অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয়, অসাধারণ, বর্ণনাতীত- সব বিশেষণই যেন আজ কম পড়বে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের ক্যারিবীয় অলরাউন্ডার কাইরন পোলার্ডের জন্য। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) ক্রিকেটে এমনই কীর্তি গড়েছেন তিনি, নিজ দলকে এনে দিয়েছেন কল্পনাতীত এক জয়।
দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করে ২১৮ রানের পাহাড়সম সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছিল চেন্নাই সুপার কিংস। টানা পাঁচ ম্যাচ জেতা দলটি তখনই পেতে শুরু করেছিল ষষ্ঠ জয়ের সুবাস। মুম্বাই ইনিংসের শুরুটাও ছিল তাদেরই পক্ষে।
কিন্তু এরপরই যেন দিল্লিতে চেন্নাইয়ের ওপর দিয়ে বয়ে গেল পোলার্ড নামক সাইক্লোন। যার ঝাপটায় লণ্ডভণ্ড চেন্নাই শিবির। একা হাতে মুম্বাইকে ২১৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করিয়ে ম্যাচ জিতিয়েছেন পোলার্ড। খেলেছেন আইপিএলে নিজের ক্যারিয়ার সেরা ৮৭ রানের ইনিংস, তাও মাত্র ৩৪ বলে।
পোলার্ড যখন উইকেটে আসেন তখন ৬২ বলে ১৩৮ রান প্রয়োজন ছিল মুম্বাইয়ের। অর্থাৎ বলপ্রতি দুই রানেরও বেশি। এমন চাহিদার সমীকরণে পোলার্ড রান নিয়েছেন ঝড়ের বেগে। চেন্নাইয়ের বোলারদের নিয়ে ছেলেখেলায় মত্ত হয়ে ৬ চার ও ৮ ছয়ের মারে করেছেন ৮৭ রান। যা মুম্বাইকে এনে দিয়েছে ৪ উইকেটের এক অবিশ্বাস্য জয়।
২১৯ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইনিংসের মাঝপথ পেরিয়ে মুম্বাইয়ের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ৮১ রান। অধিনায়ক রোহিত শর্মা ২৪ বলে ৩৫ ও কুইন্টন ডি কক খেলেন ২৮ বলে ৩৮ রানের ইনিংস। যা কি না লক্ষ্যের তুলনায় ছিল খুবই নগণ্য।
শেষ দশ ওভারে ১৩৮ রানের চাহিদায় ১১তম ওভারে মাত্র ৩ রান নিতে পারেন ক্রুনাল পান্ডিয়া ও কাইরন পোলার্ড। এরপরের ওভার থেকে মূলত শুরু হয় এ জুটির ঝড়। যেখানে বলা চলে, নীরব দর্শকই ছিলেন ক্রুনাল। তাদের জুটিতে আসে ৪১ বলে ৮৯, যেখানে ক্রুনালের অবদান মাত্র ১৯ রান। মাত্র ১৭ বলে নিজের পঞ্চাশ পূরণ করেন তিনি।
ক্রুনাল ফিরে যাওয়ার সময় ২১ বলে বাকি ছিল ৪৯ রান। স্যাম কুরানের করা ১৭তম ওভার থেকে আসে মাত্র ২ রান। যার ফলে শেষ ৩ ওভারে জয়ের জন্য থেকে যায় আরও ৪৮ রান। শার্দুল ঠাকুরের করা ১৮তম ওভারে একটি করে চার-ছয়ের মারে ১৭ রান তুলে নেন পোলার্ড।
আগের ওভারে ভালো বোলিং করা স্যামকেই মহাগুরুত্বপূর্ণ ১৯তম ওভারে ডাকেন চেন্নাই অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। তবে এবার আর কৃপণতা বজায় রাখতে পারেননি স্যাম। হার্দিক পান্ডিয়ার কাছে প্রথম দুই বলেই হজম করেন দুই ছক্কা, তৃতীয় বলে আসে ২ রান।
তবে শেষ তিন বলে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ান স্যাম। হার্দিকের (৭ বলে ১৬) উইকেট নেন চতুর্থ বলে, শেষ বলে ফেরান জিমি নিশামকে (১ বলে ০)। এই ওভার থেকে মুম্বাই পায় ১৫ রান। ফলে শেষ ওভারের সমীকরণ দাঁড়ায় ৬ বলে ১৬ রান। এবার আগের তিন ওভারে ৪৬ রান দেয়া লুঙ্গি এনগিডির হাতে বল দেন ধোনি।
লুঙ্গির করা শেষ ওভারের প্রথম দুইটি ডেলিভারিই ছিল ইয়র্কার। প্রথম বলটিতে রান পাননি পোলার্ড, তবে দ্বিতীয় বলে তার নিজের দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে খেলা অদ্ভুত শটে হাঁকান বাউন্ডারি। তৃতীয় বলটি ছিল হাই ফুল টস, সেটিকে ফাইন লেগ দিয়ে সীমানাছাড়া করেন পোলার্ড।
শেষ তিন বলে ৮ রানের সমীকরণে চতুর্থ বলটি ডট করেন লুঙ্গি। চাইলে ১ রান নিতে পারতেন পোলার্ড, কিন্তু স্ট্রাইক নিজের কাছেই রাখেন তিনি। আর সিঙ্গেল না নেয়ার কারণটা তিনি বুঝিয়ে দেন পঞ্চম বলে হাঁকানো ছক্কার মাধ্যমে। ফলে শেষ বলে বাকি ২ রান। লুঙ্গির করা ফুল লেন্থের ডেলিভারিটি লং অন আর মিড অনের মাঝামাঝি খেলে দৌড়েই ২ রান নিয়ে নেন পোলার্ড। মুম্বাই পায় অবিস্মরণীয় জয়।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খেয়েছিল চেন্নাই। ট্রেন্ট বোল্টের করা ইনিংসের প্রথম ওভারেই রুতুরাজ গাইকঁদ (৪) সাজঘরের পথ ধরেন।
তবে দ্বিতীয় উইকেটে ১০৮ রানের জুটিতে সেই ধাক্কা দারুণভাবে সামলে নেন ফ্যাফ ডু প্লেসি আর মঈন আলি। জাসপ্রিত বুমরাহর বলে মঈন উইকেটের পেছনে ক্যাচ হলে শেষ পর্যন্ত ভাঙে এই জুটি। ৩৬ বলে ৫টি করে চার-ছক্কায় ৫৮ রানের এক ঝড়ো ইনিংস খেলেন চেন্নাইয়ের ইংলিশ অলরাউন্ডার।
ফিফটি ছুঁয়ে পরের ওভারেই ফিরে যান ডু প্লেসিও। ২৮ বলে ২ চার আর ৪ ছক্কায় কাটায় কাটায় ৫০ করে কাইরন পোলার্ডের শিকার হন প্রোটিয়া এই ব্যাটসম্যান। এরপর আরও একটি উইকেট হারায় চেন্নাই। ওই ওভারেরই পরের বলে সুরেশ রায়নাকেও (২) তুলে নেন পোলার্ড।
কিন্তু তাতে কী? আম্বাতি রাইডু যে তখনও বাকি আছেন! ১১৬ রানে ৪ উইকেট হারানো দলকে টেনে নিতে এ্ররপর তিনি শুরু করেন তাণ্ডব। মাত্র ২০ বলে ফিফটি পূরণ করেন। অপরাজিত ছিলেন একদম ইনিংসের শেষ পর্যন্ত।
২৭ বলে রাইডুর অবিশ্বাস্য ৭২ রানের ইনিংসে ৪টি বাউন্ডারির সঙ্গে ছিল ৭টি ছক্কার মার! তার সঙ্গে ২২ বলে ২২ রানে অপরাজিত থাকেন রবীন্দ্র জাদেজা।
নদী বন্দর / পিকে