অবশেষে ২০২০ শেষ হতে চললো। হতাশা, আতঙ্ক আর বিষাদের বছর! বছরটিকে মন রাখা হবে নানা কারণে। তবে সেখানে বেদনার গ্লানিই বেশি। সেইসঙ্গে এই বছরটি প্রিয়জন হারানোর বেদনাও দিয়েছে অনেকবেশি। তারকাদের মৃত্যুরও মিছিল দেখা গেছে এই বছরে।
নানা অসুখ আর স্বাভাবিক মৃত্যুগুলোর সঙ্গে যোগ হয়েছে করোনার প্রকোপও। দেখে নেয়া যাক এই বছরে বলিউড থেকে হারিয়ে যাওয়া তারকাদের নামগুলো-
আরিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়
‘লাভ সেক্স অর ধোকা’ দিয়ে সিনেমা জগতে যাত্রা শুরু আরিয়ার। ‘দ্য ডার্টি পিকচার’ সিনেমায় শাকিলার চরিত্রে অভিনয় করে পেয়েছিলেন দর্শক প্রশংসা। প্রখ্যাত সেতার বাদক পণ্ডিত নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মেয়ে আকস্মিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন ১১ ডিসেম্বর। কলকাতায় নিজ বাসায় সন্ধান মেলে তার মৃত দেহের। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভিনেত্রী পড়ে গিয়ে আঘাতে মারা গেছেন। রাতে খাওয়া দাওয়ার পর মদ্যপান করে বেসামাল হয়ে পড়ে যান ৩৫ বছর বয়সী আরিয়া। আর ফিরতে পারেননি তিনি।
আস্তাদ দেবু
ভারতের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অন্যতম একটি নাম আস্তাদ দেবু। ছিলেন জনপ্রিয় নৃত্যশিল্পী ও কোরিওগ্রাফার। গত মাসেই খবর আসে মারণরোগ ক্যানসার বাসা বাঁধেছে তার শরীরে। অবশেষে ১০ ডিসেম্বর সব লড়াইয়ের ইতি টেনে পাড়ি জমান না ফেরার দেশে। ভারতীয় ধ্রুপদী ও পাশ্চাত্য নৃত্যশৈলীর মিশ্রণের এক অভাবনীয় ক্ষমতার কারণে আজীবন অমর হয়ে রইবেন নৃত্যপ্রেমিদের মনে।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়
সিনেমাপ্রেমীদের কাছে প্রিয় এক নাম। অভিনয়ের পাশাপাশি ছিলেন একজন নামজাদা কবি ও আবৃত্তিকারও। তবে সিনেমার অভিনেতা হিসেবেই যত নাম-খ্যাতি তার। ছয় দশকের দীর্ঘ তার চলচ্চিত্র জীবন। অভিনয় ছিল তার জীবনের সবচেয়ে বড় অংশ। বিশেষ প্রিয়ভাজন ছিলেন সত্যজিৎ রায়ের। বয়স হয়েছিলো ৮৫। কিন্তু মনে প্রাণে ছিলেন তরুণ। করোনার হুমকিও তাকে ঘরবন্দি করতে পারেনি। লডকাউন পরবর্তী সময়ে শেষ করেছেন নিজের বায়োপিক। কিন্তু হঠাৎ করোনায় আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন।
১৯৩৫ সালে কৃষ্ণনগরে জন্ম নেওয়া এই কিংবদন্তী দীর্ঘ ৪০ দিনের লড়াই শেষে কলকাতার বেলেভিউ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যগ করেন ১৫ নভেম্বর।
এসপি বালাসুব্রহ্মণ্যম
দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করে ২৫ সেপ্টেম্বর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন বলিউডের জনপ্রিয় গায়ক এসপি বালাসুব্রহ্মণ্যম। গত ৫ অগস্ট চেন্নাইয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি করা হয় বিখ্যাত গায়ককে। তার করোনাভাইরাস রিপোর্ট পজিটিভ এসেছিল। ১৪ অগস্ট ভোরে আচমকা তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। দ্রুত স্থানান্তরিত করা হযেছিল আইসিইউতে। তারপর থেকেই তিনি ভেন্টিলেশনে ছিলেন।
আশালতা ওয়াবগাঁওকার
হিন্দি ছবির জগতে তিনি পা রেখেছিলেন চিত্র পরিচালক বাসু চট্টোপাধ্যায়ের ‘আপনে পরায়ে’ দিয়ে। দীর্ঘ ক্যরিয়ারে শতাধিক হিন্দি এবং মরাঠি ছবিতে কাজ করেছেন আশা। জীবনের সব দিক দেখে আশা ভারতের এই জনপ্রিয় অভিনেতা অবশেষে হার মেনে নেন করোনার কাছে। সোনি মরাঠি টিভি চ্যানেলের একটি শুটিং সেটে করোনা সংক্রমিত হন তিনি। অবশেষে ২২ সেপ্টেম্বর ৭৯ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যগ করেন তিনি।
সরোজ খান
নৃত্য জগতের অন্যতম পথিকৃৎ সরোজ খান। বলিউড ডান্স কোরিওগ্রাফিতে এনেছিলেন অন্যতম সফল এক ধারা। হিন্দি চলচ্চিত্র জগতে তার ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন মাত্র তিন বছর বয়সে। বলিউডে তিনি সকলের ‘মাস্টার জি’ বলে খ্যাত। মুম্বাইয়ের বান্দ্রার একটি হাসপাতালে বেশ কিছুদিন ভর্তি থাকার পর চলতি বছরের ৩ জুলাই মৃত্যু বরণ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।
সুশান্ত সিং রাজপুত
বলিউড তো বটেই, বলা চলে পুরো ভারতেই চলতি বছরের সবচেয়ে আলোচিত মৃত্যু এটি। একজনের মৃত্যু যে কতজনের জীবনকে প্রভাবিত করতে পারে, একটা ইন্ডাস্ট্রিকে কীভাবে টালমাটাল করে দিতে পারে তারই দৃষ্টান্ত হয়ে রইলো বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু। মাত্র ৩৪ বছর বয়সে নিজের ঘরেই গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন এ অভিনেতা।
পুলিশসহ ভারতের বেশ কিছু তদন্ত সংস্থা এ মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে দাবি করেছে। তবে তার মৃত্যুর কয়েক পরই তদন্তের সূত্রে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য যা বলিউডে দারুণ প্রভাব ফেলেছে। সুশান্তের মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে গ্রেহতার হন তার প্রেমিকা রিয়া। পরে জামিনে মুক্তি পেলেও সুশান্তের এই মৃত্যু ভুগিয়েছে বলিউডের অনেক বড় তারকাদেরও।
চিরঞ্জীবী সারজা
সারাজীবন স্ত্রীকে আগলে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কন্নড় অভিনেতা চিরঞ্জীবী সারজা। তবে গত ৭ জুন মাত্র ৩৫ বছর বয়সেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় অভিনেতার।
বাসু চট্টোপাধ্যায়
সত্তরের ‘অ্যাংরি ইয়ং ম্যান’ ও ‘অ্যাকশন’ সিনেমার অন্যতম মানুষ বাসু চট্টোপাধ্যায়। ছোটি সি বাত, রজনীগন্ধা, বাতো বাতো ম্যায়, এক রুকা হুয়া ফ্যায়সলার মতো ছবি তৈরি করেছেন তিনি। ভারতের বর্ষীয়ান এই পরিচালক বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন বেশ কিছু বছর ধরেই। অবশেষে ৫ জুন ৯৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
ওয়াজিদ খান
বিখ্যাত তবলাবাদক উস্তাদ শরাফৎ আলি খানের পুত্র ছিলে ওয়াজিদ খান। বড় ভাই সাজিদের সঙ্গে একইসাথে বলিউডে মিউজিক পরিচালক হিসেবে যাত্রা শুরু তার। হ্যালো ব্রাদার, পার্টনার, হ্যালো, গড তুসি গ্রেট হো, ওয়ান্টেড, ভির, তুমকো না ভুল পায়েঙ্গে, তেরে নাম, মুজসে শাদি কারোগি, এক থা টাইগার সহ অগণিত জনপ্রিয় সিনেমার মিউজিক নিয়ে কাজ হয়েছে তার। কিডনির অসুখে ভুগে মাত্র ৪২ বছরেই চলে যেতে হল তাকে। ১ জুন মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যগ করেন তিনি।
ঋষি কাপুর
জনপ্রিয় ভারতীয় অভিনেতা, প্রযোজক ও পরিচালক ঋষি কাপুর। কুলি, রাজা, লাইলা মজনু, সারগাম, প্রেম রোগ, হানিমুন, চান্দনি, হেনা, বোল রাধা বোল, দো দোনি চার, হাম কিসিসে কাম নেহি, কাভি কাভি, লাভ আজকালসহ অসংখ্য জনপ্রিয় সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। ২০১৮ সালে ঋষি কাপুরের শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়ে। অবশেষে চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল সেই ক্যান্সারের কাছে হার মেনে ৬৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
ইরফান খান
এই উপমহাদেশের সিনেমাপ্রেমীদের কাছে ইরফান খানকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কিছু নেই। ভারতের সিনেমা জগতের সেরা অভিনেতাদের একজন তিনি। শুধু ভারত নয়, হলিউডে কাজ করা একজন সফল ভারতীয় একজন শিল্পী তিনি। কাজ করেছেন বাংলাদেশের জন্যও। লাইফ অব পাই, স্লামডগ মিলিয়নিয়ার ও জুরাসিক ওয়ার্ল্ডের মত হলিউড ফিল্মে অভিনয়ের মাধ্যমে অভিনেতা হিসেবে নিজের অবস্থান তৈরি করেছিলেন তিনি। তবে ক্যন্সারের কাছে হার মেনে মায়ের মৃত্যুর একদিন পরেই ২৯ এপ্রিল ওপারের উদ্দ্যশ্যে যাত্রা করেন গুণী এই অভিনেতা। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর।
এছাড়াও ২০২০ সালজুড়ে ভারতের অনেক তারকার আত্মহত্যার খবর পাওয়া গেছে। যারা অভিনয়, সংগীতসহ নানা অঙ্গনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
নদী বন্দর / জিকে