রাজশাহী জেলা প্রশাসনের নির্দেশিত ১২টি শর্তের পরিপূর্ণ পালন হচ্ছে না জেলার অন্যতম আমের হাট বানেশ্বরে। এতে অনেকটায় ভোগান্তি ও হয়রানির স্বীকার হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ওই বাজারে আম বিক্রি করতে আশা চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
রোববার সরেজমিনে বানেশ্বর আমের হাটে গিয়ে দেখা গেছে, গুটি ও গোপালভোগ আমের সমাহার। তবে খুব স্বল্প পরিমাণে দেখা মিলেছে খিরসাপাত আমের। এছাড়াও করোনা ও বাস চলাচল বন্ধের কারণে ঢাকাসহ অন্যান্য জেলার আম ব্যবসায়ীরা এখনো প্রবেশ করেননি রাজশাহীর বাজারে। তাই ক্রেতার সংখ্যা কম থাকায় তেমন প্রত্যাশিত দাম পাচ্ছেন না চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
এদিকে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে ঢলন বা শোলা প্রথা বাতিল হওয়ার কথা থাকলেও সেখানে ব্যবসায়ীরা জোরপূর্বক চাষিদের কাছে নিচ্ছেন ঢলন বা অতিরিক্ত আম। এতে অনেকটায় ক্ষতির মুখে পড়ছেন আম চাষিরা। পাচ্ছেন না নায্য মূল্যও।
বানেশ্বর মডেল ভূমি অফিসের মাঠে বসে পাইকারি আমের বাজার। সেখানে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত থাকেন বিভিন্ন উপজেলা ও গ্রামগঞ্জ থেকে আসা আম চাষিরা। তবে ভূমি অফিসের বাইরে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দোকান নিয়ে বসে থাকেন স্থানীয় আম ব্যবসায়ীরা। তারা মূলত বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা চাষিদের কাছে থেকে পাইকারি মূল্যে আম কিনে বাইরে বেশি দামে বিক্রি করে থাকেন।
চারঘাট উপজেলার বাউনদিঘা গ্রামের আমচাষি মো. আব্দুর রাজ্জাক (৫২) বলেন, ‘এখানকার আড়তদারেরা হচ্ছে ডাকাত। তারা জোর করে বেশি আম নিচ্ছে। আম না দিতে চাইলে হুমকি-ধামকি দেয় তারা। তারা বলে, ‘আজকেই তোমার হাটের শেষ দিন, কথা না শুনলে এই বাজারে আম বিক্রি করতে পারবা না।’
উপজেলা প্রশাসনের কোনো মনিটরিং টিম বাজারে আসে কি না বা তারা বাজার পরিদর্শন করেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকারের কোনো লোকজন এসব দেখে না। ইজাদার আর আড়তদাররা এই বাজারে যা ইচ্ছা তাই করে। তারাই সব নিয়ন্ত্রণ করে।’
অন্যদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আমচাষি বানেশ্বর বাজারে আম বিক্রি করতে এসে প্রতিবেদককে জানান তার নানান অভিযোগের কথা। তার অভিযোগ, ‘একগাড়ি আম নামাতে লেবার খরচ দিতে হয় প্রায় ২ হাজার টাকা। গাড়ি খরচ হয়েছে ৬০০ টাকা, আবার খাওয়া-দাওয়া ও আনুষঙ্গিক খরচ আছে হাজার টাকার মতো। আম বেচে পেয়েছি ৬ হাজার টাকা। এখানে অর্ধেক টাকাই শেষ। তাই আম বিক্রি করে তেমন কোনো লাভ হচ্ছে না, উল্টো নানান ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এক ক্যারেটের ওজন প্রায় দেড় কেজির মতো হয়ে থাকে। সেখানে আড়তদার বা ব্যবসায়ীরা সেটার ওজন ধরে ২ কেজি। তাহলে ২০ ক্যারেটে তারা অতিরিক্ত আম নিয়ে নিচ্ছে ১০ কেজি। আবার সরকার ঢলন দিতে নিষেধ করলেও মণ প্রতি ৬-১০ কেজি আম বেশি নিচ্ছেন তারা। অতিরিক্ত আম দিতে আপত্তি জানালে তারা হুমকি দেয়, হাটে আম না আনার জন্য।’
দূর্গাপুরের আমচাষি ডাবলু। প্রায় ২ হাজার মণ গোপালভোগ আম নিয়ে সাড়ে ১২ টার দিকে এসেছেন বানেশ্বর বাজারে। আম বাজারে জেলা প্রশাসন কিংবা উপজেলা প্রশাসনের তেমন নজরদারি না থাকায় আড়তদাররা ইচ্ছা মতো দাম হাঁকছেন। এতে প্রত্যাশিত দামের চাইতে কম দামে তার বাগানের গোপালভোগ আম বিক্রি করতে বাধ্য হনতিনি।
এবারের আমার বাজারের ইজারা নিয়েছেন বানেশ্বর বাজারের আওয়ামী লীগ নেতা ও সারের ডিলার ওসমান আলী। বানেশ্বর হাটের অনিয়ম ও অভিযোগের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখনো আম পুরোপুরি পাকেনি। তাই বাজারে তেমন আম না উঠায় ঢাকার পার্টিরা আসছে না। আর কিছুদিন পর সব ধরনের আম উঠবে। হাটও তখন জমে উঠবে। বর্তমানে হাট না জমে ওঠায় সেভাবে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। তাছাড়া আমচাষিদের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কেউ কোনো অভিযোগও করেনি।’
এ বিষয়ে একাধিকবার পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুরুল হাই মোহাম্মদ আনাসকে তার মুঠোফোনে কল করে পাওয়া যায়নি।
তবে বানেশ্বর হাটে আমচাষিদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ শরিফুল হক বলেন, ‘হাট-বাজারে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। সকলকে মাস্ক পরিধান ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূরত্ব বজায় করে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। এছাড়াও অবশ্যই আমচাষিদের হয়রানির বিষয়টি মাথায় নিয়ে প্রয়োজনে বানেশ্বরে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। চাষিদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে জনবল বৃদ্ধি করা হবে।’