নাটোরের গুরুদাসপুরে আড়তে লিচু বিক্রি শুরু হয়েছে। টসটসে রসালো ফল লিচু আড়তে নিয়ে আসছেন বাগান মালিকরা। তবে অবৈধভাবে গড়ে উঠা লিচু আড়তে কমিশনের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, আড়তে একশ লিচু বিক্রি করলে কৃষককে দিতে হচ্ছে আট টাকা, আর যে বেপারী কিনছেন তাকে দিতে হচ্ছে চার টাকা। এছাড়া প্রতি ঝাঁকা লিচুর জন্য কৃষকের কাছ থেকে আরও পাঁচ টাকা কমিশনের নামে কেটে নিচ্ছেন আড়তদাররা। ফলে একশ টাকার লিচু ক্রয়-বিক্রয়ে কমিশনের নামে আড়তদাররা নিচ্ছেন ১৭ টাকা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, নাটোরে এবার পাঁচ হাজার ৮৫৭ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছে। হেক্টর প্রতি ১৩.৬ মেট্রিক টন ধরলে জেলায় মোট লিচু উৎপাদন হবে প্রায় ৯০ হাজার মেট্রিক টন। তবে গত বছরের তুলনায় এবার লিচুর ফলন কম হলেও ভালো দাম পাওয়ায় খুশি বাগান মালিকরা। প্রতি এক হাজার লিচু বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার থেকে ২২০০ টাকায়।
লিচু বাগান মালিক দিল মোহাম্মাদ বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার ভালো দাম রয়েছে।তবে কমিশনের নামে অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছেন আড়তদাররা।
আরেক বাগান মালিক আনিস হোসেন বলেন, কমিশনের নামে আড়ত মালিকরা আমাদের চুষে খাচ্ছে। ১০০ টাকার লিচু বিক্রি করলে কৃষককেই ১৩ টাকা দিতে হচ্ছে। এছাড়া কোনো ট্রাক ভাড়া করলে ৪-৫ হাজার টাকা দালালি দিতে হয়। এতে চরম বেকায়দায় পড়ছেনে লিচু বাগান মালিকরা।
এদিকে, রোববার (১৬ মে) দুপুরে নিরাপদ লিচু উৎপাদন এবং বাজারজাত নিয়ে স্থানীয় বেড়গঙ্গারামপুর একটি লিচু বাগানে লিচু ব্যবসায়ী, আড়তৎদারসহ জড়িত সকলের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন জেলা পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা। সভায় বেশির ভাগ লিচু বাগান মালিক আড়ত মালিকদের কমিশন বাণিজ্যির বিষয়ে অভিযোগ করেন।
তারা বলেন, পেকে যাওয়ায় বেশিরভাগ বাগান মালিক এখন লিচু বিক্রির জন্য বেড়গঙ্গারামপুর আড়তে নিয়ে যায়। সেখানে মোট ১৬টি আড়তে গড়ে প্রতিদিন ৫০ লাখ টাকার লিচু ক্রয়-বিক্রয় হয়। কিন্তু সমিতি কমিশনের নামে প্রত্যেক বাগান মালিকের কাছ থেকে একশ লিচু বিক্রি করলে মোট ১৩ টাকা কমিশন নিচ্ছে। এছাড়া যে লিচু ক্রয় করছে তাকে আরও চার টাকা দিতে হচ্ছে। এতে লাভের টাকা পিঁপড়ায় খাচ্ছে।
সভা শেষে পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, বেশির ভাগ বাগান মালিকের অভিযোগ আড়তদাররা কমিশনের নামে অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছেন। অভিযোগের পর আড়তদারদের প্রাথমিকভাবে নিষেধ করা হয়েছে। এরপরও বাড়তি কমিশন নিলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে বেড়গঙ্গারামপুর লিচু ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন মোল্লা বলেন, শ্রমিক খরচ, মসজিদ এবং মাদরাসার উন্নয়ন ফান্ডের জন্য বাগান মালিক ও পাইকাররদের কাছ থেকে মোট ১৭ টাকা করে নেয়া হয়।এসব টাকা উন্নয়ন ফান্ডে ব্যবহৃত হয়। তবে পুলিশ সুপারের নির্দেশে কমিশন কমানো যায় কিনা, তা ভেবে দেখা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ বলেন, অবৈধভাবে রাস্তার ওপর আড়ত বসিয়ে কোটি কোটি টাকার বেচা-কেনা করা হচ্ছে। এতে করে সরকার কোনো রাজস্ব পাচ্ছে না। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
নদী বন্দর / এমকে