিনের তুলনায় কম।
এদিকে কুয়াশা আর মেঘলা আকাশের কারণে জনজীবনে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। সন্ধার পর ঘনকুয়াশায় ঢেকে যায় গোটা এলাকা। সকাল ১০টার পরও হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করে। কুয়াশার কারণে প্রতিদিন ট্রেন চলাচলেও দুই-তিন ঘন্টা বিলম্ব হচ্ছে। শীতের কারণে আয় রোজগার কমে গেছে রিকশাভ্যান চালক, কৃষিশ্রমিকসহ খেটে খাওয়া মানুষের। প্রতি বছরের মত এবারও তারা পরিবার নিয়ে কষ্টে দিনযাপন করছেন। শুধু কম্বল আর শীতবস্ত্র নয়, এমন সময় আর্থিক সহায়তার আশা করছেন এসব খেটে খাওয়া মানুষ। ঠান্ডার কারণে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।
জেলা শহরের রিকশাচালক আমিরুল ইসলাম বলেন, সাধারণভাবে আমরা প্রতিদিন গড়ে ৪০০-৫০০ টাকায় আয় করি। কিন্তু শীতকাল এলে আয় কমে যায়। সারাদিন ঘুরে ২০০ টাকাও আয় হয় না। আমাদের আর্থিক সহায়তা দরকার। প্রতি বছর ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে আমাদের অনেক কষ্ট হয়। পরিবার নিয়ে না খেয়ে কাটাতে হয়।
উপজেলা সদরের লাঠুয়াপাড়া এলাকার কৃষিশ্রমিক লোকমান হোসেন বলেন, প্রতিদিন ৩০০-৩৫০ টাকা হাজিরায় কাজ করি। সকালে কষ্ট করে কাজে যোগ দিলেও ঠান্ডার কারণে হাত অবশ হয়ে আসে। ঠিকমতো কাজ করা যায় না। এ শীতের মধ্যে পরপর দুইদিন কাজ করলেই সর্দিকাশি শুরু হয়।
শিশুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. মনোয়ার হোসেন বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় এবং বিশেষ করে শীতের শুরুতে শিশু ও বয়স্কদের নানা সমস্যা দেখা দেয়। এ সময় শিশুরা সর্দিকাশি এবং শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হতে পারে। বর্তমানে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা কম। তবে প্রতিদিন ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত অসংখ্য রোগী হাসপাতালের বহিঃবিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়ে যাচ্ছে।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহ বলেন, কয়েকদিন ধরে এখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩-১৫ এর মধ্যে উঠানামা করছে। আজকে তাপমাত্রা আরও কম। এই সপ্তাহের শেষ দিকে মৃদু অথবা মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
জেলা প্রশাসক ড. সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, পঞ্চগড় শীতপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত। জেলার দুস্থ ও শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে। জেলার পাঁচ উপজেলায় এ পর্যন্ত ২২ হাজারের বেশি শীতের কম্বল ও শীতবস্ত্র দেয়া হয়েছে। শীতবস্ত্রের জন্য সরকারিভাবে আর্থিক বরাদ্দও পাওয়া গেছে। এছাড়াও বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও এখানে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে।
নদী বন্দর / জিকে