শুষ্ক মৌসুম শুরুর আগেই গড়াই ও তার অন্যতম শাখা সিরাজপুর হাওর শুকিয়ে যাওয়ায় প্রায় সহস্রাধিক জেলে বেকার হয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। অনেকে মাছ ধরা পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় যোগ দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুষ্টিয়ার খোকসার গড়াই ও তার অন্যতম শাখা সিরাজপুর হাওর তীরের কালীবাড়ী পাড়া, কমলাপুর মিয়াপাড়া, হিলালপুর আদিববাসী পল্লী, কমলাপুর জেলে পল্লীর বেশিরভাগ জেলেই জীবন-জীবিকার তাগিদে বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় যেতে বাধ্য হয়েছেন। শুষ্ক মৌসুমে গড়াই নদী শুকিয়ে যাওয়ায় জাল নৌকা ছেড়ে তাদের কেউ রাজমিস্ত্রির জোগাল (সহকারী), কেউ চালানি (যারা নদী থেকে মাছ ধরেন তাদের কাছ থেকে কিনে) মাছ কেনাবেচা আর কেউ রিকশা-ভ্যানের চালক হয়েছেন।
কালীবাড়ী পাড়ার মনমতো হালদার কয়েক বছর আগেও নদীতে মাছ ধরেছেন। কিন্তু নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় তিনি বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে রাজমিস্ত্রির জোগাল দিচ্ছেন। তিনি এখন মাছ কিনে খান। তার মতোই পেশা বদল করেছেন পরেশ হালদার, গোবিন্দ, সোনাতন হালদারসহ একই পল্লীর ৩০ জনের বেশি জেলে।
উপজেলার মৎস্য অফিস সূত্র জানা গেছে, উপজেলায় জেলের সংখ্যা প্রায় ৭৩৫ জন। এরমধ্যে কার্ডধারী (তালিকাভুক্ত) ৫৩৭ জন। কার্ড নেই ১৯৮ জনের। পৌরসভায় ৭৮ জন জেলে রয়েছেন, তাদের মধ্যে ৬৪ জনের কার্ড রয়েছে।
জেলে শ্যামল হাওলাদার জানান, তিনি বাপ-দাদার পেশা এখনও ছাড়তে পারিনি। তাই এখন অর্ধাহারে-অনাহারে জীবন কাটছে। শুষ্ক মৌসুমে গড়াই নদীর ধু-ধু বালুচরে আটকে আছে তার মাছ ধরার ডিঙ্গি নৌকা। জাল-দড়ি বাড়ির আঙিনায় ঝুলিয়ে রেখেছেন।
তিনি বলেন, বছরের চার মাস গড়াই নদীতে পানি থাকে। সে সময় মাছ ধরে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করা সম্ভব হয়। বাকি আট মাস বেকার বসে থাকতে হয়। সরকারের কোনো সহায়তা তারা পান না।
উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা রাশেদ হাসান বলেন, জেলেদের সমস্যার বিষয়টি তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন। সরকারি কোনো অনুদান ও সহায়তা বরাদ্দ আসলে অব্যশই তাদেরকে দেয়া হবে। তবে তিনি গড়াই নদী পানিশূন্য হয়ে পড়ার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
নদী বন্দর / জিকে