কপোতাক্ষ নদের তালার ঘোষনগর খেয়াঘাটের ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো পরাপারের একমাত্র ভরসা। বাঁশের সাঁকোটি এখন রীতিমতো মারণফাঁদে পরিণত হয়েছে। সাঁকো পার হতে গেলে থর থর করে কাঁপে। সাঁকো দোলার তালে তালে বুক ধড়ফড় করে। কখন যে সাঁকোর বাঁশ হুড়মুড় করে ভেঙে পড়বে! তবে আশা আছে মনে, একদিন এখানে একটি ব্রিজ হবে। এভাবেই দুর্ভোগ ও আশার কথা জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।
সরেজমিনে আজ রবিবার সকালে তালার ঘোষনগরে গিয়ে দেখা গেছে, কপোতাক্ষ নদের ওপারে সাতক্ষীরার তালার কানাইদিয়া, এপারে ঘোষনগর। ওপারের মানুষ এপারে, এপারের মানুষ ওপারে যাতায়াতের একমাত্র ভরসা ওই বাঁশের সাঁকো। তালাসহ বিস্তীর্ণ জনপদের মানুষের নদী পারাপারে বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাঁকোটি দিয়ে নদী পার হতে হয়।
এখানে খেয়াঘাটে নৌকা পারাপারের কথা থাকলেও ঘাটের ইজারাদার বাঁশের সাঁকো তৈরি করে টোল আদায় করে। সাঁকোর খণ্ড খণ্ড চরাটের কোনোটাই এখন আর নিরাপদ নয়। বাঁধন না থাকায় তার ওপর পা দিলেই রয়েছে গড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি। নেই ন্যূনতম কোনো গার্ডার।
এমন অবস্থায় সাঁকো দিয়ে মানুষ পারাপারে কোনো রকম অসাবধানতায় পা হড়কে মালামালসহ পড়তে হয় পানিতে। এতে কোনো রকম প্রাণে বেঁচে গেলেও ভেজা কাপড় ও সঙ্গের মালামালসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যায়। ঘোষনগর খেয়াঘাটের বাঁশের সাঁকোটি এখন মারণফাঁদে পরিণত হয়েছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, এখানে বরাবরই যাত্রী পারাপারে অতিরিক্ত টোল আদায় করা হয়। এ নিয়ে ঘাট মালিক-যাত্রীদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকে। তবে টোল বেশি নিলেও সেখানে সেবার মান ক্রমশ তলানিতে ঠেকছে। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হয় সাঁকোটি। এত কিছুর পরও হুঁশ হচ্ছে না কর্তৃপক্ষের।
তালা উপজেলার রথখোলা গ্রামের জয়ন্ত হালদার জানান, সাঁকো দিয়ে আমরা যখন পারাপার হই, দুই টাকাও নেয়, পাঁচ টাকাও নেয়। যাওয়া-আসা করতে দশ টাকা খরচা হয়। এমনও হয়, দিনে অনেকবার পারাপার হতে হয়। এখানে একটি ব্রিজ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কষ্টের শেষ নেই।
রথখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক খলিলনগর গ্রামের বাসিন্দা সুব্রত রায় জানান, আমরা স্কুলশিক্ষক হলেও টোল দেওয়া থেকে রেহাই পাই না। প্রতিদিন বেশ টাকা খরচ হয়। বর্ষা মৌসুমে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেক কষ্টে বাঁশের সাঁকো পার হয়ে স্কুলে যেতে হয়। এখানে একটা ব্রিজ হলে এমন সমস্যা থেকে আমরা রেহাই পেতাম।
স্থানীয় ইউপি মেম্বার কালীদাশ অধিকারী জানান, খেয়াঘাটের বাঁশের সাঁকোটি চলাচলের একেবারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ঘাটের ইজারাদার টাকা নিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু এটি মেরামত করছে না।
এ বিষয়ে ঘাটের ইজারাদারের সঙ্গে কথা বলতে টোলঘরে গেলে দায়িত্বশীল কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে টোলঘরে এক নারীকে বসে টোল আদায় করতে দেখা যায়। তার কাছে জানতে চাইলে তিনি কিছু বলতে পারেননি।
এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান এম মফিদুল হক লিটু বলেন, উপজেলার বিস্তীর্ণ জনপদের মানুষের নদী পারাপারে বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাঁকোটি দিয়ে পার হতে হয়। উপজেলার মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে এখানে ব্রিজ নির্মাণ জরুরি। কয়েকবার জরিপও হয়েছে। কিন্তু আইনি জটিলতায় তা কার্যকর হয়নি। জনদুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত ঘোষনগরে কপোতাক্ষ নদের ওপর ব্রিজ নির্মাণের জোর দাবি জানান তিনি।
তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তারিফ-উল-হাসান বলেন, আমি অতি সম্প্রতি যোগদান করেছি। বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তবে জনস্বার্থে বিষয়টি খতিয়ে দেখে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নদী বন্দর / পিকে