বাদামি চালের পুষ্টিগুণ সাদা চালের তুলনায় দ্বিগুণ। এ ছাড়াও এই চালে এতো পরিমাণে পুষ্টিগুণ আছে, যা সাদা চালে নেই। সাদা চাল মূলত প্রক্রিয়াজাত করা হয়ে থাকে। অন্যদিকে ব্রাউন রাইস একেবারেই অর্গ্যানিক।
এই চালের উপরিভাগে ধানের তুষের কিছু অংশ থেকে যায়। এই চাল পালিশ করা হয় না। তাই দেখতে খানিকটা লালচে ধরনের হয়ে থাকে। আর পালিশ করা হয় না বলে সাধারণ চালের তুলনায় এর পুষ্টিগুণ কয়েকগুণ বেশি।
অনেকের ধারণা, ভাত খেলে মেদ বৃদ্ধি হয়, ঘুম পায়। তবে ব্রাউন ব্রাউন রাইস বা ঢেঁকি ছাঁটা চালের বিষয়ে এই ধারণাগুলো একেবারেই ভ্রান্ত- বলে মনে করেন চিকিৎসকরা। ব্রাউন রাইস স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। জেনে নিন ব্রাউন রাইসের একাধিক স্বাস্থ্যগুণ সম্পর্কে-
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ব্রাউন রাইসে থাকা ফাইবার, পলিফেনল এবং পাইটিক অ্যাসিড রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এ ছাড়াও এতে থাকা কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট ধীরে ধীরে রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ায়।
ফলে রক্তের চিনির পরিমাণ হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা কমে। তবে সাদা ভাত রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়। তাই চিকিৎসকরা ডায়বেটিকদের সাদা ভাত খেতে মানা করেন।
অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর: বাদামি চালে থাকা পুষ্টি উপাদানগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এটি রক্তে উপস্থিত ক্ষতিকর টক্সিক উপাদান বের করে দেয়। ব্রাউন রাইস খেলে শরীর যেমন বিষমুক্ত হয়; তেমনই রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থারও উন্নতি ঘটে।
এর ফলে বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। ব্রাউন রাইসের অন্দরে সুপারঅক্সাইড নামে একটি বিশেষ ধরনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের খোঁজ পাওয়া যায়, যা কোষের ক্ষতি হওয়ার থেকে বাঁচায়। সেই সঙ্গে কোষের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়।
ওজন কমায়: যেখানে ওজন বাড়ার ভয়ে সবাই সাদা ভাত খায় না; সেখানে ওজন কমানোর গ্যারান্টি দেয় ব্রাউন রাইস। শরীরের অতিরিক্ত চর্বিকে ঝরিয়ে দেয় ব্রাউন রাইস। সেই সঙ্গে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়। ফলে ওজন কমে এবং হার্টও থাকে সুস্থ।
অ্যালঝাইমার রোগ সারায়: মস্তিষ্কে থাকা প্রোটিলেন্ডোপেটিডেস নামক একটি ক্ষতিকর এনজাইমের ক্ষরণ কমিয়ে দেয় ব্রাউন রাইসে থাকা পুষ্টিগুণ।
ফলে ব্রেনের ডিজেনারেশন হওয়ার আশঙ্কা কমে। এ কারণে স্বাভাবিকভাবেই ডিমেনশিয়া, অ্যামেনসিয়া এবং অ্যালঝাইমার ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়।
হজম ক্ষমতা বাড়ায়: প্রতিদিন বাদামি চাল খেলে শরীরে ফাইবারের ঘাটতি দূর হয়। এর ফলে কোষ্ঠ্যকাঠিন্য থেকে মুক্তি মেলে।
হজম ক্ষমতা বাড়ায় পেটের বিভিন্ন সমস্যা সেরে যায়। তাই যারা অ্যাসিডিটি বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগেন; তারা ব্রাউন রাইস খাওয়া শুরু করতে পারেন।
হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়ে: সমীক্ষায় দেখা গেছে, নিয়মিত ব্রাউন রাইস খেলে শরীরে সেলেনিয়াম নামক একটি উপাকারী উপাদানের ঘাটতি দূর হয়।
এটি আর্টারির দেওয়ালে জমতে থাকা ময়লা দূর করে হার্টে রক্ত প্রবাহের উন্নতি ঘটায়। পাশাপাশি রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলকে স্বাভাবিক রাখার মাধ্যমে হার্ট সুস্থ রাখার সামগ্রিক দায়ত্ব পালন করে।
ক্যানসার প্রতিরোধে: বর্তমানে পুরো বিশ্বেই ক্যান্সার রোগের প্রকোপ বেড়েছে। তবে জানেন কি, ব্রাউন রাইসের নিয়মিত খেলে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কাও কমে।
এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে, যা কোলন এবং ব্রেস্ট ক্যানসারের প্রকোপ কমায়। এমনকি লিউকেমিয়ার মতো ক্যান্সারের প্রতিরোধেও এই চাল কার্যকরী।
সূত্র: হেলথলাইন
নদী বন্দর / এমকে