1. badsha.dru@gmail.com : admi2017 :
  2. nadibandar2020@gmail.com : Nadi Bandar : Nadi Bandar
‘জোয়ার অইলেই সব পানিতে তলাইয়্যা যায়’ - Nadibandar.com
শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৬ পূর্বাহ্ন
নদী বন্দর প্রতিনিধি:
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ৩০ মে, ২০২১
  • ৩২০ বার পঠিত

বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ঝালকাঠিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কাঁঠালিয়া উপজেলার বিষখালী নদীর বেড়িবাঁধটি। ৯ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের তিন কিলোমিটারেরই বিভিন্ন স্থান ভেঙে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তলিয়ে গেছে ফসলের ক্ষেত ও বসতঘর। পানি ঢুকে পড়েছে বিভিন্ন স্থাপনায়।

সুগন্ধা নদীতীরের কুতুবনগর ও বারইকরণ এলাকার ফসলি জমি, মাছের ঘের এবং বাড়িঘর রক্ষার জন্য সরকার ২০০০ সালে দেড় কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে। সেই থেকে বেড়িবাঁধের কুতুবনগর এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করেন কৃষক আবদুল হালিম (৫০)। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে নিয়মিত সংগ্রাম করে চলেছেন এই কৃষক। ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা, ফণী, আম্ফান ও ইয়াসের কবলে কয়েক দফায় বেড়িবাঁধ ভেঙে যায় তার চোখের সামনেই। এখন কোনো রকমে টিকে আছে তার ঘরটি। তাও আবার বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় যাতায়াতের কোনো পথ নেই।

শনিবার (২৯ মে) সকালে কুতুবনগর এলাকায় গিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি জানান, বাঁধটি মেরামত করা হলেও তা বেশি দিন টিকছে না। টেকসই বাঁধ নির্মাণ না করায় ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে কিছুটা ক্ষতি হলেও ইয়াসে পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে যায় বেড়িবাঁধটি। দুইশ একর ফসলি জমি, এক হাজার বসতঘর, মসজিদ-মাদরাসা, দোকানঘর ও একটি খেয়াঘাট হুমকির মুখে পড়েছে।

Jhal-(3).jpg

কৃষক আবদুল হালিম বলেন, ‘গ্যাছে বছর বেড়িবাঁধ কোনো রকমে মেরামত করা হইছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় আম্পানে বেড়িবাঁধ ক্ষতি হয়। এবার ইয়াসে পুরাই ভাইঙ্গা গ্যাছে। এহন পোলা-মাইয়্যা-নাতিগো লইয়্যা দুশ্চিন্তায় আছি। একটু জোয়ার অইলেই সব পানিতে তলাইয়্যা যায়। ক্ষ্যাতের ফসল পানিতে ডুইব্যা আছে। ঘরের মধ্যে পানি ওডে, বাঁধ না দেলে মোরা থাকমু ক্যামনে।’ টেকসই বেড়িবাঁধের দাবি করেন তিনি।

স্থানীয় বাসিন্দা মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘নদীর পাড়ে আমার দোকান আছে। বেড়িবাঁধ ভাঙতে ভাঙতে এমন অবস্থা অইছে, দোকানডাও কোন সময় শ্যাষ অইয়্যা যায় আল্লাহ জানে।’

বারইকরণ খেয়াঘাট এলাকায় একটি এতিমখানার পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বাঁধটি নির্মাণের পর ঘূর্ণিঝড়ে কয়েক দফায় ভাঙে। আবার সংস্কারও করা হয়। কিন্তু টেকসই বেড়িবাঁধ না দিলে কীভাবে টিকবে? একটু জোয়ারের পানি বাড়লেই বাঁধ ভাঙে। এখন আমাদের এতিমখানা ও একটি মসজিদ হুমকির মুখে রয়েছে। আমরা টেকসই বেড়িবাঁধ চাই।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, একের পর এক ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে ঝালকাঠি জেলার সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতীরের ৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের বিভিন্ন স্থান ক্ষতবিক্ষত হয়। মাঝে মধ্যে সংস্কার হলেও বেশিরভাগই অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে বেড়িবাঁধের ৮টি এলাকার প্রায় চার কিলোমিটার ভেঙে যায়।

Jhal-(3).jpg

এদিকে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে সদর উপজেলার গাবখান-ধানসিঁড়ি, দেউরী বেড়িবাঁধ, কৃষ্ণকাঠি এলাকায় শহর রক্ষাবাঁধ ও বিষখালীর নদীর হদুয়া এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

কাঠালিয়া গ্রামের বাসিন্দা কৃষক মো. কিবরিয়া বলেন, ‘এক জোয়ারেই পানি অনেক বাড়ছে। এহন বেড়ি ভাইঙ্গা ওই পাশ দিয়্যা ছুইট্ট্যা গ্যাছে। এতে আমাগো কৃষির অনেক ক্ষতি হইছে। গাছের মরিচ ও ডাইল তুইল্লা নেয়া যাইবে না। পানিতে আমাগো বাড়ি-ঘর তো পুরাই ডুইব্বা গ্যাছে।’

বিষখালী নদীতীরের বাসিন্দা আবদুর রব খান বলেন, ‘ঝড়-বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসলে আমরা খুবই আতঙ্কে থাকি। বিশেষ করে রাতে ছেলেমেয়ে নিয়ে বসে থাকতে হয়, কখন বাড়িঘর ভেঙে নদীতে চলে যায়।’

ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেন বলেন, ঝালকাঠি জেলায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে চার কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতের জন্য তিন কোটি টাকার প্রয়োজন। ইতোমধ্যেই বরাদ্দ চেয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলে যত দ্রুত সম্ভব ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় কাজ শুরু করা হবে।’

নদী বন্দর / জিকে

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 Nadibandar.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com