চোখ জুড়ানো বিশাল হাওর কাউয়া দীঘি। একসময় এই হাওরে পৌষমাস থেকে শুরু হতো গবাদি পশুর খাদ্য ও রক্ষণাবেক্ষণের ভ্রাম্যমাণ আবাসস্থল (বাথান)।
‘বাথান’ শব্দের অর্থ গবাদি পশুর আবাসস্থল। দুই ধরনের বাথান রয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আর স্থায়ী বাথান। যারা বাথানের কাজ করতেন, তাদের বলা হয় বাথানি।
গ্রামঞ্চলের প্রতিটি বাড়িতেই গবাদি পশুপালন করা হয়। পৌষমাস থেকে গ্রামে তৃণলতার অভাবে গো-খাদ্য সংকট হয়ে থাকে। এসময় গরু মালিকরা টাকার বিনিময়ে তিন-চার মাসের জন্য গবাদি পশু হাওরের বাথানে পাঠাতেন।
সেসময় বেশিসংখ্যক গবাদি পশু পালনের জন্য তৃণভূমি অঞ্চলকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল গবাদি পশু পালনের বিশেষ ব্যবস্থা। বিশেষ ধরনের এই আবাসস্থলকেই বলা হতো বাথান।
উনিশ শতকের প্রথম দিকে জনসংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকায় পতিত জমি কমে আসে। ফলে বাথানও কমে যায়। বর্তমানে মৌলভীবাজার জেলার হাকালুকি, কাউয়াদীঘি হাওরের তীরে কিছু বাথান রয়েছে।
সময়ের ব্যবধানে গরু পালনের জন্য আধুনিক খামার ব্যবস্থাও গড়ে উঠেছে। এখন মানুষজন আর আগের মতো ব্যাপকহারে গবাদি পশু পালন করে না। হাওর অঞ্চলে আর বাথানিদের নাম-ডাকও নেই।
তবে পুরানো ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছেন হাওর কাউয়াদীঘির মিন্নত আলী বাথানি। সোমবার (১৫ মার্চ) বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কাওয়াদীঘি হাওরের মাঝের বান্দ নামক চরে ২০০ গবাদি পশুর বাথান। ডেরায় থাকেন বাথানি আর গবাদি পশুগুলো থাকে খোলা আকাশের নিচে।
মিন্নত আলীর ছেলে জুয়েল বলেন, প্রতি মাসে আমরা ২০০ গরু রক্ষণাবেক্ষণ করে ২০ হাজার টাকা আয় করি। খোলা আকাশের নিচে গবাদি পশুর স্বাস্থ্যরক্ষা কীভাবে করা হয় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে তেমন রোগবালাই হয় না। প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত তৃণ ঘাস খেয়ে গরুর স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
রাজনগর উপজেলা পশুসম্পদ কর্মকর্তা নিবাস চন্দ্র পাল বলেন, ‘বাথানে গবাদিপশু দেয়ার আগে মালিকরা পশুকে ভ্যাকসিন দিয়ে নেন। এছাড়া যদি কোনো বাথানে রোগবালাই দেখা দেয়ার খবর পেলে আমরা চিকিৎসা দিয়ে থাকি’।
নদী বন্দর / পিকে