চলমান লকডাউনে পাবনার দুগ্ধ শিল্পে বিপর্যয় নেমে এসেছে। বাইরের জেলায় প্রক্রিয়াজাত দুধ না পাঠানোর কারণে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও ঘোষেরা দুধ কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে গোখাদ্যের দাম বৃদ্ধি। হঠাত্ করেই গোখাদ্যের দাম বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে বৃদ্ধি পাওয়ায় খামারিরা বিপাকে পড়েছেন। দেশের অন্যতম দুগ্ধভান্ডার বলে পরিচিত পাবনার পাঁচ উপজেলা বেড়া, সাঁথিয়া, ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া ও চাটমোহর।
জেলার প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের হিসাবে, এখানে ছোট-বড় প্রায় ২০ হাজার দুগ্ধ খামার রয়েছে। তা ছাড়া গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতে গরু পালন করা হয়। সেখান থেকেও দুধ আসে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ লিটার দুধ উত্পাদিত হয়। এর ওপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে সরকারি মিল্কভিটা এবং বেসরকারি প্রাণ ডেইরি, আড়ং দুধ, ফার্ম ফ্রেস, অ্যামোমিল্ক, পিউরামিল্ক, আফতাব ডেইরি, রংপুর ডেইরিসহ বেশ কিছু দুগ্ধ সংগ্রহকারী ও প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান। বাঘাবাড়ী মিল্কভিটাসহ প্রায় ২০টি বেসরকারি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান প্রতিদিন প্রায় ৫ লাখ লিটার দুধ সংগ্রহ করছে। বাকি দুধের সম্পূর্ণটা স্থানীয়ভাবে বিক্রি হচ্ছে না। অবশিষ্ট দুধ স্থানীয় ব্যবসায়ী ও ঘোষেরা ক্রয় করতেন। কিন্তু লকডাউনের কারণে এখন ঘোষেরা ও ব্যসায়ীরা দুধ কিনছেন না। কারণ মিষ্টির দোকান বন্ধ থাকায় ছানার চাহিদা কমে গেছে।
লকডাউনে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দুধ প্রক্রিয়াজাত করে বগুড়া, নাটোর, রাজশাহী, নওগাঁসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করতে পারছেন না। সাঁথিয়া উপজেলার শেলন্দা গ্রামসংলগ্ন চরাচিথুলিয়া প্রাথমিক দুগ্ধ উত্পাদনকারী সমবায় সমিতির কয়েকজন সদস্য সোহেল রানা, ইউসুফ আলী, রওশন আলী, আব্দুল আলীম রবিবার বললেন, রমজান মাসে দুধের চাহিদা বেড়ে যায়। এবার লকডাউনের কারণে খামারিদের কাছ থেকে ঘোষ ও ব্যবসায়ীরা দুধ কিনছেন না। বেড়া উপজেলার কয়েক খামারি বললেন, দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে অফিস আদালত বন্ধ রয়েছে। ফলে মানুষজন ঢাকাসহ বড় বড় শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গেছেন।
ফলে শহরগুলোতে দুধের চাহিদা কমে গেছে। এছাড়া পাবনা এলাকায় ছানা তৈরির কারখানা, মিষ্টির দোকান, চায়ের দোকান বন্ধ থাকায় মালিকরা দুধ কিনছেন না। ফলে দুধের চাহিদা নেই বললেই চলে। সাঁথিয়া উপজেলার নাগডেমরা গ্রামের খামারি আব্দুস সালাম জানালেন, ‘আমার খামারে দৈনিক ১০০ লিটার দুধ উত্পাদন হয়। কয়েকদিন আগেও একটি প্রতিষ্ঠান আমার কাছ থেকে দুধ নিয়ে ঢাকায় পাঠাত। অথচ গত আট দিন ধরে তারা দুধ নিচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে ফেরি করে ৩০-৩৫ টাকা লিটার দরে বাকিতে দুধ বিক্রি করছি।’
পাবনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আল মামুন হোসেন মণ্ডল বলেন, আমরা খামারিদের কথা ভেবে মিল্কভিটা, প্রাণ, আড়ং, অ্যাংকার, অ্যামোমিল্ক, পিউরামিল্কসহ বেসরকারি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বলেছি, এ সময়ে কোনোভাবেই দুধ কম নেওয়া যাবে না। সেই সঙ্গে খামারিদের উত্পাদিত অবশিষ্ট দুধ বাজারে সঠিকভাবে বিক্রির জন্য ভ্রাম্যমাণ গাড়ির ব্যবস্থা করে দিয়েছি। যে সব খামারি দুধ বিক্রি করতে না পারবেন তারা এই ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে দুধ দেবেন।
নদী বন্দর / জিকে