ঝিনাইদহের মহেশপুরের ভারতীয় সীমান্ত ঘেষা কুদলা নদীতে একটি সেতু না থাকায় দুর্ভোগে রয়েছেন এখানকার ১০ গ্রামের মানুষ। এছাড়া সেতু না থাকায় এলাকাটি নিয়ন্ত্রণ করতে প্রতিনিয়তই বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
জানা যায়, উপজেলার যাদবপুর ইউনিয়নের ভারতীয় সীমান্ত ঘেষে বয়ে চলেছে কুদলা নদী। নদীর পূর্ব পাশে রয়েছে মাটিলা, লেবুতলা, যাদবপুর ও কানাইডাঙ্গা গ্রাম। এদিকে পশ্চিম পাশে রয়েছে মকরধ্বজপুর, দরবেশপুর, রুলি, বৈরবা, মোমিনতলা, গোপালপুর, কুটিপাড়া, বাশবাড়িয়া, সামান্তাসহ প্রায় ১০টি গ্রাম। আর দক্ষিণে সামান্য দূরেই ভারতীয় সীমান্ত রেখা।
তবে ওই এলাকায় ভারতীয়দের কোনো তারকাঁটার বেড়া নেই। ফলে এ এলাকাটিকে দীর্ঘদিন ধরে চোরাকারবারি ও মানবপাচারকারিরা নিরাপদ রুট হিসাবে ব্যবহার করে আসছেন।
কিন্তু এ নদীর ওপর সেতু না থাকায় বিজিবিকে এ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তাদের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যেতে প্রায় ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সীমান্ত টহলে যেতে হয়।
এছাড়া ব্রিজ না থাকায় ১০ গ্রামের হাজার হাজার মানুষকেও ১২-১৩ মাইল ঘুরে নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় কাজ করতে হয়। এক পাড়ের মানুষদের অন্য পাড় থেকে কৃষিপণ্য আনতে ভোগান্তি পোহাতে হয়।
স্থানীয়রা জানান, ব্রিটিশ আমলে এখানে একটি পাকা সেতু ছিল। এ ব্রিজের সূত্রেই নদীর দু’পাড়ের মানুষের মধ্যে কৃষিপণ্য বিনিময় ও ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে উঠে। তবে দেশ স্বাধীনের আগেই সেতুটি ভেঙে যায়। এরপর থেকে দুর্ভোগে পড়ে নদীর দু’পাড়ের মানুষ ।
দেশ স্বাধীনের ৫০ বছর পরও এখানে সেতু না হওয়ায় নদী পাড়ের মাটিলা গ্রামের কয়েকটি পরিবার অপর পাশে থাকা তাদের প্রায় ২০০ বিঘা জমি বিক্রি করে দিয়েছে। বর্ষা মৌসুমে মানুষের যাতায়াতের একমাত্র পথ বাঁশের সাকো। আর শুষ্ক মৌসুমে হেটে পানি পার হয়ে প্রয়োজনীয় কাজ করতে হয় তাদের।
এদিকে সম্প্রতি স্থানীয়দের উদ্দ্যোগে নদীতে বাঁশের একটি ছোট সাঁকো তৈরি করা হয়। সাঁকোর দু’পাশ মাটি দিয়ে বাঁধিয়ে দেয়া হয়েছে। যেন বর্ষা মৌসুমে সহজে এ সাঁকো পার হওয়া যায়।
ব্রিজের পূর্ব পাশের গ্রাম মাটিলার বাসিন্দা বৃদ্ধ ওয়াজেদ আলী বলেন, আমাদের গ্রামের তরফদার পরিবারের নদীর অপর পাশে ১০০ বিঘা জমি ছিল। কিন্তু চাষ করার পর কৃষিপণ্য বাড়িতে আনতে অসুবিধা হওয়ায় জমিগুলো বিক্রি করে দিয়েছেন তারা।
নদীর পশ্চিমপাশে মাত্র চার-পাঁচ কিলোমিটার দূরে রুলি মাধ্যমিক স্কুল, শহিদুল ইসলাম কলেজ ও ফাজিল মাদরাসা রয়েছে। যেখানে এলাকার ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া করে। বর্ষা মৌসুম এলেই তাদের প্রায় ১২ কিলোমিটার ঘুরে স্কুল-কলেজে যেতে হয়।
এদিকে এ নদীর দু’পাড় দখল করে নিচ্ছেন মানুষ। ফলে মরে যেতে বসেছে নদীটি।
ব্রিজের পশ্চিম পাশের গ্রাম মকরধ্বজপুর গ্রামের বাসিন্দা খেলাফত মণ্ডল, দেলোয়ার হোসেন ও হবিবর রহমান জানান, একটি সেতু তৈরি করা এখন একান্ত প্রয়োজন। সেতু না থাকায় বিজিবি সদস্যদের টহল কাজে বিঘ্ন ঘটে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে চোরকারবারিরা কোদলা নদী রুট ধরেই গরু, মাদক ও মানব পাচার করে থাকেন।
ভারতীয় সীমান্ত ঘেষা যাদবপুর ইউপি চেয়ারম্যান এ বি এম শাহীদুল ইসলাম জানান, সেতু করার জন্য প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প পাশ হলেই নির্মাণকাজ শুরু হবে।
মহেশপুর ৫৮ বিজিবির মাটিলা ক্যাম্পের নায়েক সুবেদার সোহরাব হোসেন বলেন, কোদলা নদীর প্রস্তাবিত এ সেতুটির পূর্ব পাশে অবস্থিত মাটিলা বিজিবি ক্যাম্প। নদীর পার হয়ে ও পাশে (পশ্চিম) আমাদের আরো তিন কিলোমিটার পর্যন্ত মাটিলা বিওপির আওতায় রয়েছে। যখন নদীতে পানি থাকে, তখন নদীর পশ্চিম পাশে কোনো সমস্যা হলে প্রায় ২০ কিলোমিটার ঘুরে ঘটনাস্থলে যেতে হয়। অথচ সেতুটি নির্মিত হলে আধা কিলোমিটারের কম পথ পাড়ি দিয়েই নদীর অপর প্রান্তে যাওয়া যাবে।
ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, সেতুটি না হওয়ায় কয়েক গ্রামের মানুষের যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা সেতু তৈরির প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন করে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে। প্রস্তাবনা পাশ হলে সেতু তৈরির কাজ শুরু হবে।